ঢাকা ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন বাতিলের এখতিয়ার ইসির হাতে ফিরছে, যুক্ত হচ্ছে ‘না’ ভোট

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভোটাররা প্রথমবারের মতো ‘না ভোট’ প্রয়োগ করেছিল। ওই সময় জারি করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা ৩১(৫)(বিবি)-তে এ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বিধান অনুযায়ী ব্যালট পেপারের সবশেষ প্রার্থীর স্থানে লেখা থাকে ‘ওপরের কাউকে নয়’ এবং ভোটারদের সহজ পরিচিতির জন্য মার্কা রাখা হয় ‘ক্রস’ (ঢ)। তখন সারা দেশে মোট প্রদত্ত ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার ২১০ ভোটের মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৭টি ‘না ভোট’ পড়েছিল।

উল্লেখ্য, ওই নির্বাচনে ৩৮টি দল অংশগ্রহণ করলেও মাত্র ৬টি দল ‘না ভোটের’ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। তার মানে ‘না ভোট’ সপ্তম স্থানে ছিল। এ বিধান নিয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকরা সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই পরবর্তী সময়ে সরকার এ ধারাটি বাদ দেয় এবং বিএনপি এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত করেনি।

নির্বাচন বিশ্লেষক অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলছিলেন, যদি ‘না’ ভোট তখন বাতিল করা না হতো, তাহলে হয়তো এত বিশাল সংখ্যক আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে পারতেন না। নির্বাচনে কিছু মানুষ কেন্দ্রে যেত।

নির্বাচন পরিচালনার প্রধান আইন আরপিওতে সংশোধনের সুপারিশ করা হচ্ছে। সেখানে ৯১এ ধারায় তফশিল ঘোষণার পর যে কোনো সময়ে নির্বাচন বাতিলের এখতিয়ার ইসির হাতে ফিরছে। ‘না’ ভোটের বিধান আবারও আরপিওতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

সতেরো বছরের বাংলাদেশি কোনো নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করবে না নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। কমিশনের সদস্যরা মনে করছেন, ভোটার হওয়ার বয়স কমানোর বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই বিষয়ে সংশোধনের সুপারিশ করার এখতিয়ার সংবিধান সংশোধন কমিশনের। তবে ভোটার তালিকা আইন ও বিধিতে নারী ও পুরুষ ভোটার সংখ্যা পার্থক্য কমিয়ে আনাসহ কয়েকটি সংশোধনের সুপারিশ করছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এসব সুপারিশসহ প্রতিবেদন আজ বৃহস্পতিবার বা কাল শুক্রবার ই-মেইলে সরকারের কাছে জমা দেবে এই কমিশন। প্রতিবেদন জমার সময় ৯০ দিন শুক্রবার শেষ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার কাজ করছি। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যে জমা দিতে পারব। ই-মেইলের মাধ্যমে জমা দেব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে কী কী সুপারিশ করা হবে, সেই বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে সরকার চাইলে তা প্রকাশ করতে পারে। আমি আশা করব, সরকার প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৭ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি বলেন, আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ হওয়া উচিত। নির্বাচন সংস্কার কমিশন কী সুপারিশ করবে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশ করা বয়স পছন্দ করে, ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য আমি তা মেনে নেব।’ প্রধান উপদেষ্টার ওই মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। জামায়াতে ইসলামী ১৭ বছর বয়স নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছে। অপরদিকে এই প্রস্তাবের বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্র জানায়, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা, নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার ও ক্ষমতা বাড়ানো, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগে প্রাধান্য দেওয়া, সীমানা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ, ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা, অসত্য তথ্য দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ সদস্য বাতিলসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে সুপারিশ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু সুপারিশ এখনই বাস্তবায়ন এবং কিছু সুপারিশ দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

এই প্রতিবেদনে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ সংশোধনের সুপারিশ থাকবে। তবে ১৭ বছর বয়সিদের ভোটার করার বিষয়ে কোনো সুপারিশ করবে না এই কমিশন। কমিশনের সদস্যরা মনে করেন, ১৭ বছর বয়সিদের ভোটার করতে হলে সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রয়োজন হবে। ওই সংশোধনের সুপারিশ করার এখতিয়ার সংবিধান সংশোধন কমিশনের। একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করলে এবং রাজনৈতিক ঐক্য হলে তখন এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধনের সুপারিশ করতে পারবে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহিতারও আওতায় আনার সুপারিশ করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইন ও বিধিমালায় কোথাও সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধ করার বিধান নেই। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নেতৃত্বে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির সুপারিশ করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে এ বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে ওইসব দেশের মডেল অনুসরণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের এখতিয়ার বাড়ানোর সুপারিশ করা হচ্ছে। অনিয়ম হলে ভোটকেন্দ্রের গোপনকক্ষেও সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া এবং ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচারের বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি বা সম্মতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা চাইলে সার্বক্ষণিক কেন্দ্রে অবস্থান করতে পারবেন। বর্তমানে সার্বক্ষণিক ভোটকেন্দ্রে অবস্থানের বিধান নেই। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনের কয়েকটি ধারায় সংশোধনীর সুপারিশ করা হচ্ছে। সেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণে কিছু বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে প্রভাবশালীদের ইচ্ছেমতো সীমানা নির্ধারণের পথ বন্ধ হচ্ছে। এক আসনের সঙ্গে আরেক আসনের জনসংখ্যার ব্যবধান কমিয়ে আনার কথাও বলা হচ্ছে।

নির্বাচন পরিচালনার প্রধান আইন আরপিওতে সংশোধনের সুপারিশ করা হচ্ছে। সেখানে ৯১এ ধারায় তফশিল ঘোষণার পর যে কোনো সময়ে নির্বাচন বাতিলের এখতিয়ার ইসির হাতে ফিরছে। ‘না’ ভোটের বিধান আবারও আরপিওতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ‘না’ ভোটের বিধান বাতিল করেছিল। এ সুযোগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের সুযোগ তৈরি হয়। এ বিধান ফিরলে ওই সুযোগ বন্ধ হবে। নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনি প্রচারে রঙিন পোস্টার ব্যবহারের বিধান বন্ধের সুপারিশ করা হচ্ছে। বিগত কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রঙিন পোস্টার ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে বিধিমালা সংশোধন করেছিল।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

নির্বাচন বাতিলের এখতিয়ার ইসির হাতে ফিরছে, যুক্ত হচ্ছে ‘না’ ভোট

আপডেট সময় ১২:৩৯:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভোটাররা প্রথমবারের মতো ‘না ভোট’ প্রয়োগ করেছিল। ওই সময় জারি করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা ৩১(৫)(বিবি)-তে এ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বিধান অনুযায়ী ব্যালট পেপারের সবশেষ প্রার্থীর স্থানে লেখা থাকে ‘ওপরের কাউকে নয়’ এবং ভোটারদের সহজ পরিচিতির জন্য মার্কা রাখা হয় ‘ক্রস’ (ঢ)। তখন সারা দেশে মোট প্রদত্ত ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার ২১০ ভোটের মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৭টি ‘না ভোট’ পড়েছিল।

উল্লেখ্য, ওই নির্বাচনে ৩৮টি দল অংশগ্রহণ করলেও মাত্র ৬টি দল ‘না ভোটের’ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। তার মানে ‘না ভোট’ সপ্তম স্থানে ছিল। এ বিধান নিয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকরা সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই পরবর্তী সময়ে সরকার এ ধারাটি বাদ দেয় এবং বিএনপি এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত করেনি।

নির্বাচন বিশ্লেষক অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলছিলেন, যদি ‘না’ ভোট তখন বাতিল করা না হতো, তাহলে হয়তো এত বিশাল সংখ্যক আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে পারতেন না। নির্বাচনে কিছু মানুষ কেন্দ্রে যেত।

নির্বাচন পরিচালনার প্রধান আইন আরপিওতে সংশোধনের সুপারিশ করা হচ্ছে। সেখানে ৯১এ ধারায় তফশিল ঘোষণার পর যে কোনো সময়ে নির্বাচন বাতিলের এখতিয়ার ইসির হাতে ফিরছে। ‘না’ ভোটের বিধান আবারও আরপিওতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

সতেরো বছরের বাংলাদেশি কোনো নাগরিককে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করবে না নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। কমিশনের সদস্যরা মনে করছেন, ভোটার হওয়ার বয়স কমানোর বিষয়টি সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই বিষয়ে সংশোধনের সুপারিশ করার এখতিয়ার সংবিধান সংশোধন কমিশনের। তবে ভোটার তালিকা আইন ও বিধিতে নারী ও পুরুষ ভোটার সংখ্যা পার্থক্য কমিয়ে আনাসহ কয়েকটি সংশোধনের সুপারিশ করছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। এসব সুপারিশসহ প্রতিবেদন আজ বৃহস্পতিবার বা কাল শুক্রবার ই-মেইলে সরকারের কাছে জমা দেবে এই কমিশন। প্রতিবেদন জমার সময় ৯০ দিন শুক্রবার শেষ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, আমরা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার কাজ করছি। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যে জমা দিতে পারব। ই-মেইলের মাধ্যমে জমা দেব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে কী কী সুপারিশ করা হবে, সেই বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে সরকার চাইলে তা প্রকাশ করতে পারে। আমি আশা করব, সরকার প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত ২৭ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি বলেন, আমি মনে করি ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণ হওয়া উচিত। নির্বাচন সংস্কার কমিশন কী সুপারিশ করবে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষ যদি কমিশনের সুপারিশ করা বয়স পছন্দ করে, ঐকমত্যে পৌঁছার জন্য আমি তা মেনে নেব।’ প্রধান উপদেষ্টার ওই মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। জামায়াতে ইসলামী ১৭ বছর বয়স নির্ধারণের পক্ষে মত দিয়েছে। অপরদিকে এই প্রস্তাবের বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সূত্র জানায়, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা, নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার ও ক্ষমতা বাড়ানো, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগে প্রাধান্য দেওয়া, সীমানা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ, ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ ব্যবস্থা, অসত্য তথ্য দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদ সদস্য বাতিলসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে সুপারিশ করা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু সুপারিশ এখনই বাস্তবায়ন এবং কিছু সুপারিশ দীর্ঘ মেয়াদে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

এই প্রতিবেদনে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ সংশোধনের সুপারিশ থাকবে। তবে ১৭ বছর বয়সিদের ভোটার করার বিষয়ে কোনো সুপারিশ করবে না এই কমিশন। কমিশনের সদস্যরা মনে করেন, ১৭ বছর বয়সিদের ভোটার করতে হলে সংবিধানের ১২২ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রয়োজন হবে। ওই সংশোধনের সুপারিশ করার এখতিয়ার সংবিধান সংশোধন কমিশনের। একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রস্তাব করলে এবং রাজনৈতিক ঐক্য হলে তখন এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আইন সংশোধনের সুপারিশ করতে পারবে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রতিবেদনে নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহিতারও আওতায় আনার সুপারিশ করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইন ও বিধিমালায় কোথাও সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানের দায়বদ্ধ করার বিধান নেই। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নেতৃত্বে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটির সুপারিশ করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশে এ বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে ওইসব দেশের মডেল অনুসরণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণে সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের এখতিয়ার বাড়ানোর সুপারিশ করা হচ্ছে। অনিয়ম হলে ভোটকেন্দ্রের গোপনকক্ষেও সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া এবং ভোটকক্ষ থেকে সরাসরি সম্প্রচারের বিধান যুক্তের প্রস্তাব করা হচ্ছে। ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি বা সম্মতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা চাইলে সার্বক্ষণিক কেন্দ্রে অবস্থান করতে পারবেন। বর্তমানে সার্বক্ষণিক ভোটকেন্দ্রে অবস্থানের বিধান নেই। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনের কয়েকটি ধারায় সংশোধনীর সুপারিশ করা হচ্ছে। সেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণে কিছু বিধান যুক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে প্রভাবশালীদের ইচ্ছেমতো সীমানা নির্ধারণের পথ বন্ধ হচ্ছে। এক আসনের সঙ্গে আরেক আসনের জনসংখ্যার ব্যবধান কমিয়ে আনার কথাও বলা হচ্ছে।

নির্বাচন পরিচালনার প্রধান আইন আরপিওতে সংশোধনের সুপারিশ করা হচ্ছে। সেখানে ৯১এ ধারায় তফশিল ঘোষণার পর যে কোনো সময়ে নির্বাচন বাতিলের এখতিয়ার ইসির হাতে ফিরছে। ‘না’ ভোটের বিধান আবারও আরপিওতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ‘না’ ভোটের বিধান বাতিল করেছিল। এ সুযোগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতের সুযোগ তৈরি হয়। এ বিধান ফিরলে ওই সুযোগ বন্ধ হবে। নির্বাচনে মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনি প্রচারে রঙিন পোস্টার ব্যবহারের বিধান বন্ধের সুপারিশ করা হচ্ছে। বিগত কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রঙিন পোস্টার ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে বিধিমালা সংশোধন করেছিল।