প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নিলেও দ্বীপ জেলা ভোলা’র তেতুলিয়া নদীতে জেল জরিমানার পরও থেমে নেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। তেতুলিয়ায় কোনো বালু মহাল না থাকলেও অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করার কারনে বছরের পর বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে বেড়েছে নদী ভাঙ্গন। বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর জীব-বৈচিত্র। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য।আগে দিনে রাতে সমান তালে বালু উত্তোলন করা হলেও কোস্টগার্ডের নিয়মিত অভিযান ও উপজেলা প্রশাসন কৃতক জেল-জরিমানা,বলগেট-ড্রেজার জব্দ করার কারনে দিনের বেলা বন্ধ থাকলেও এখন শুধু গভীর রাতে চলছে অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের বালু উত্তোলন কার্যক্রম। .দৈনিক আমাদের মাতৃভূমির এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমনই তথ্য
এছাড়াও শুক্রবার ৩ জানুয়ারি দিনব্যাপী জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার তেতুলিয়া নদীর হাসের চর,চরলতিফ,লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া খালগোড়া চর সহ কয়েকটি ছোটো বড় চর এলাকার বাসিন্দা ও নদীতে নিয়মিত মাছধরা জেলেদের সাথে কথা বললে তারা জানায় প্রতিরাতে ১০–১২টি ড্রেজার দিয়ে লাখ লাখ ঘন ফুট অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
মান্নান সিপাই হাসের চরের বাসিন্দা, তিনি জানান বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন তেতুলিয়া নদির হাসের চর,চর লতিফ সহ কয়েকটি চরের কাফ (চরের তীরবর্তী অঞ্চল) থেকে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা।
কোস্টগার্ডের এসে আটক করে। আবার অনেক সময় কোস্টগার্ডে এবং এসিল্যান্ড স্যার আসার খবর পেয়ে তারা আগেই পেয়ে পালিয়ে যায়।তিনি আরো বলেন এখন দিনের বেলা বালু কাটে (উত্তোলন) না, রাতে বালু কাটে।
তেতুলিয়া নদীতে নিয়মিত মাছ শিকার করেন মো. রাসেল নামে এক জেলে জানান রাতে যখন মাছ ধরতে নদীতে যাই প্রায় রাতেই রাত ২ টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ৪-৬ টি ড্রেজার এক যোগে বালু উত্তলোন করে বিকট শব্দের নদীতে থাকা দায়, ঝালে ঠিকমত মাছও পাইনা।
লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের গজারিয়া খালগোড়া চর এলাকার বাসিন্দা ও চরে তরমুজ চাষি মো.হান্নান জানান তেঁতুলিয়া নদীর চর ব্যারেট, খালগোড়া চর সহ বদরপুর ইউনিয়ন সংলগ্ন কয়েকটি চরে আগে দিনের বেলা ড্রেজার মেশিন দিয়ে নিয়মিত বালু উত্তোলন করত বালু ব্যাবসায়ীরা কয়েক দিন আগে লালমোহননের ইউএনও স্যার দুইজনরে চার লাখটাকা জরিমানা করছে, কোস্টগার্ড কেও নদীতে টহল দিতে দেখেছি,অহন আর আগের মত দিনে বালু উঠায় না, রাতে ৫-৬ টা ড্রেজার দিয়ে বালু উঠাইতে দেখছি। তবে একেক দিন একেক রকম কোনো দিন ২ টা আমার কোন দিন ৩ টা বালু উঠায়। অবৈধ ভাবে বালু উঠানোয় আমাগো নানা রকম অসুবিধা হয়।
এদিকে আরো একটি সুত্রে জানা যায় তেঁতুলিয়া নদীরতীরবর্তী চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন, নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদী, নিমদী, কচুয়া ও ধুলিয়া ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে,যার ফলে এসব এলাকায় বালু মহল ইজারা বন্ধ রয়েছে। শুধু মাত্র বাউফল -দশমিনা সিমানায় বুড়াগৌরঙ্গ নদীর ডুবাচরে ৪ একর এলাকায় জুড়ে বালুমহল ইজারা দেয়া হয়েছে। এর বাহিরে তেঁতুলিয়া নদীর কোনো পয়েন্টে বালুমহল নেই। তবে তেতুলিয়া নদীর ভোলা জেলার অংশে বালু মহল না থাকলেও আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে।
পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলা এবং দশমিনা এলাকা থেকেও বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন লালমোহন ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার তেতুলিয়া নদীর সিমানায় এসে বাণিজ্যিক কাজে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা।
জেলার সিনিয়র সাংবাদিক ও ভোলা প্রেস ক্লাব সভাপতি এডভোকেট নজরুল হক অনু বলেন তেতুলিয়া নদীতে কোনো বালু মহাল নেই, সেখানে দীর্ঘদিন যাবত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। কোনোভাবেই থামছেনা তারা। আইনে আছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন দন্ডনীয় অপরাধ।জেল-জরিমানা উভয়ের বিধান থাকলেও অবৈধ ভাবে বালু উউত্তোলন করার কারনে বছরের পর বছর ধরে ভাঙছে তেঁতুলিয়া নদীর দুইপাড়,বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর জীব-বৈচিত্র। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। তিনি আরো বলেন কোস্টগার্ড ও উপজেলা প্রশাসনের কঠোর ব্যাবস্থা নেয়ার মধ্যেও দিনের বেলা না করে মধ্য রাতে তেতুলিয়া নদীতে তারা লাখ লাখ ঘন ফুট বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করছে,নৌ পুলিশ,কোস্টগার্ড স্থানীয় প্রশাসনকে আরো কঠোর হওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোন অধীনস্থ বিসিজি ভোলা’র দায়িত্বশীল সূত্র এ প্রতিবেদককে জানায় তেতুলিয়া নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে গত ১ মাসে কোস্টগার্ড সফল ২টি অভিযান পরিচালনা করেছে এবিষয় কঠোর অবস্থানে রয়েছে কোস্টগার্ডে।
ভোলা’র জেলা প্রশাসক মো.আজাদ জাহান দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে জানান তেতুলিয়া নদীতে কোনো বালু মহাল নেই,অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদেরকে কোনো ছাড় দেয়া হবেনা। তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থান রয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের লালমোহনও বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বেশ কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানা এবং বলগেট জব্দ করা হয়েছে। শীঘ্রই অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্বে আরো কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।