ঢাকা ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যে পদক্ষেপের কথা জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম কুমিল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের ৭ সদস্য গ্রেফতার কোনো দল-গোষ্ঠী-ব্যক্তিকে সহযোগিতা করতে মাঠে নামিনি: সিইসি আনিসুল হক আরেক মামলায় গ্রেফতার চান্দিনায় মারুতির পেছনে বাসের ধাক্কায় শিশুর মৃত্যু,অন্তঃসত্ত্বা মা সহ আহত ৩ তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে যা জানালেন মির্জা ফখরুল আ.লীগের সাবেক এমপি শফিউল রিমান্ডে চট্টগ্রামের মাদক বিরোধী অভিযানে ২৯৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারসহ মাদক কারবারি মোঃ মুরাদ হোসেন‘ গ্রেফতার মাদক পরিবহনে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার জব্দ বিমানবন্দরে নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে যাত্রীর হাতাহাতি, কী ঘটেছিল? পাঁচবিবিতে আগামীর ভাবনা শীর্ষক কর্মশালা

উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার রেকর্ডের বছরে শঙ্কিত বিশ্ব

পূর্ব এশিয়ার পরমাণু শক্তিসমৃদ্ধ দেশ উত্তর কোরিয়া এ বছর ৯০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

২০২০ সালে চারটি ও ২০২১ সালে আটটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল দেশটি। কিন্তু এই ২০২২ সালে একদিনেই একসঙ্গে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে। আর উ.কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার রেকর্ডের বছরটি বিশ্বকে করে তুলেছে শঙ্কিত। কারণ ধারণা করা হচ্ছে— সরাসরি পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কিম জং উনের দেশ।

এছাড়া উত্তর কোরিয়া রেকর্ড পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর কারণে এশিয়ায় অস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মতো দেশগুলো সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কথা দিয়েছে যদি দ.কোরিয়া-জাপান হামলার শিকার হয় তাহলে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সহায়তা করবে। যার মধ্যে থাকবে পরমাণু অস্ত্রও।

১৯৮৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত উ. কোরিয়া ২৭০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- এই ২৭০টি পরীক্ষার তিনভাগেরও বেশি পরীক্ষা চালানো হয়েছে ২০২২ সালে।

আর সব পরীক্ষার তিনভাগেরও বেশি চালানো হয়েছে ২০১১ সালের পর। সে বছর থেকে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন কিম। এর মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কতটা তৎপর তিনি। অবশ্য কিম চলতি বছরের এপ্রিলে সরাসরিই ঘোষণা দিয়েছেলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে পরমাণু বাহিনীকে শক্তিশালী বাহিনীতে রূপান্তর করবেন তিনি।

সংবাদমাধ্যম সিএনএনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিমের এ আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে ২০২২ সালে। এ বছর মোট ৩৬ দিন ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উ. কোরিয়া।

তাদের চালানো পরীক্ষার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ক্রুস ক্ষেপণাস্ত্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যেই থাকে এবং বিমানের মতো এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অন্যদিকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আগে মহাকাশে পৌঁছায় এরপর আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে। এসব ছাড়াও পিয়ংইয়ং সারফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে।

পরমাণু বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত পান্ডা বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়া বলতে গেলে বিশাল আকৃতির একটি পরমাণু বাহিনীতে পরিণত হচ্ছে।’ তিনি সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘উ. কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্রদের মধ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ বা কূটনৈতিক আলোচনার জবাবেও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘তারা বার্তা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া যাই করুক তাদের জবাব দেওয়ার ক্ষমতা উত্তর কোরিয়ার আছে।’

পিয়ংইংয় যেসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তার মধ্যে ছিল হাসং-১২। এটি ৪ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জাপানের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র হলো হাসং-১৪। এটির ১০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা আছে।

তবে সবার নজর কেড়েছে সেটি হলো হাসং-১৭ ক্ষেপণাস্ত্র। এটি এখন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার তৈরি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এটির যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর ক্ষমতা আছে। তবে পরমাণু অস্ত্র বহন করে এটি কতটা সফল হতে পারে এ নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। মার্চে প্রথমবার এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা দাবি করেছিল দেশটি। এরপর নভেম্বরে আবারও এর পরীক্ষা চালানো হয়। এরপর কিম জং উন হুমকি দেন, ‘যেসব শত্রু কোরিয়া উপদ্বীপ এবং এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায় তাদের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।’

 পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষার শঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা যে ভয় পাচ্ছে সেটি হলো— উত্তর কোরিয়া নতুন করে সরাসরি পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে। ২০১৭ সালে সর্বশেষবার এ ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছিল দেশটি। স্যাটেলাইটে প্রাপ্ত ছবি থেকে দেখা গেছে এখন সেই প্রস্তুতিই চলছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে যে পদক্ষেপের কথা জানালেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার রেকর্ডের বছরে শঙ্কিত বিশ্ব

আপডেট সময় ০৩:০২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২

পূর্ব এশিয়ার পরমাণু শক্তিসমৃদ্ধ দেশ উত্তর কোরিয়া এ বছর ৯০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। যা এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

২০২০ সালে চারটি ও ২০২১ সালে আটটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল দেশটি। কিন্তু এই ২০২২ সালে একদিনেই একসঙ্গে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে। আর উ.কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার রেকর্ডের বছরটি বিশ্বকে করে তুলেছে শঙ্কিত। কারণ ধারণা করা হচ্ছে— সরাসরি পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে কিম জং উনের দেশ।

এছাড়া উত্তর কোরিয়া রেকর্ড পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর কারণে এশিয়ায় অস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মতো দেশগুলো সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার ঘোষণা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কথা দিয়েছে যদি দ.কোরিয়া-জাপান হামলার শিকার হয় তাহলে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে সহায়তা করবে। যার মধ্যে থাকবে পরমাণু অস্ত্রও।

১৯৮৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত উ. কোরিয়া ২৭০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী- এই ২৭০টি পরীক্ষার তিনভাগেরও বেশি পরীক্ষা চালানো হয়েছে ২০২২ সালে।

আর সব পরীক্ষার তিনভাগেরও বেশি চালানো হয়েছে ২০১১ সালের পর। সে বছর থেকে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন কিম। এর মাধ্যমেই বোঝা যাচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কতটা তৎপর তিনি। অবশ্য কিম চলতি বছরের এপ্রিলে সরাসরিই ঘোষণা দিয়েছেলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে পরমাণু বাহিনীকে শক্তিশালী বাহিনীতে রূপান্তর করবেন তিনি।

সংবাদমাধ্যম সিএনএনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিমের এ আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেছে ২০২২ সালে। এ বছর মোট ৩৬ দিন ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উ. কোরিয়া।

তাদের চালানো পরীক্ষার মধ্যে বেশিরভাগই ছিল ক্রুজ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ক্রুস ক্ষেপণাস্ত্র পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যেই থাকে এবং বিমানের মতো এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অন্যদিকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আগে মহাকাশে পৌঁছায় এরপর আবার পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে। এসব ছাড়াও পিয়ংইয়ং সারফেস টু এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে।

পরমাণু বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত পান্ডা বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়া বলতে গেলে বিশাল আকৃতির একটি পরমাণু বাহিনীতে পরিণত হচ্ছে।’ তিনি সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘উ. কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্রদের মধ্যে সামরিক প্রশিক্ষণ বা কূটনৈতিক আলোচনার জবাবেও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘তারা বার্তা দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া যাই করুক তাদের জবাব দেওয়ার ক্ষমতা উত্তর কোরিয়ার আছে।’

পিয়ংইংয় যেসব ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে তার মধ্যে ছিল হাসং-১২। এটি ৪ হাজার ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে জাপানের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়েছিল। আরেকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র হলো হাসং-১৪। এটির ১০ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা আছে।

তবে সবার নজর কেড়েছে সেটি হলো হাসং-১৭ ক্ষেপণাস্ত্র। এটি এখন পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার তৈরি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এটির যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর ক্ষমতা আছে। তবে পরমাণু অস্ত্র বহন করে এটি কতটা সফল হতে পারে এ নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। মার্চে প্রথমবার এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা দাবি করেছিল দেশটি। এরপর নভেম্বরে আবারও এর পরীক্ষা চালানো হয়। এরপর কিম জং উন হুমকি দেন, ‘যেসব শত্রু কোরিয়া উপদ্বীপ এবং এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চায় তাদের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।’

 পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষার শঙ্কা

যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা যে ভয় পাচ্ছে সেটি হলো— উত্তর কোরিয়া নতুন করে সরাসরি পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে। ২০১৭ সালে সর্বশেষবার এ ধরনের পরীক্ষা চালিয়েছিল দেশটি। স্যাটেলাইটে প্রাপ্ত ছবি থেকে দেখা গেছে এখন সেই প্রস্তুতিই চলছে।