ঢাকা ০৮:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
ওয়াসার তাকসিমসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দুদকের বাংলাদেশকে সস্তায় গরুর মাংস দিতে চায় ব্রাজিল খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি কুমিল্লা মুরাদনগর বাঙ্গরা বাজার থানা ১৫ কেজি গাঁজা সহ দুইজন আটক” ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ নিপাত যাক: সর্বহারা পার্টি গাড়ি চালিয়ে মাকে নিয়ে গেলেন তারেক রহমান ঢাকা দক্ষিণ জাতীয়তাবাদী যুবদলের পক্ষ থেকে ২০২৫ কর্মীসভা অনুষ্ঠিত বোনদের জমি না দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন কুমিল্লা থেকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন সূচনা শুরু হয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে – হাসনাত আবুল্লাহ বিআরটিএ ড্রাইভিং ইন্টারভিউয়ে নতুন গাড়ি না পাওয়া: লক্কর ঝক্কর গাড়ির কারণে বিপাকে সাধারণ পরীক্ষার্থীরা

গণপূর্তের ৪ প্রকৌশলীর সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি কেউ

৫ আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও পতিত সরকারের দোসর ও দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত গণপূর্ত অধিদফতর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার মদদপুষ্ট ৪ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট মুক্ত হয়নি গণপূর্ত অধিদপ্তর । এই সিন্ডিকেটটি এতটাই বেপরোয়া যে কোন নিয়ম কানুনকে তারা তোয়াক্কা করে না। গোপালগঞ্জ অধ্যাসিত নামিদামি কিছু ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে এরা পূর্বে ও পরবর্তীতে ফায়দা হাসিল করে চলছে । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি সরকারকে নিজ দেশের জনগণের সুবিধার্তে অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়।

এক্ষেত্রে অধিকাংশ উন্নয়নকাজে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে থাকে সরকার। সরকারের গৃহীত ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য অন্যতম একটি কর্মসূচি হলো টেকসই উন্নয়ন। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে অবকাঠামো ও নির্মাণ খাত। আর এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা হচ্ছেন সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার।

নিয়ম অনুযায়ী ও প্রশাসনিক কাঠামো অনুযায়ী তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। তাই এখন যা ইচ্ছা তাই তিনি করতে পারেন। তাকে যে কোন সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের ক্ষেত্রে রয়েছে তার একান্ত অনুগত কয়েকজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং কথিত বিএনপি-জামাতের অনুসারী কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীর সমন্বয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

কাগজে কলমে ও বাহ্যিক দৃষ্টিতে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত প্রধান প্রকৌশলী মো: শামীম আখতার। সরাসরি কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে তার সম্পৃক্ততা চোখে না পড়লেও একটি বিশেষ সুবিধাবাদী কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।

সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের শেষ মেয়াদে এসে এই সিন্ডিকেট এতটাই বেপরোয়া যে কোন নিয়ম কানুনকে তারা তোয়াক্কা নারে চালিয়েছে বেশুমার দুর্নীতি । সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও সচিব পদমর্যাদার নামিদামি কিছু ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে এরা ফায়দা হাসিল করছে।

সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার সমর্থিত অবৈধ সুবিধাবাদী চার কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে আজ সাজানো হয়েছে আজকের প্রতিবেদন।

সম্পদের পাহাড়ে প্রকৌশলী আলমগীর খান : গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আলমগীর খানের বিরুদ্ধে গণপূর্ত ডিভিশন-৬ এ নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে।
আলমগীর খানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে ই/এম শাখার গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে তাকে পদায়ন করা হয়েছে। অনিয়ম, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি ঢাকা শহর এবং এর আশেপাশের এলাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আলমগীর খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তদন্ত করলেই উক্ত সকল অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। কথিত রয়েছে যে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের অন্যতম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রোকন উদ্দিনের মত আলমগির খানও যেকোনো সময়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন।

প্রকৌশলী কাম ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ : প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ দুর্নীতিতে মহা চ্যাম্পিয়ন। শ্যালককে দিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা করান তিনি। তার ওস্তাদ প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ এখনও রয়েছেন বহাল তবিয়তে। শ্যালকের মাধ্যমে তিনি সরাসরি ঠিকাদারিতে ব্যবসা করে হয়েছেন কোটিপতি। শুধু হাতেগোনা দু’চারজন প্রকৌশলী নন এরকম আরও শত শত রাঘব বোয়াল রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরে যারা দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি ব্যবসায় নামে বেনামে সম্পৃক্ত।

ক্ষমতার শীর্ষে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আতিকুল ইসলাম :
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার তার ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিন যাবৎ মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও সাইট সিলেকশনের অজুহাত দেখিয়ে শামীম আখতারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত গনপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ক্যাডেট কলেজের ছাত্র আতিকুল ইসলামকে একটি কমিটি বানিয়ে কাজটি হস্তান্তর করেন। উক্ত কাজ মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগ থেকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-১ এ হস্তান্তরের মূল উদ্দেশ্য কয়েক কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য হাতিয়ে নেয়া। এজন্যই মূলত কমিটি করা হয়েছিল। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর ভবন তৈরির কাজে সহযোগিতা করছেন আতিকুল ইসলাম। গণপূর্ত অধিদপ্তরের রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বিভিন্ন ঠিকাদারের নিকট হতে অধিক পরিমাণ উৎকোচ গ্রহণ করে অনুমোদিত বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা হতে ৩ বছরে তিনি প্রায় ৬০ কোটি টাকার অতিরিক্ত দরপত্র আহ্বান করে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-১ এ বদলী হয়ে চলে যান। এই অতিরিক্ত ৬০ কোটি টাকার দরপত্র আহবান করে সুকৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এছাড়াও গণপূর্ত অধিদপ্তরের বদলীর বিষয়ে ভেলকিবাজি দেখিয়ে পুরো অধিদপ্তরে বাজিমাত করেছেন ক্ষমতাধর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আতিকুল ইসলাম। কারণ স্বরুপ বলা যায় সম্প্রতি প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার সাক্ষরিত এক অফিস আদেশ অনুযায়ী জানা গেছে, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ৫ ডিভিশনে বদলি–সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ জারি হয়েছে। সেখানেও পাঁচ প্রভাবশালী প্রকৌশলীই চেয়ার পেয়েছেন, যাঁরা দীর্ঘ সময় ঢাকার বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত ছিলেন।গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের স্বাক্ষর করা পৃথক দুটি অফিস আদেশে দেখা যায়, শেরবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ–৩–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদ রানাকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ–৪; ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ–১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুল ইসলামকে শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ–৩, ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ–৪–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নুকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ–১ এবং পরবর্তীতে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলে ও তিনি পুনরায় ঢাকার ফিরে আসতে জোর তদবির চালাচ্ছেন। এছাড়াও মহাখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমান উল্লাহ সরকারকে শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ–২ এবং পরবর্তীতে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। এবং শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ–২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসানকে মহাখালী গণপূর্ত বিভাগে বদলি করা হয়েছে। তবে আতিকুল ইসলাম যথারীতি শেরে-বাংল নগর গনপূর্ত বিভাগ -৩ এ কর্মরত থেকে তার সকল প্রকারের অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।

মিস্টার ৫০% তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক : গণপূর্তের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক অসংখ্য দুর্নীতি ও অপরাধ করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে। গণপূর্ত অধিদপ্তরে মিস্টার ফিফটি পার্সেন্ট হিসাবে অনেকের কাছেই বহুল পরিচিত তিনি। একাধিক সূত্র এবং ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের একটি বড় অংশ তার বিরুদ্ধে থাকা সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমান বিভিন্ন গনমাধ্যমকে হস্তান্তর করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের আস্থাভাজন হওয়ায় অধিদপ্তর জুড়ে কাউকে তিনি পরোয়া করেন না। সাবেক কর্মস্থল সাভার থাকাকালীন সময় থেকে ভুয়া বিল ভাউচার করে সরকারি টাকা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাৎ এর মাধ্যমে অর্জিত অর্থে বিলাসী জীবন যাপন করে আসছেন। এসব বিষয় ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কমিশন দিয়ে ম্যানেজ করতেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। বর্তমানে তার সমস্ত অনিয়ম দুর্নীতির সহযোগী হিসাবে ৩ নং ডিভিশনের প্রকৌশলী কায়সার ইবনে সাইফকে কাজে লাগান। যিনি বর্তমানে তিনি তার সমস্ত কুকর্মের ছায়াসঙ্গী। পুরো অধিদপ্তর জুড়ে এমন অসংখ্য দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী রয়েছেন যাদের রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এরা সবাই গনপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের অত্যন্ত আস্থাভাজন।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ওয়াসার তাকসিমসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দুদকের

গণপূর্তের ৪ প্রকৌশলীর সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি কেউ

আপডেট সময় ০১:৫১:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৮ জানুয়ারী ২০২৫

৫ আগস্টের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন সংগ্রামের ফলে সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও পতিত সরকারের দোসর ও দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত গণপূর্ত অধিদফতর আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার মদদপুষ্ট ৪ প্রকৌশলীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট মুক্ত হয়নি গণপূর্ত অধিদপ্তর । এই সিন্ডিকেটটি এতটাই বেপরোয়া যে কোন নিয়ম কানুনকে তারা তোয়াক্কা করে না। গোপালগঞ্জ অধ্যাসিত নামিদামি কিছু ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে এরা পূর্বে ও পরবর্তীতে ফায়দা হাসিল করে চলছে । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি সরকারকে নিজ দেশের জনগণের সুবিধার্তে অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হয়।

এক্ষেত্রে অধিকাংশ উন্নয়নকাজে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করে থাকে সরকার। সরকারের গৃহীত ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য অন্যতম একটি কর্মসূচি হলো টেকসই উন্নয়ন। টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে অবকাঠামো ও নির্মাণ খাত। আর এই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে গণপূর্ত অধিদপ্তর।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা হচ্ছেন সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার।

নিয়ম অনুযায়ী ও প্রশাসনিক কাঠামো অনুযায়ী তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। তাই এখন যা ইচ্ছা তাই তিনি করতে পারেন। তাকে যে কোন সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের ক্ষেত্রে রয়েছে তার একান্ত অনুগত কয়েকজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং কথিত বিএনপি-জামাতের অনুসারী কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীর সমন্বয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট।

কাগজে কলমে ও বাহ্যিক দৃষ্টিতে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত প্রধান প্রকৌশলী মো: শামীম আখতার। সরাসরি কোন অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে তার সম্পৃক্ততা চোখে না পড়লেও একটি বিশেষ সুবিধাবাদী কর্মকর্তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।

সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের শেষ মেয়াদে এসে এই সিন্ডিকেট এতটাই বেপরোয়া যে কোন নিয়ম কানুনকে তারা তোয়াক্কা নারে চালিয়েছে বেশুমার দুর্নীতি । সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও সচিব পদমর্যাদার নামিদামি কিছু ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করে এরা ফায়দা হাসিল করছে।

সাবেক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার সমর্থিত অবৈধ সুবিধাবাদী চার কর্মকর্তার অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে আজ সাজানো হয়েছে আজকের প্রতিবেদন।

সম্পদের পাহাড়ে প্রকৌশলী আলমগীর খান : গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঢাকা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আলমগীর খানের বিরুদ্ধে গণপূর্ত ডিভিশন-৬ এ নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে।
আলমগীর খানের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে ই/এম শাখার গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে তাকে পদায়ন করা হয়েছে। অনিয়ম, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে তিনি ঢাকা শহর এবং এর আশেপাশের এলাকায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আলমগীর খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তদন্ত করলেই উক্ত সকল অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে। কথিত রয়েছে যে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের অন্যতম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা রোকন উদ্দিনের মত আলমগির খানও যেকোনো সময়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন।

প্রকৌশলী কাম ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ : প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ দুর্নীতিতে মহা চ্যাম্পিয়ন। শ্যালককে দিয়ে ঠিকাদারি ব্যবসা করান তিনি। তার ওস্তাদ প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ এখনও রয়েছেন বহাল তবিয়তে। শ্যালকের মাধ্যমে তিনি সরাসরি ঠিকাদারিতে ব্যবসা করে হয়েছেন কোটিপতি। শুধু হাতেগোনা দু’চারজন প্রকৌশলী নন এরকম আরও শত শত রাঘব বোয়াল রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তরে যারা দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি ব্যবসায় নামে বেনামে সম্পৃক্ত।

ক্ষমতার শীর্ষে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আতিকুল ইসলাম :
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার তার ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করেছেন ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এর বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মানের ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিন যাবৎ মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগে গণপূর্ত অধিদপ্তরের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও সাইট সিলেকশনের অজুহাত দেখিয়ে শামীম আখতারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত গনপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ক্যাডেট কলেজের ছাত্র আতিকুল ইসলামকে একটি কমিটি বানিয়ে কাজটি হস্তান্তর করেন। উক্ত কাজ মতিঝিল গণপূর্ত বিভাগ থেকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-১ এ হস্তান্তরের মূল উদ্দেশ্য কয়েক কোটি টাকার কমিশন বাণিজ্য হাতিয়ে নেয়া। এজন্যই মূলত কমিটি করা হয়েছিল। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর ভবন তৈরির কাজে সহযোগিতা করছেন আতিকুল ইসলাম। গণপূর্ত অধিদপ্তরের রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে বিভিন্ন ঠিকাদারের নিকট হতে অধিক পরিমাণ উৎকোচ গ্রহণ করে অনুমোদিত বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা হতে ৩ বছরে তিনি প্রায় ৬০ কোটি টাকার অতিরিক্ত দরপত্র আহ্বান করে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-১ এ বদলী হয়ে চলে যান। এই অতিরিক্ত ৬০ কোটি টাকার দরপত্র আহবান করে সুকৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এছাড়াও গণপূর্ত অধিদপ্তরের বদলীর বিষয়ে ভেলকিবাজি দেখিয়ে পুরো অধিদপ্তরে বাজিমাত করেছেন ক্ষমতাধর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আতিকুল ইসলাম। কারণ স্বরুপ বলা যায় সম্প্রতি প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার সাক্ষরিত এক অফিস আদেশ অনুযায়ী জানা গেছে, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ৫ ডিভিশনে বদলি–সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ জারি হয়েছে। সেখানেও পাঁচ প্রভাবশালী প্রকৌশলীই চেয়ার পেয়েছেন, যাঁরা দীর্ঘ সময় ঢাকার বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত ছিলেন।গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের স্বাক্ষর করা পৃথক দুটি অফিস আদেশে দেখা যায়, শেরবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ–৩–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদ রানাকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ–৪; ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ–১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আতিকুল ইসলামকে শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ–৩, ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ–৪–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুজ্জামান চুন্নুকে ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ–১ এবং পরবর্তীতে ঢাকার বাইরে বদলি করা হলে ও তিনি পুনরায় ঢাকার ফিরে আসতে জোর তদবির চালাচ্ছেন। এছাড়াও মহাখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমান উল্লাহ সরকারকে শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ–২ এবং পরবর্তীতে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়েছে। এবং শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগ–২–এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী হাসানকে মহাখালী গণপূর্ত বিভাগে বদলি করা হয়েছে। তবে আতিকুল ইসলাম যথারীতি শেরে-বাংল নগর গনপূর্ত বিভাগ -৩ এ কর্মরত থেকে তার সকল প্রকারের অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছেন।

মিস্টার ৫০% তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক : গণপূর্তের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক অসংখ্য দুর্নীতি ও অপরাধ করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে। গণপূর্ত অধিদপ্তরে মিস্টার ফিফটি পার্সেন্ট হিসাবে অনেকের কাছেই বহুল পরিচিত তিনি। একাধিক সূত্র এবং ভুক্তভোগী ঠিকাদারদের একটি বড় অংশ তার বিরুদ্ধে থাকা সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমান বিভিন্ন গনমাধ্যমকে হস্তান্তর করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের আস্থাভাজন হওয়ায় অধিদপ্তর জুড়ে কাউকে তিনি পরোয়া করেন না। সাবেক কর্মস্থল সাভার থাকাকালীন সময় থেকে ভুয়া বিল ভাউচার করে সরকারি টাকা উত্তোলন পূর্বক আত্মসাৎ এর মাধ্যমে অর্জিত অর্থে বিলাসী জীবন যাপন করে আসছেন। এসব বিষয় ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কমিশন দিয়ে ম্যানেজ করতেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। বর্তমানে তার সমস্ত অনিয়ম দুর্নীতির সহযোগী হিসাবে ৩ নং ডিভিশনের প্রকৌশলী কায়সার ইবনে সাইফকে কাজে লাগান। যিনি বর্তমানে তিনি তার সমস্ত কুকর্মের ছায়াসঙ্গী। পুরো অধিদপ্তর জুড়ে এমন অসংখ্য দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী রয়েছেন যাদের রয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এরা সবাই গনপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের অত্যন্ত আস্থাভাজন।