আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অন্যতম সুবিধাভোগী ইউনাইটেড গ্রুপ। জায়গা দখল করে অবৈধ ভবন নির্মাণ ছিলো এই শিল্পগোষ্ঠীর নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। সাপ্রতি বিষয়টি নজরে এনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কয়েক দফা চিঠি চালাচালির অবৈধ সম্পদ বিষয়ে জবাব দিতে পারেনি ইউনাইটেড। এর ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ভবন নির্মাণ করায় আর্থিক দণ্ডের মুখোমুখি ইউনাইটেড গ্রুপ। আর চিঠির জবাব না দিয়ে গড়িমসি করায় গুনতে হতে পারে মোটা অঙ্কের জরিমানা।
ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে রাজউকের চিঠির জবাব দিতে গড়িমসি এবং অসহযোগিতার কারণে একই সঙ্গে জরিমানার পরিমাণ বাড়বে বলে জানা গেছে।
ইউনাইটেডকে জরিমানা করার বিষয়টি রাজউকের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। রাজউক সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটির আগামী বোর্ড সভায় ইউনাইটেডকে জরিমানার সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হতে পারে। এর পরই তা বাস্তবায়ন করা হবে।
ইউনাইটেড গ্রুপ রাজধানীর ভাটারার মাদানী এভিনিউয়ে সুবিশাল পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করে তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিগত সরকারের আমলে তারা আইন ও বিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গড়ে তোলে ভবনটি। এমনকি অনুমোদন নেয়নি রাজউকের।
বিষয়টি নজরে আসার পর ইউনাইটেড গ্রুপকে চিঠি দেয় রাজউক। চাওয়া হয় ওই ভবন নির্মাণের নকশা। পরে এক চিঠিতে রাজউক কেন ওই ভবন ভেঙে ফেলা হবে না এবং ইউনাইটেডের কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানাতে বলে প্রতিষ্ঠানটিকে। তবে প্রথম দফা চিঠির জবাব দেওয়ার সময় চলে গেলেও ইউনাইটেড গড়িমসি করে। পুনরায় তাদের চিঠি দেওয়া হলে নড়েচড়ে বসে শিল্পগ্রুপটির কর্তব্যক্তিরা।
একই ধরনের অনিয়মের অভিযোগে গত নভেম্বরে ইউনাইটেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিকে চিঠি দেয় রাজউক।
অনুমতি ছাড়া ইউনাইটেডের ভবন গড়ে তোলার সত্যতা পাওয়ার কথা জানান রাজউকের চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমান সরকার। তিনি বলেন, ‘শিল্পগ্রুপটির যাদের দায়িত্ব ছিল রাজউক থেকে ভবন নির্মাণের অনুমতি নেওয়ার, সেটা তারা নেননি। অনুমতি ছাড়াই ভবন গড়ে তুলেছে ইউনাইটেড।’
এখন রাজউক ইউনাইটেডের অন্যান্য অনিয়মের পাশাপাশি ভবন নির্মাণে বিধিমতো জায়গার ব্যবহার ও পর্যাপ্ত জায়গা ছাড়ের বিষয়টিও তদন্ত করবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে। এ ব্যাপারে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভবন নির্মাণে রাস্তা থেকে কত জায়গা ছেড়েছে, সঠিক নিয়ম মেনে ভবন গড়ে উঠেছে কি না- এসব আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখব। যদি সব ঠিক থাকে তাহলে অনুমতি না থাকায় মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া তারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে যোগযোগ না করে কার্যক্রম চালাচ্ছিল। এ কারণে জরিমানা বাড়বে।’
এ বিষয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করে প্রতিষ্ঠানটির কারও সাড়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে অভিযোগ আছে, বিগত আওয়ামী লীগের আমলে ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে শেখ হাসিনার সরকারকে অর্থ দিয়ে সহায়তা করে ইউনাইটেড গ্রুপ। এমনকি আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় এই গ্রুপের কর্ণধারদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও হয়। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর প্রগতি সরণির শাহজাদপুর বাঁশতলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাহাদুর হোসেন মনির। এ ঘটনায় ৩০ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টা হাসান মাহমুদ রাজা, চেয়ারম্যান ও এমডি মঈনউদ্দিন হাসান রশিদ ও গ্রুপের কর্মকর্তা কর্নেল (অব.) আফজালের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি পুলিশ। অবৈধভাবে বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগও আছে শিল্প গ্রুপটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তদন্ত করছে সিআইডি।
আইনের ব্যত্যয় ও অনিয়ম করে ইউনাইটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। গত ১৭ ডিসেম্বর জাল-জালিয়াতি, প্রতারণা ও ব্যবসায়িক লেনদেনে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান উপদেষ্টাসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পরে তারা জামিন নেন আদালত থেকে।