হামাসের হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলকে সমর্থনের দৃঢ় আশ্বাস দেন। গেল শনিবার ইসরায়েলে হামলা চালায় ইসরায়েল।
জবাবে দেশটিও গাজায় হামলা চালায়।
ওয়াশিংটন ইসরায়েলকে বছরে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে। নতুন এই সংঘাত ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন হিসেবে ইসরায়েলের কাছাকাছি সামরিক জাহাজ ও যুদ্ধবিমান রাখার নির্দেশ দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন রোববার এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের এই হামলাকে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা অবিলম্বে আমাদের ইসরায়েলি অংশীদার ও মিত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
ব্লিঙ্কেন বলেন, প্রেসিডেন্ট (জো) বাইডেন ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে আলাপ হয়েছে। তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন।
ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র যেসব সামরিক সহায়তা দিচ্ছে
নৌবাহিনীর রণতরী
ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে এর যুদ্ধজাহাজের পাশে নিয়ে যাওয়া হবে।
ইউএসএস হলো যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান বহনকারী যান, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এই যানে একটি গাইডেড মিসাইল ক্রুজার ও চারটি গাইডেড মিসাইল ধ্বংসকারী রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত হিসেবে ইউএসএস নরম্যান্ডি, নৌ-বন্দুক দিয়ে সজ্জিত একটি গাইডেড মিসাইল ক্রুজার এবং ধ্বংসকারী ইউএসএস থমাস হাডনার, ইউএসএস রামেজ, ইউএসএস কার্নি ও ইউএসএস রুজভেল্ট পাঠাচ্ছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে বিমান বাহিনীর এফ -৩৫, এফ-১৫, এফ -১৬ এবং এ -১০ যুদ্ধবিমান স্কোয়াড্রন বাড়াচ্ছে।
আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, ইসরায়েল যখন গাজা উপত্যকায় হামাসকে মোকাবিলা করতে সক্ষম, তখন আমি কৌশলগত সামরিক পরিপ্রেক্ষিতে বুঝতে পারি না, কেন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী এবং সবচেয়ে আধুনিক যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে। ফোর্ড ক্যারিয়ার সরানোর মার্কিন সিদ্ধান্তকে তিনি বলছেন উত্তেজনা বৃদ্ধি।
যুদ্ধাস্ত্র
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন রোববার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে যুদ্ধাস্ত্র দেবে।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক জন হেনড্রেন বলেন, আমরা আসলে জানি না কী ধরনের যুদ্ধাস্ত্র। তবে সন্দেহ করা হচ্ছে, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইন্টারসেপ্টর ও প্রিসিশন-গাইডেড যুদ্ধাস্ত্র চেয়েছে।
হেনড্রেন বলেন, ইন্টারসেপ্টর ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য। এগুলো এমন ডিভাইস, যা হামাসের রকেটগুলোতে আঘাত করে এবং কিছু ক্ষেত্রে সেগুলো স্থলের পরিবর্তে আকাশে ক্ষতিহীনভাবে বিস্ফোরিত হয়।
আল জাজিরার এই সংবাদদাতা বলেন, দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন যুদ্ধাস্ত্র ইসরায়েলের ছয়টি ভিন্ন স্থানে আগে থেকে সরবরাহ করা হয়েছে, যা জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র কত সামরিক সহায়তা ইসরায়েলকে দেয়?
আল জাজিরার সংবাদদাতা অ্যালান ফিশার ওয়াশিংটন থেকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর ইসরায়েলকে তিন বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইসরায়েল হলো যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তার সবচেয়ে বড় ক্রমসঞ্চিত গ্রহীতা।
ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় কী প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে হামাস?
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার ঘোষণাকে হামাস ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
গেল রোববার এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী দিয়ে সহায়তার ঘোষণা আমাদের লোকজনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনে অংশগ্রহণ।