ভারতের প্রধান বিমান পরিষেবা সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটে বয়স্ক এক নারী যাত্রীর গায়ে প্রস্রাব করা শংকর মিশ্র (৩৪) নামের সেই যাত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে দিল্লি পুলিশের একটি দল ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেপ্তার করেছে তাকে।
দিল্লি পুলিশের এক কর্মকর্তা ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে দিল্লি থেকে পালিয়ে বেঙ্গালুরুতে আত্মগোপন করেছিলেন শংকর; নিজের মোবাইল ফোনও বন্ধ রেখেছিলেন। বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মূল ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২২ সালের ২৬ নভেম্বর। ওইদিন নিউইয়র্ক থেকে দিল্লিগামী এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইট মাঝপথে থাকা অবস্থায় উড়োজাহাজের বিজনেস ক্লাসের ভেতর মাতলামি শুরু করেন শংকর। এক পর্যায়ে প্যান্টের চেইন খুলে ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা সহযাত্রীর গায়ে প্রস্রাব করে দেন তিনি।
এনডিটিভি আরও জানিয়েছে, বিমানে দুপুরের খাবারের পর উজ্জ্বল বাতিগুলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে কী হচ্ছিল তা পাশের যাত্রীরা বুঝতে পারছিলেন না; আর শংকর এতটাই মাতাল ছিলেন যে প্রস্রাব করার পরও তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে তাকে আরেকজন এসে সরিয়ে দেন।
এমন ঘটনার পরও তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এয়ার ইন্ডিয়া ও এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। তবে কয়েক সপ্তাহ পর ওই বয়স্ক নারী যাত্রী এয়ার ইন্ডিয়ার পরিচালনাকারী সংস্থা টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখর বরাবর চিঠি লিখে অভিযোগ জানালে টনক নড়ে এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের এবং শংকরের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেয় কর্তৃপক্ষ।
চিঠিতে ওই বৃদ্ধা জানিয়েছিলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ক্রুদের অভিযোগ জানানোর পরও শংকরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ফ্লাইট কর্তৃপক্ষ। দিল্লিতে পৌঁছানোর পর বিমানবন্দর ত্যাগের সময়ও কোনো বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে। এয়ার ইন্ডিয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর শংকরকে গ্রেফতারে তার নামে লুক আউট নোটিস জারি করে দিল্লি পুলিশ। তিনি যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারেন, তার জন্য দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছিল।
শংকর মূলত থাকেন মুম্বাইয়ে। তার আইনজীবীর বরাত দিয়ে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, পরে ওই যাত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন শংকর, তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৫ হাজার রুপিও দিয়েছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধার মেয়ে এক মাস পর ওই টাকা ফিরিয়ে দেন। তারপরেই এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লিখে অভিযোগ জানান সেই বৃদ্ধা।