ঢাকা ০৮:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বেপরোয়া ভালুকার সাইবার সন্ত্রাসীরা দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ থেকে আগষ্টিন হাতিয়েছেন শত কোটি টাকা দীর্ঘ তিন বছর পর নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায়ে মরিচবুনিয়া ইউনিয়নের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী টিটুকে চেয়ারম্যান ঘোষণা উত্তরণ আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক উৎসব -২০২৪ অনুষ্ঠিত সময় আসবে একদিন…তখন আফসোস করবি বাংলাদেশটাকে ধ্বংস করার জন্য পটুয়াখালীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও জনস্বার্থে খাল পরিস্কার কর্মসূচী অনুষ্ঠিত ভারতে জমাজলে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ যুবকের মৃত্যু কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের বোর্ডে ভাসছে ‘আওয়ামী লীগ জিন্দাবাদ’! ঢাকাসহ ছয় বিভাগে বজ্র বৃষ্টির পূর্বাভাস ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী যুবলীগ নেতা মিজান গ্রেফতার

‘বেনজীরের খামারের’ দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ কয়েক গ্রামের মানুষ

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ ও স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে মিঠুর পোলট্রি খামারটি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দৌলতপুর ও গৌরিপুর মৌজার কয়েক গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, খামারের বর্জ্যে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। তীব্র দুর্গন্ধে ওই দুই মৌজার পাঁচ-সাত গ্রামের বাসিন্দাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ২০০৯ সালে সদর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে ‘নর্থ এগস লিমিটেড’ নামে বেনজীর ও মিঠু কোম্পানি প্রায় ৯০ বিঘা জমির ওপর একটি পোলট্রি খামার স্থাপন করেন। বড় খামারের মুরগির বিষ্ঠা মাছের খাবার ও কৃষি জমির সার হিসেবে বিক্রি হয়। আবার অনেক সময় কারখানার ভেতরেই রয়ে যায় এসব বিষ্ঠা। এতে দুর্গন্ধে আশপাশের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।

খামারের আশপাশের রাস্তায় চলতে হয় দুর্গন্ধের মধ্য দিয়ে। মুরগির বিষ্ঠা ট্রাকে করে নেওয়ার সময় গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ঝাঁকুনিতে ট্রাক থেকে বিষ্ঠা পড়ে যায়। ফলে ওই সব সড়কেও দুর্গন্ধের মধ্য দিয়ে চলতে হয় সাধারণ মানুষকে।

খামারের ব্যবস্থাপক ডা. ফেরদৌস আলম বলেন, ওই খামারে ৩ লাখের বেশি মুরগি আছে। এসব মুরগির বিষ্ঠা বিক্রি করা হয় ব্যবসায়ী ও মৎস্য খামারিদের কাছে। খামারটির ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, পেছনে বিষ্ঠা ফেলার একটি ভাগাড়। এর দেয়াল ঘেঁষেই জনবসতি।

গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, বিষ্ঠার দুর্গন্ধে থাকা যায় না। রোদ উঠলে বাতাসে গন্ধ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। একই গ্রামের খাদেজা বেগমসহ কয়েকজন নারী অভিযোগ করে বলেন, গন্ধে বমি আসে। তৃপ্তি নিয়ে খাওয়াদাওয়া করা যায় না। মশা-মাছির উপদ্রব্যের কারণে রাত-দিন মশারি টাঙিয়ে খেতে হয়।

শিউলি আক্তার বলেন, গন্ধে ঘুমাতেও কষ্ট হয়। উপজেলা পরিষদের বলাকা উদ্যান নামে একটি বিনোদন পার্কের ব্যবস্থাপক হাসান আলী বলেন মুরগির বিষ্ঠার গন্ধ ও মশা-মাছি- পোকার উপদ্রব্যে পার্কটিতে কেউ আসে না।

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. তোজাম্মেল হক বলেন, খামার এলাকার অনেক মানুষ তার কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পোলট্রি বর্জ্যের কণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে ফুসফুসের রোগের কারণ হতে পারে। এর থেকে শ্বাসকষ্ট এবং হার্টের ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এসব খামার সংলগ্ন এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকে।

একই চিত্র দেখা যায়, গৌরিপুর, বৌরাণী, কুমিল্লাহাড়ীসহ কয়েকটি গ্রামে। দৌলতপুর গ্রামের দিনমজুর সিরাজুল বলেন, গরিব মানুষের কথা কে শুনব। খামারের গন্ধের কথা বলতে গেলেই বিপদে পড়তে হয়। তার ওপর এটি ‘বেনজীরের খামার।’

জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলাল বলেন, দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দৌলতপুর ও গৗরিপুর মৌজার কয়েক এলাকার মানুষ। আর লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যক্তিরা প্রচণ্ড শক্তিশালী। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।

খামার ব্যবস্থাপক ডা. ফেরদৌস আলম তাদের খামার থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গন্ধ যাতে খামারের বাইরে না যায়, সে ব্যবস্থা তাদের নেওয়া আছে। বিষ্ঠা থেকে সার উৎপাদন করা হচ্ছে । এ খামারের মালিক বেনজীর কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানিনা । তবে তিনি এই খামারে এসেছিলেন।

ওই খামারের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।

 

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বেপরোয়া ভালুকার সাইবার সন্ত্রাসীরা

‘বেনজীরের খামারের’ দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ কয়েক গ্রামের মানুষ

আপডেট সময় ১০:২৩:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ ও স্বাস্থ্য খাতের বিতর্কিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম ওরফে মিঠুর পোলট্রি খামারটি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দৌলতপুর ও গৌরিপুর মৌজার কয়েক গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, খামারের বর্জ্যে দুষিত হচ্ছে পরিবেশ। তীব্র দুর্গন্ধে ওই দুই মৌজার পাঁচ-সাত গ্রামের বাসিন্দাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ২০০৯ সালে সদর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে ‘নর্থ এগস লিমিটেড’ নামে বেনজীর ও মিঠু কোম্পানি প্রায় ৯০ বিঘা জমির ওপর একটি পোলট্রি খামার স্থাপন করেন। বড় খামারের মুরগির বিষ্ঠা মাছের খাবার ও কৃষি জমির সার হিসেবে বিক্রি হয়। আবার অনেক সময় কারখানার ভেতরেই রয়ে যায় এসব বিষ্ঠা। এতে দুর্গন্ধে আশপাশের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না।

খামারের আশপাশের রাস্তায় চলতে হয় দুর্গন্ধের মধ্য দিয়ে। মুরগির বিষ্ঠা ট্রাকে করে নেওয়ার সময় গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ঝাঁকুনিতে ট্রাক থেকে বিষ্ঠা পড়ে যায়। ফলে ওই সব সড়কেও দুর্গন্ধের মধ্য দিয়ে চলতে হয় সাধারণ মানুষকে।

খামারের ব্যবস্থাপক ডা. ফেরদৌস আলম বলেন, ওই খামারে ৩ লাখের বেশি মুরগি আছে। এসব মুরগির বিষ্ঠা বিক্রি করা হয় ব্যবসায়ী ও মৎস্য খামারিদের কাছে। খামারটির ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, পেছনে বিষ্ঠা ফেলার একটি ভাগাড়। এর দেয়াল ঘেঁষেই জনবসতি।

গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, বিষ্ঠার দুর্গন্ধে থাকা যায় না। রোদ উঠলে বাতাসে গন্ধ আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ে। একই গ্রামের খাদেজা বেগমসহ কয়েকজন নারী অভিযোগ করে বলেন, গন্ধে বমি আসে। তৃপ্তি নিয়ে খাওয়াদাওয়া করা যায় না। মশা-মাছির উপদ্রব্যের কারণে রাত-দিন মশারি টাঙিয়ে খেতে হয়।

শিউলি আক্তার বলেন, গন্ধে ঘুমাতেও কষ্ট হয়। উপজেলা পরিষদের বলাকা উদ্যান নামে একটি বিনোদন পার্কের ব্যবস্থাপক হাসান আলী বলেন মুরগির বিষ্ঠার গন্ধ ও মশা-মাছি- পোকার উপদ্রব্যে পার্কটিতে কেউ আসে না।

ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. তোজাম্মেল হক বলেন, খামার এলাকার অনেক মানুষ তার কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পোলট্রি বর্জ্যের কণা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে ফুসফুসের রোগের কারণ হতে পারে। এর থেকে শ্বাসকষ্ট এবং হার্টের ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এসব খামার সংলগ্ন এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকে।

একই চিত্র দেখা যায়, গৌরিপুর, বৌরাণী, কুমিল্লাহাড়ীসহ কয়েকটি গ্রামে। দৌলতপুর গ্রামের দিনমজুর সিরাজুল বলেন, গরিব মানুষের কথা কে শুনব। খামারের গন্ধের কথা বলতে গেলেই বিপদে পড়তে হয়। তার ওপর এটি ‘বেনজীরের খামার।’

জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আলাল বলেন, দুর্গন্ধে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দৌলতপুর ও গৗরিপুর মৌজার কয়েক এলাকার মানুষ। আর লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব ব্যক্তিরা প্রচণ্ড শক্তিশালী। তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।

খামার ব্যবস্থাপক ডা. ফেরদৌস আলম তাদের খামার থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, গন্ধ যাতে খামারের বাইরে না যায়, সে ব্যবস্থা তাদের নেওয়া আছে। বিষ্ঠা থেকে সার উৎপাদন করা হচ্ছে । এ খামারের মালিক বেনজীর কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি জানিনা । তবে তিনি এই খামারে এসেছিলেন।

ওই খামারের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে কিনা জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেলায়েত হোসেন বলেন, খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।