পিরোজপুর জেলার নেসারাবাদ (স্বরুপকাঠী) উপজেলার পি.জি.এস.সুকাদিত্যকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টি একটি ভুয়া সনদকে কেন্দ্র করে এখন শিক্ষা ডিপার্টমেন্টসহ এলাকায় আলোচনা সমালোচনায় পরিনত হয়েছে। আর ঐ ভুয়া সনদ প্রদানের মূল হোতা হচ্ছে প্রধান শিক্ষক মনোজ হালদার। এক নারীকে বিদ্যালয়ের ভুয়া ছাত্রী সাজিয়ে তাকে বৈধতা দেয়ার মিশনে নেমেছিলেন তিনি। তার এই অবৈধ কর্ম কান্ড নিয়ে ঢাকা থেকে প্রকাশিত অপরাধ বিচিত্রায় পর পর ০৩ টি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অবৈধ সনদকে বৈধতা দিতে অপরাধ বিচিত্রার গত ১০ জুন ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত সংখ্যায় মনোজ হালদার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞাপন আকারে একটি প্রতিবাদ প্রকাশিত হয়। উক্ত প্রতিবাদ বিজ্ঞাপনের একটি পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট প্রকাশিত হয় গত ০৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত অপরাধ বিচিত্রার সংখ্যায়। মনোজ মাস্টারের অতীত এবং বর্তমান অবৈধ কর্ম কান্ডের তথ্য অনুসন্ধানে মাঠে রয়েছে নবজাগরণ পত্রিকার অনুসন্ধানী টিম। অনুসন্ধানে একের পর এক বেড়িয়ে আসছে প্রধান শিক্ষক মনোজ হালদারের বিভিন্ন অপরাধের খতিয়ান।
মনোজ মাস্টারের কর্ম কান্ডের পূর্বাপর বিশ্লেষণে দেখা যায় সে রুমা আক্তার নামে এক নারীকে গত ২২.০৯.২০২২ তারিখে হাতে লেখা অষ্টম শ্রেণি পাসের একটি ভুয়া সনদ প্রদান করে। ঐ সনদকে কেন্দ্র করে সারেংকাঠী পঞ্চগ্রাম সন্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আয়া পদে নিয়োগ বাতিল হয়ে যায়। ঐ ঘটনা নিয়ে এলাকায় মনোজ মাস্টারের বিরুদ্ধে নিন্দার ঝড় ওঠে। সনদধারী ঐ দরিদ্র পরিবারটি থেকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগও ওঠে তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী কথা বলা শুরু করলে আওয়ামী লীগের চামচা বলে খ্যাত মনোজ মাষ্টার এই বলে হুমকি প্রদান করতে শুরু করে যে, সে সাবেক সাংসদ মোঃ শাহআলম এবং নেসারাবাদ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিদুল ইসলামের লোক। এ ছাড়াও তৎকালীন মন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম ও সাবেক সাংসদ আউয়ালের সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে। তার এ সকল হুমকিতে কেউই তার কোনো অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়নি। নিজের অপকর্ম এবং দূর্নীতির অপরাধ আড়াল করতে বিধান বড়াল নামে এক দালালের মাধ্যমে মোটা অংকের বিজ্ঞাপন খরচ প্রদান করে “অপরাধ বিচিত্রায়” প্রতিবাদ বিজ্ঞাপন প্রকাশ করায়। ঐ বিজ্ঞাপন খরচ বাবদ প্রদত্ত ৫০,০০০/= টাকার একটি মানি রিসিট রয়েছে নবজাগরণ এর অনুসন্ধানী টিমের হাতে । মনোজ মাস্টার উক্ত প্রতিবাদ বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করেন ঐ দরিদ্র পরিবার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা গ্রহন করা হয় নি। এখন প্রশ্ন আসে যদি ভুয়া সনদের বিনিময়ে কোনো আর্থিক সুবিধা না নেয়া হয় তা হলে ভুয়া সনদকে বৈধতা দিতে দালাল এবং বিজ্ঞাপন খরচ বাবদ এত টাকা খরচের উৎস কোথায়?
প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ ও সরেজমিন তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, নেসারাবাদ উপজেলার সারেংকাঠী পঞ্চগ্রাম সন্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৫ টি ক্যাটাগরিতে শুন্য পদে নিয়োগের জন্য গত ০৬ জুন ২০২৩ তারিখে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়। অন্যান্য পদের সাথে আয়া পদে মোট ১২ জন আবেদন পত্র জমা দেয়। জমাকৃত আবেদনের মধ্যে রুমা আক্তার নামে একটি আবেদন পত্র জমা হয়। ঐ আবেদন পত্রের সাথে অষ্টম শ্রেণি পাশের হাতে লেখা একটি প্রত্যয়নপত্র সংযুক্ত করা হয়। পি.জি.এস সুকাদিত্যকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোজ হালদার স্বাক্ষরিত উক্ত প্রত্যয়নপত্রে রুমা আক্তারকে তার স্কুলের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। রুমানা ঐ স্কুলে ২০০১ সালে ষষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে ২০০৩ সালের অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় মর্মে উল্লেখ করা হয়। আবেদনকারী অন্যান্য প্রার্থীরা এবং সচেতন মহল এ বিষয়ে আপত্তি করলে রুমা আক্তারকে চাকরি পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস প্রদানকারী আওয়ামী লীগ নামধারী একদল সন্ত্রাসী হুমকি দিয়ে সকলের মুখ বন্ধ করে দেয়। নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়োগদানকারী কতৃপক্ষ সকল পদের নিয়োগ পরীক্ষা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গ্রহন করতে বাধ্য হন। গত ২৯/১১/২০২৩ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষা শেষে ৪ টি পদে নিয়োগ দেয়া হলেও ভুয়া সনদধারীর বিপক্ষে আপত্তি থাকায় আয়া পদে নিয়োগ বাতিল করা হয়। এদিকে রুমা আক্তার নামে ঐ নাড়ীর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তার পৈত্রিক বাড়ি পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার সোনাকুর গ্রামে। প্রাপ্ত তথ্য মতে ১৫/১৬ বছর পূর্বে নেসারাবাদ উপজেলার সারেংকাঠী গ্রামের কাজী কালামের সাথে তার বিবাহ হয়। ঐ সময়ে বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করা একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায় রুমা আক্তার নামে তাদের ক্লাশে কোনো ছাত্রী ছিল না। সুকাদিত্যকাঠী হাইস্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক নির্মল মন্ডল জানান আমার সময়ে কাউখালী উপজেলার ঐ ঠিকানার রুমা আক্তার নামে কোনো ছাত্রীই আমার স্কুলে অধ্যায়নরত ছিল না। এখন প্রশ্ন আসে মনোজ মাষ্টার ০১.১০.২০১২ তারিখে ঐ বিদ্যালয়ে যোগদান করে রুমা আক্তার নামের ঐ গায়েবি ছাত্রীকে কত টাকার বিনিময়ে আবির্ভাব ঘটালেন।
বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র থেকে জানা গেছে ঐ গায়েবি ছাত্রীকে জায়েজ করার জন্য স্কুলের পুরাতন খাতা পত্র ঘষামাজা চলছে। এখানেও প্রশ্ন আসে কত টাকা উৎকোচের বিনিময়ে এবং কাদের নেপথ্য ইন্ধনে তিনি একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। তার অপকর্মের সহযোগী হিসাবে শিক্ষা কর্মকর্তাদের কেউ জড়িত আছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের কাদের ছত্র ছায়ায় থেকে সে দূর্নীতিতে জড়িয়েছে।
মনোজ মাস্টারের সকল অপকর্ম ও দূর্নীতির অনুসন্ধানকৃত বিস্তারিত সংবাদ থাকছে আমাদের আগামী সংখ্যায়। চোখ রাখুন