ডায়াবেটিস হলো একটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা। যেখানে আমারা যেসব খাবার খাই তা থেকে শরীর ঠিকভাবে শক্তি গ্রহণ করতে পারে না। আমাদের অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন নামে এক ধরনের হরমোন তৈরি করে, যা গ্লুকোজ বা চিনি আমাদের কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে আমাদের শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না এবং এর যথাযথ ব্যবহারও করতে পারে না। যে কারণে রক্তে শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস সম্পর্কিত কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে, যা জানা জরুরি-
‘ডায়াবেটিস হলে চিনিযুক্ত কোনো খাবার খাওয়া যাবে না’
এটি সত্যি নয়। চিনি এবং স্ট্রার্চ হলো আমাদের শক্তির অন্যতম উৎস যা প্রতিদিনের খাবারে থাকা জরুরি। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে খাবারের তালিকা স্বাস্থ্যকর রাখা জরুরি। সেইসঙ্গে প্রাকৃতিক খাবার বেশি খাওয়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দেওয়াও জরুরি। স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যে পরিমিত চিনি ও স্ট্রার্চ থাকতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাবারের তালিকা তৈরি করলে।
‘কেবল বয়স্করাই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়’
বয়স অবশ্যই এক্ষেত্রে একটি বিষয়। বিশেষ করে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে টাইপ-২ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। তবে এর মানে এই নয় যে কেবল বয়স্করাই এতে আক্রান্ত হতে পারে। নিয়মিত অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রম কম করা অতিরিক্ত ওজনের শিশু-কিশোরদের মধ্যেও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
‘কেবল স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিরই টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয়’
অতিরিক্ত ওজন বা স্থুল ব্যক্তির ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তার মানে এই নয় যে সব স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিরই ডায়াবেটিস থাকে। বিএমআই ও অন্যান্য বিষয় স্বাভাবিক থাকা কিংবা ওজন কম হওয়ার পরও অনেকে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে।
‘ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে কেবল ডায়াবেটিক খাবার খাওয়া উচিত’
ডায়াবেটিস দাতব্য সংস্থা ডায়াবেটিস ইউকে’র পরামর্শ হলো, ডায়াবেটিস রোগীদের কেবল ডায়াবেটিক খাবার খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। এ জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে বেশিরভাগই ‘ডায়াবেটিক’ লেবেল লাগিয়ে চিনি, অ্যালকোহল ও অন্যান্য মিষ্টি ব্যবহার করা হয়। ডায়াবেটিস হলে ডায়াবেটিক খাবারের প্রতি উৎসাহী করা হয় না কারণ সেসব খাবারও রক্তে গ্লুকোজের মাত্রায় প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলো ব্যায়বহুলও। এতে ব্যবহৃত উপাদানগুলো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
‘ডায়াবেটিস হলেই অন্ধ ও পঙ্গু হওয়ার ভয় থাকে’
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা না হলে অন্ধত্ব বা পা হারানোর ভয় থাকে, এমনটা বিশ্বাস করেন অনেকে। এমনটা হবেই তা বিশ্বাস করা জরুরি নয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পর রক্তচাপ, গ্লুকোজ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে এবং ধূমপানের অভ্যাস ছেড়ে দিলে এ ধরনের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। ডায়াবেটিস হলেও অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ব প্রতিরোধ করা সম্ভব। বছরে একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করলে সম্ভাব্য অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়।