ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক রফিকুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, হয়রানির লিখিত অভিযোগ করেছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও মিড ওয়াইফরা। দাপ্তরিক কোনো কাজ নিয়ে তার অফিস কক্ষের চৌকাঠ পেরুলেই গুনতে হতো টাকা। কেউ টাকা না দিলে, সেই কাজ তিনি শুরুই করতেন না বলেও অভিযোগ করেন তারা।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টায় ছাত্র জনতার একটি প্রতিনিধি দল তার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে কি না তা তদন্ত কমিটির কাছে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।
এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষকের অপসারণের জন্য ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছিলেন তারা। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পার্থ জ্বিময় সরকারকে আহবায়ক এবং মেডিকেল অফিসার ডা. আহসান হাবীবকে সদস্য সচিব করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়।
ভুক্তভোগী সিনিয়র স্টাফ নার্স জোহারা বেগম জানান, অফিসের অনেক কাজের জন্য বড় বাবুর (প্রধান সহকারী হিসাবরক্ষক রফিকুল ইসলাম) কাছে আমাদের যেতে হয়। আর যে কোন কাজের জন্য ওনি টাকা দাবি করেন। টাকা দিলে কাজ করতেন, না দিলে কাজ করতেন না। তিন বছর পরপর আমার শান্তি বিনোদনের জন্য টাকা পাই। সেই টাকার বাজেট আনার জন্য আগেও টাকা চেয়েছে এবং সেই টাকা নিয়ে আসার পর বিল যখন করা হবে তখনো তাকে টাকা দিতে হবে। আমরা এটা দিতে রাজি না হওয়াতে ওনি কাজ করবে না। এমনকি কাগজ ছুঁড়ে ফেলে দেন এবং বলেন, আপনারা আপনাদের কাজ করেন আমি করতে পারব না। তাকে যখন আমরা প্রশ্ন করি, তাহলে আপনার কাজ কি? তখন তিনি বলেন, টাকা দিলে কাজ করব, না হলে করব না।
নির্মলা হাজদা নামে আরেক সিনিয়র স্টাফ নার্স জানান, আমি অসুস্থ হওয়ার কারণে ছুটির আবেদন করি। আর এই ছুটির আবেদন বড় বাবু রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে করতে হয়। আমি যখন তার কাছে যায় তখন তিনি টাকা দাবি করে বসেন। আমি তখন তাকে টাকাও দেই কিন্তু তিনি আমার কাজে টাকা নিয়েও করে দেননি। আমার মত কম বেশি সবাই তার দ্বারা ভুক্তভোগী।
ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে তারেক রেজা বলেন, ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে আমরা এখানে এসেছি। ঘুষ খোর, অসৎ দুর্নীতিবাজ এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে কি সিন্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা জানতে এসেছি। এই প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক রফিকুল ইসলাম এর আগে যে স্টেশনে কর্মরত ছিলেন সেখানেও তিনি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। যার শাস্তি স্বরূপ এখানে বদলি করা হয়েছিল। এখানে এসেও তিনি একই কাজ লিপ্ত হয়েছেন। আমরা জানতে চাই, একজন ঘুষখোরের শাস্তি কি শুধু মাত্র বদলি?
এ বিষয়ে মুঠোফোনে প্রধান হিসাবরক্ষক রফিকুল ইসলাম জানান, আমি ছুটিতে আছি। আমার উপর আনিত অভিযোগ মিথ্যা। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। আশেপাশে খোঁজ নেন আমি কেমন। শুধু মাত্র তারাই আমার বিরুদ্ধে। আমাকে সরাতে পারলেই তাদের ভালো। গোটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দাপ্তরিক কাজ আমি নিজে একলা হাতে করি। কই অন্য কেউ তো আমার নামে কোন অভিযোগ করলো না। আমার হয়ত এখন বদলি হবে। অন্যত্র আমাকে চলে যেতে হবে।
তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ডা. আহসান হাবীব বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পপ কর্মকর্তা ডা. সালাউদ্দীন আহমেদ খান স্যারের নির্দেশে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। এবং তদন্তে আংশিক সত্যতা মিলেছে। আমরা আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত আকারে অবহিত করেছি।