ঢাকা ১০:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি বাকেরগঞ্জের বিরঙ্গল দারুসুন্নাত নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসাটির বিভিন্ন অনিয়ম রয়েছে গোপালগঞ্জের সোহাগ একসঙ্গে দুই সরকারি চাকরি করেন বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিটিভির সংবাদ বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রয়োজন নেই : নাহিদ শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পের অভিযানে দু’কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার, আটক-১ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেই ভাসতে থাকে প্রথম শ্রেণীর জাজিরা পৌরসভা। চট্টগ্রামে সাবেক সাংসদ বাদলের কবরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ

নওগাঁয় জোর করে ছাড়পত্র দিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ, অভিযুক্ত ডাক্তার চৌধুরী বেজায় দাপুটে

  • নওগাঁ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় ০৬:১৬:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৫১৪ বার পড়া হয়েছে

নওগাঁয় জোর করে ছাড়পত্র দিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে
নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এম.এ.আর চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

জানা যায়,নওগাঁ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। যেখানে নামমাত্র ফি দিয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা নেয় নিম্ন ও মধ্যবিত্তসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিভিন্ন বয়সীরা এখানে সেবা নিতে আসেন। প্রতিদিন বর্হি ও অন্ত বিভাগে অন্তত দেড় হাজার মানুষ চিকিৎসা নেয়। চিকিৎসার পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধও পাওয়া যায়। জেলার অন্তত ৩০ লাখ মানুষের ভরসার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে এই হাসপাতাল। তবে কয়েকজন ডাক্তারের কারণে সুনামক্ষুন্ন হচ্ছে হাসপাতালের। বাড়তি সুবিধা নিতে রোগীদের বাহিরের ক্লিনিকে ও নিজেস্ব চেম্বারে যেতে পরামর্শ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, রানীনগর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা বয়জেষ্ঠ্য আব্দুল জব্বার ( ৬৫) দীর্ঘদিন ধরে হৃদজনিত সমস্যায় ভূগছেন তাই চিকিৎসা নিতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আসেন কিন্তু ২ দিন ভর্তি থাকার পড়ে তাকে ভালোভাবে চিকিৎসা না দিয়েই ছাড়পত্র দেন কার্ডিওলজির ডাক্তার এম এ আর চৌধুরী। পাশাপাশি হাসপাতালের বাহিরে নিজেস্ব চেম্বারে দেখা করতে বলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আব্দুল জব্বার বলেন, আমার হার্ট এর সমস্যা অনেকদিন ধরে ঠিক মত চিকিৎসা করাতে পারিনা এজন্য সরকারী হাসপাতালে এসেছি যাতে একটু ভালো চিকিৎসা পেতে পারি কিন্তু আমার ইঞ্জেকশন ৮ টা দেয়ার কথা কিন্তু ডাক্তার এম.এ.আর চৌধুরী মাত্র ৬ টা দিয়েই বাড়িতে চলে যেতে বলে অথচ আমি সুস্থ নয়। আবার বাহিরে তার নাকি ক্লিনিকে চেম্বার আছে সেখানে যেতে বলেন।

অভিযোগ শুধু আব্দুল জব্বারের নয়, অনেকেই করছেন এমন অভিযোগ। হাসপাতালে বার বার এসেও তার দ্বারা ভালো কোনো চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা। বরং জোর করে ছাড়পত্র দিয়ে উল্টো নিজেই ছাড়পত্রে লিখছেন DOR যার। যার অর্থ Dicharge On Request। অর্থাৎ রোগী নিজ ইচ্ছায় যেতে চেয়েছেন। কিন্তু রোগীরা বলছেন ভিন্ন কথা, সুস্থ হওয়ার আগে কোনোভাবেই যেতে চান না তারা। বরং তিনি নিজ থেকেই ইচ্ছামত রোগিদের ছাড়পত্র দিয়ে দেন।

চক তাতারু গ্রামের বাসিন্দা ফজলু রশিদ বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর উনি বলেন রিপোর্ট করার জন্য বাহিরে যেতে বলেন চেম্বারে। রিপোর্ট করার পর আবার আমাকে ছুটি দেয় কিন্তু সুস্থ হোই না আবারো সদর হাসপাতালে আসতে হয় আবারো রিপোর্ট করতে বলে।উনার দ্বারা ভালো চিকিৎসা পাই না আমরা । ডাক্তার এম.এ.আর চৌধুরী আমার কোনো চিকিৎসা করতে পারেনি।

বরুনকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সামাদ ( ৬০) বলেন ডাক্তার এম.এ.আর চৌধুরী আমাকে সব সময় ছাড়পত্র দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু আমি জোর করে এখানে থাকি। কেন উনি বার বার চলে যেতে বলেন এখানে তো আমরা সুস্থ হওয়ার জন্য আসি।

সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে রোগীর ব্যবস্থাপনা পত্রে DOR লিখাটা কেটে দিয়ে আরো ২ দিন হাসপাতালে থাকতে বলেন পাশাপাশি বাকি ইঞ্জেকশন গুলো দিতে বলেন ডাক্তার।

স্থানীয় বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন,গ্রাম থেকে রোগীগুলো আসে সেগুলো রোগীকে দালালেরা বিভিন্ন ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠায় আবার অনেক টেনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয় এবং রোগিদের জিম্মি করে যতটুকু নেয়ার কথা তার চেয়ে বেশি নেয়। সরকারি হাসপাতালে যে টেস্টগুলো হয় সেগুলো এখানে করাচ্ছে না, এগুলো বাহিরে পাঠাচ্ছে দালালের মাধ্যমে। আমরা চাই অতি শীঘ্রই হাসপাতালটি দলাল মুক্ত হোক।

রোগিদের এমন অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ডাক্তার এম এ আর চৌধুরী তবে ছাড়পত্র দেয়ার পড়ে প্রাইভেট হাসপাতালে টেস্ট করতে বলার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন

হাসপাতাল চলাকালীন সময়ে আমি প্রাইভেট হাসপাতালে রোগীদের কখনোই যেতে বলিনা কিন্তু রোগী চলে যায় তখন তাকে বলি আপনার একটি বিশেষ পরীক্ষা আছে এই পরীক্ষাটি যদি সামর্থ্য হয় তাহলে করিয়েন নাহলে আমার কাছে করতে চান তাহলে প্রাইমে করিয়েন, এটা আমি বলি। আবার বগুড়া মেডিকেল এ মাত্র ৬০০ টাকা দিয়ে হয় সেখানেও করতে পারে।

এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান নওগাঁ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. জাহিদ নজরুল চৌধূরী,তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

পিলখানা হত্যাকাণ্ডকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ আখ্যায়িত করার দাবি

নওগাঁয় জোর করে ছাড়পত্র দিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ, অভিযুক্ত ডাক্তার চৌধুরী বেজায় দাপুটে

আপডেট সময় ০৬:১৬:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নওগাঁয় জোর করে ছাড়পত্র দিয়ে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে
নওগাঁ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এম.এ.আর চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

জানা যায়,নওগাঁ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। যেখানে নামমাত্র ফি দিয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা নেয় নিম্ন ও মধ্যবিত্তসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিভিন্ন বয়সীরা এখানে সেবা নিতে আসেন। প্রতিদিন বর্হি ও অন্ত বিভাগে অন্তত দেড় হাজার মানুষ চিকিৎসা নেয়। চিকিৎসার পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে বিনামূল্যে ওষুধও পাওয়া যায়। জেলার অন্তত ৩০ লাখ মানুষের ভরসার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে এই হাসপাতাল। তবে কয়েকজন ডাক্তারের কারণে সুনামক্ষুন্ন হচ্ছে হাসপাতালের। বাড়তি সুবিধা নিতে রোগীদের বাহিরের ক্লিনিকে ও নিজেস্ব চেম্বারে যেতে পরামর্শ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে গিয়ে জানা যায়, রানীনগর উপজেলার এনায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা বয়জেষ্ঠ্য আব্দুল জব্বার ( ৬৫) দীর্ঘদিন ধরে হৃদজনিত সমস্যায় ভূগছেন তাই চিকিৎসা নিতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আসেন কিন্তু ২ দিন ভর্তি থাকার পড়ে তাকে ভালোভাবে চিকিৎসা না দিয়েই ছাড়পত্র দেন কার্ডিওলজির ডাক্তার এম এ আর চৌধুরী। পাশাপাশি হাসপাতালের বাহিরে নিজেস্ব চেম্বারে দেখা করতে বলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

আব্দুল জব্বার বলেন, আমার হার্ট এর সমস্যা অনেকদিন ধরে ঠিক মত চিকিৎসা করাতে পারিনা এজন্য সরকারী হাসপাতালে এসেছি যাতে একটু ভালো চিকিৎসা পেতে পারি কিন্তু আমার ইঞ্জেকশন ৮ টা দেয়ার কথা কিন্তু ডাক্তার এম.এ.আর চৌধুরী মাত্র ৬ টা দিয়েই বাড়িতে চলে যেতে বলে অথচ আমি সুস্থ নয়। আবার বাহিরে তার নাকি ক্লিনিকে চেম্বার আছে সেখানে যেতে বলেন।

অভিযোগ শুধু আব্দুল জব্বারের নয়, অনেকেই করছেন এমন অভিযোগ। হাসপাতালে বার বার এসেও তার দ্বারা ভালো কোনো চিকিৎসা পাচ্ছেন না রোগীরা। বরং জোর করে ছাড়পত্র দিয়ে উল্টো নিজেই ছাড়পত্রে লিখছেন DOR যার। যার অর্থ Dicharge On Request। অর্থাৎ রোগী নিজ ইচ্ছায় যেতে চেয়েছেন। কিন্তু রোগীরা বলছেন ভিন্ন কথা, সুস্থ হওয়ার আগে কোনোভাবেই যেতে চান না তারা। বরং তিনি নিজ থেকেই ইচ্ছামত রোগিদের ছাড়পত্র দিয়ে দেন।

চক তাতারু গ্রামের বাসিন্দা ফজলু রশিদ বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর উনি বলেন রিপোর্ট করার জন্য বাহিরে যেতে বলেন চেম্বারে। রিপোর্ট করার পর আবার আমাকে ছুটি দেয় কিন্তু সুস্থ হোই না আবারো সদর হাসপাতালে আসতে হয় আবারো রিপোর্ট করতে বলে।উনার দ্বারা ভালো চিকিৎসা পাই না আমরা । ডাক্তার এম.এ.আর চৌধুরী আমার কোনো চিকিৎসা করতে পারেনি।

বরুনকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সামাদ ( ৬০) বলেন ডাক্তার এম.এ.আর চৌধুরী আমাকে সব সময় ছাড়পত্র দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু আমি জোর করে এখানে থাকি। কেন উনি বার বার চলে যেতে বলেন এখানে তো আমরা সুস্থ হওয়ার জন্য আসি।

সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে রোগীর ব্যবস্থাপনা পত্রে DOR লিখাটা কেটে দিয়ে আরো ২ দিন হাসপাতালে থাকতে বলেন পাশাপাশি বাকি ইঞ্জেকশন গুলো দিতে বলেন ডাক্তার।

স্থানীয় বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন,গ্রাম থেকে রোগীগুলো আসে সেগুলো রোগীকে দালালেরা বিভিন্ন ক্লিনিক ও প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠায় আবার অনেক টেনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয় এবং রোগিদের জিম্মি করে যতটুকু নেয়ার কথা তার চেয়ে বেশি নেয়। সরকারি হাসপাতালে যে টেস্টগুলো হয় সেগুলো এখানে করাচ্ছে না, এগুলো বাহিরে পাঠাচ্ছে দালালের মাধ্যমে। আমরা চাই অতি শীঘ্রই হাসপাতালটি দলাল মুক্ত হোক।

রোগিদের এমন অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন ডাক্তার এম এ আর চৌধুরী তবে ছাড়পত্র দেয়ার পড়ে প্রাইভেট হাসপাতালে টেস্ট করতে বলার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন

হাসপাতাল চলাকালীন সময়ে আমি প্রাইভেট হাসপাতালে রোগীদের কখনোই যেতে বলিনা কিন্তু রোগী চলে যায় তখন তাকে বলি আপনার একটি বিশেষ পরীক্ষা আছে এই পরীক্ষাটি যদি সামর্থ্য হয় তাহলে করিয়েন নাহলে আমার কাছে করতে চান তাহলে প্রাইমে করিয়েন, এটা আমি বলি। আবার বগুড়া মেডিকেল এ মাত্র ৬০০ টাকা দিয়ে হয় সেখানেও করতে পারে।

এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন বলে জানান নওগাঁ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. জাহিদ নজরুল চৌধূরী,তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।