ঢাকা ০৭:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রতিবাদে মানববন্ধন বিটিভির সংবাদ বেসরকারি টেলিভিশনে সম্প্রচারের প্রয়োজন নেই : নাহিদ শুক্রবারও চলবে মেট্রোরেল চাঁপাইনবাবগঞ্জ র‍্যাব ক্যাম্পের অভিযানে দু’কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধার, আটক-১ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলেই ভাসতে থাকে প্রথম শ্রেণীর জাজিরা পৌরসভা। চট্টগ্রামে সাবেক সাংসদ বাদলের কবরে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে মুক্তি পাচ্ছে ‘রুম নম্বর ২০১১’ গণতন্ত্র ও বিএনপি সমান্তরাল : মির্জা ফখরুল আ.লীগ দেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল : তারেক রহমান

অডিটের নামে ১০ স্কুল থেকে অর্ধকোটি ঘুষ, টাকা ফেরাতে স্মারকলিপি

যশোরের মণিরামপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অডিটের নামে ১০ স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের এক মাসের বেতন ঘুষ বাবদ অর্ধকোটি টাকা আদায়ের ঘটনার দুই বছর পরে ওই টাকা ফেরত চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) মণিরামপুর উপজেলার হাজরাকাঠি দারুল উলুম মহিলা আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।

এতে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, বেসরকারি শিক্ষকদের পাঠদান ব্যতীত অন্যকোনো কাজে সম্পৃক্ততার সুযোগ নেই। ফলে দুর্নীতি-অনিয়ম করার মতো কোনো ক্ষেত্রও নেই। অথচ, ২০২২ সালের মার্চ মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধীন ‘পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তা ড. এনামুল হক নামের এক কর্মকর্তা ‘মিনিস্ট্রি অডিটের’ নামে শিক্ষক-কর্মচারীদের নানাবিধ ভয় দেখিয়ে পুরো একমাসের বেতন ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন।

শিক্ষকরা আরও উল্লেখ করেন, অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষকরা যা বেতন পান তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। তারপরও মাস শেষে হাতে গোনা বেতনের টাকা উত্তোলন করে সংসারের কেনাকাটা, বাচ্চাদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও ঋণের কিস্তি দেন। কিন্তু সেই টাকাগুলো জোরপূর্বক ঘুষ দিতে বাধ্য হয়ে অনেকেই অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এমনকি বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানানোর পরে ওই কর্মকর্তা ফের চাপ সৃষ্টি করে ‘আমরা ঘুষ দেয়নি মর্মে প্রস্তুত করা চিঠিতে’ স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরে দুদক ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করলেও খুব বেশি অগ্রসর হতে দেখা যায়নি। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার লোক তদন্তে আসলে ওই কর্মকর্তার অনুসারীরা আমাদের পেনশন আটকে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অস্বীকার করাতে বাধ্য করেন। এসব ভয় উপেক্ষা করে যারা সত্য বলবেন তাদের সাক্ষী নেয়নি তদন্তকারীরা।

অভিযোগে বলা হয়, অডিট কর্মকর্তা অডিট করতে এসে ঘুষের ভাগ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতা এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও দেওয়া লাগে। যা অনেক শিক্ষক গোপনভাবে রেকর্ড করে। ওই কর্মকর্তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার শিক্ষকদের মাঝে জানতে পারেন, ড. এনামুলের স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং স্বামীর অবৈধ টাকার জোরে দুবার ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। এছাড়াও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের চাকরি নিয়ে দীর্ঘকাল ডিআইয়ের একই চেয়ারে বসে সারা দেশের শিক্ষকদের জিম্মি করে মিনিস্ট্রি অডিটের নামে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ওই টাকায় এলাকায় শত’ শত’ বিঘা আমের বাগান ও মৎস্য খামার, ঢাকায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়েছেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, ওই সময় ড. এনামুলের ফেসবুকে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সাথে তোলা ছবি দেওয়া ছিল। এতে সাধারণ শিক্ষকরা অবৈধ ক্ষমতার ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। শিক্ষকরা অবিলম্বে তদন্তপূর্বক ঘুষের টাকা ফেরত পেতে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে মানবিক আবেদন জানিয়েছেন। অন্যথায়, কষ্টের বেতনের টাকা আদায়ে তাদের রাস্তায় নামা ব্যতীত কোন পথ খোলা থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের মার্চ মাসের শুরুতে যশোরের মণিরামপুর পৌর শহরের মণিরামপুর মহিলা আলিম মাদ্রাসা, হাজরাকাঠি মহিলা আলিম মাদ্রাসা, ডুমুরখালি দাখিল মাদ্রাসা, মনোহরপুর দাখিল মাদ্রাসা, বালিধা-পাঁচাকড়ি দাখিল মাদ্রাসা, রোহিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাজীআলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়ব্যয়, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে অডিট করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক ড. এনামুল হক। পরিদর্শনকালে ওই ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০০ শিক্ষক-কর্মচারীর পুরো একমাসের বেতনের প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ১২ মে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সিলভিয়া ফেরদৌস ও আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি দল শিক্ষাভবনে অভিযুক্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেন।

এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, উনি (ড. এনামুল হক) যশোরে এসে একটি রেস্ট হাউজে উঠে ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে দেখা করতে বলেন। এরপর সরাসরি বলেন, আপনাদের অনেক ফাঁক-ফোকর আছে। প্রকৃত অডিট হলে কারো বেতন বন্ধ হবে, কারো পেনশন আটকে যাবে, কারো চাকরিটাও যাবে। এজন্য আপনারা সবাইকে (সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের) বলে দেন বাড়াবাড়ি না করে এক এমপিও (এক মাসের বেতন) দিতে, বাকিটা আমি ঠিক করে নেব। এরপর গভীর রাতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অডিটের নামে হরেক রকম নাস্তা ও ১০-১২ রকম খাবারের মধ্য দিয়ে আপ্যায়িত হয়ে আজব অডিট সম্পন্ন করেন। তিনি অডিটকালে ঘুষ কোথায় কোথায় ভাগাভাগি হবে সেটাও বলে গেছেন যা রেকর্ড আছে। বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা ঘুষ দিলেও পরে শিক্ষক সমাজে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র জানাজানি হয়। এতে নিজেকে বাঁচাতে তিনি (ড. এনামুল হক) ঘুষ নেননি মর্মে প্রত্যয়নে স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এসব অপকর্মে প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও সহযোগিতা করায় তারাও কিছু ভাগ পেয়েছেন যা নিরপেক্ষ তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে এই দুর্নীতিবাজের কাছ থেকে শিক্ষকদের রক্ত ঘামানো আয়ের টাকা আদায় করার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি। সে যত বড় ক্ষমতাধর হোক তাকে আইনের আওতায় আনতে যা যা করার করা হবে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বেরোবিতে স্বৈরাচারী দোসর ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ষড়যন্ত্রকারী এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

অডিটের নামে ১০ স্কুল থেকে অর্ধকোটি ঘুষ, টাকা ফেরাতে স্মারকলিপি

আপডেট সময় ০২:০৭:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

যশোরের মণিরামপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অডিটের নামে ১০ স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারীদের এক মাসের বেতন ঘুষ বাবদ অর্ধকোটি টাকা আদায়ের ঘটনার দুই বছর পরে ওই টাকা ফেরত চেয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) মণিরামপুর উপজেলার হাজরাকাঠি দারুল উলুম মহিলা আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা যশোরের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ স্মারকলিপি প্রদান করেন।

এতে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, বেসরকারি শিক্ষকদের পাঠদান ব্যতীত অন্যকোনো কাজে সম্পৃক্ততার সুযোগ নেই। ফলে দুর্নীতি-অনিয়ম করার মতো কোনো ক্ষেত্রও নেই। অথচ, ২০২২ সালের মার্চ মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অধীন ‘পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তা ড. এনামুল হক নামের এক কর্মকর্তা ‘মিনিস্ট্রি অডিটের’ নামে শিক্ষক-কর্মচারীদের নানাবিধ ভয় দেখিয়ে পুরো একমাসের বেতন ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন।

শিক্ষকরা আরও উল্লেখ করেন, অধিকাংশ বেসরকারি শিক্ষকরা যা বেতন পান তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। তারপরও মাস শেষে হাতে গোনা বেতনের টাকা উত্তোলন করে সংসারের কেনাকাটা, বাচ্চাদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ও ঋণের কিস্তি দেন। কিন্তু সেই টাকাগুলো জোরপূর্বক ঘুষ দিতে বাধ্য হয়ে অনেকেই অর্থনৈতিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এমনকি বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানানোর পরে ওই কর্মকর্তা ফের চাপ সৃষ্টি করে ‘আমরা ঘুষ দেয়নি মর্মে প্রস্তুত করা চিঠিতে’ স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরে দুদক ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করলেও খুব বেশি অগ্রসর হতে দেখা যায়নি। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থার লোক তদন্তে আসলে ওই কর্মকর্তার অনুসারীরা আমাদের পেনশন আটকে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অস্বীকার করাতে বাধ্য করেন। এসব ভয় উপেক্ষা করে যারা সত্য বলবেন তাদের সাক্ষী নেয়নি তদন্তকারীরা।

অভিযোগে বলা হয়, অডিট কর্মকর্তা অডিট করতে এসে ঘুষের ভাগ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নেতা এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও দেওয়া লাগে। যা অনেক শিক্ষক গোপনভাবে রেকর্ড করে। ওই কর্মকর্তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার শিক্ষকদের মাঝে জানতে পারেন, ড. এনামুলের স্ত্রী মহিলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এবং স্বামীর অবৈধ টাকার জোরে দুবার ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন। এছাড়াও সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের চাকরি নিয়ে দীর্ঘকাল ডিআইয়ের একই চেয়ারে বসে সারা দেশের শিক্ষকদের জিম্মি করে মিনিস্ট্রি অডিটের নামে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ওই টাকায় এলাকায় শত’ শত’ বিঘা আমের বাগান ও মৎস্য খামার, ঢাকায় একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন, নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার পাহাড় গড়েছেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, ওই সময় ড. এনামুলের ফেসবুকে সাবেক শিক্ষামন্ত্রীর সাথে তোলা ছবি দেওয়া ছিল। এতে সাধারণ শিক্ষকরা অবৈধ ক্ষমতার ভয়ে কোনো প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি। শিক্ষকরা অবিলম্বে তদন্তপূর্বক ঘুষের টাকা ফেরত পেতে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে মানবিক আবেদন জানিয়েছেন। অন্যথায়, কষ্টের বেতনের টাকা আদায়ে তাদের রাস্তায় নামা ব্যতীত কোন পথ খোলা থাকবে না বলেও উল্লেখ করেন।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের মার্চ মাসের শুরুতে যশোরের মণিরামপুর পৌর শহরের মণিরামপুর মহিলা আলিম মাদ্রাসা, হাজরাকাঠি মহিলা আলিম মাদ্রাসা, ডুমুরখালি দাখিল মাদ্রাসা, মনোহরপুর দাখিল মাদ্রাসা, বালিধা-পাঁচাকড়ি দাখিল মাদ্রাসা, রোহিতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাজীআলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দেলুয়াবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়ব্যয়, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে অডিট করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক ড. এনামুল হক। পরিদর্শনকালে ওই ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২০০ শিক্ষক-কর্মচারীর পুরো একমাসের বেতনের প্রায় অর্ধকোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ১২ মে দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সিলভিয়া ফেরদৌস ও আবুল কালামের নেতৃত্বে একটি দল শিক্ষাভবনে অভিযুক্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করেন।

এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, উনি (ড. এনামুল হক) যশোরে এসে একটি রেস্ট হাউজে উঠে ১০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানকে দেখা করতে বলেন। এরপর সরাসরি বলেন, আপনাদের অনেক ফাঁক-ফোকর আছে। প্রকৃত অডিট হলে কারো বেতন বন্ধ হবে, কারো পেনশন আটকে যাবে, কারো চাকরিটাও যাবে। এজন্য আপনারা সবাইকে (সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারীদের) বলে দেন বাড়াবাড়ি না করে এক এমপিও (এক মাসের বেতন) দিতে, বাকিটা আমি ঠিক করে নেব। এরপর গভীর রাতেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অডিটের নামে হরেক রকম নাস্তা ও ১০-১২ রকম খাবারের মধ্য দিয়ে আপ্যায়িত হয়ে আজব অডিট সম্পন্ন করেন। তিনি অডিটকালে ঘুষ কোথায় কোথায় ভাগাভাগি হবে সেটাও বলে গেছেন যা রেকর্ড আছে। বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা ঘুষ দিলেও পরে শিক্ষক সমাজে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র জানাজানি হয়। এতে নিজেকে বাঁচাতে তিনি (ড. এনামুল হক) ঘুষ নেননি মর্মে প্রত্যয়নে স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এসব অপকর্মে প্রতিষ্ঠান প্রধানরাও সহযোগিতা করায় তারাও কিছু ভাগ পেয়েছেন যা নিরপেক্ষ তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেকোনো মূল্যে এই দুর্নীতিবাজের কাছ থেকে শিক্ষকদের রক্ত ঘামানো আয়ের টাকা আদায় করার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি। সে যত বড় ক্ষমতাধর হোক তাকে আইনের আওতায় আনতে যা যা করার করা হবে।