রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার ৬নং কাফ্রিখাল ইউনিয়নের যাদবপুর নামক এলাকায় গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ইং আফরিন খাতুন নামের এক গৃহবধূর রহস্যময় আত্মহত্যার ঘটনায় ঘটে।
গত০৩/১২/২৪ ইং তারিখে রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এ একটি নালিশি মামলা দায়ের করেন নিহত আফরিনের নানি মোছাঃ নোরেজা বেগম। এ বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাদীপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবী রোকনুজ্জামান রোকন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়,মামলার ফরিয়াদী আফরিন খাতুন এর আপন নানী। আফরিন খাতুন ছোট বেলা থেকেই নানীর কাছে বিবাহের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত থাকতেন। ১নং আসামী আফরিনের স্বামী মোঃ মুরাদ হাসানের সহিত (ডিসিস্ট) আফরিন খাতুন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময় ১নং আসামীর সহিত দুই পরিবার সম্মত হয়ে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়ের পর হতেই ২নং আসামী নিহত আফরিনের শ্বশুড় ও ৩নং আসামী শ্বাশুড়ির প্ররোচনায় ১নং আসামী মুরাদ ডিসিস্ট এর বাবা-মায়ের নিকট থেকে প্রায় ২,০০,০০০/- টাকা যৌতুক এনে দেয়।
আসামীগণ যৌতুকের আরও টাকার জন্য সব সময় নিহত আফরিনকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতো। ঘটনার ৯ দিন আগে ১নং আসামী মুরাদ ডিটিস্ট এর নিকট ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা এবং একটা এন্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন ডিসিস্টের পিতার বাড়ী থেকে এনে দিতে হবে বলে দাবি করে। এ নিয়ে ১নং আসামী মুরাদের সহিত ভয়ংকর ঋগড়া ঝাটি হয়ে যায় এবং ডিসিস্টকে “মারধর করে” ডিসিস্টকে উক্ত টাকা ও মোবাইল ফোন তার বাবার বাড়ি থেকে এনে দিতে বলে। ডিসিস্ট মনের কষ্টে তাহার নানী ফরিয়াদীর নিকট এসে উক্ত ঘটনার বিস্তারিত খুলে বলে এবং ফরিয়াদী (নানী) আশ্বাস দেয় যে, ফরিয়াদী ঢাকায় গিয়ে তার পিতা-মাতার নিকট থেকে টাকা এবং মোবাইল ফোন এনে দেবেন এবং ডিসিস্টকে বুঝিয়ে ১নং আসামীর বাড়ীতে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে ফরিয়াদী গত ০১/১১/২০০৪ইং ঢাকায় রওনা দেন। ঢাকায় ফরিয়াদী ডিসিস্টের পিতা-মাতার বাড়ীতে অবস্থান করাকালে ঘটনার দিন ১০/১১/২৪ইং তারিখে দুপুর ১.৪৬ মিনিটে ডিসিস্ট আফরিন খাতুন ১নং আসামী মুরাদের মোবাইল থেকে ফরিয়াদীর মোবাইল ফোনে ফোন করে ডিসিস্ট এর উপর টাকা এবং মোবাইল ফোনের জন্য শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের কথা বর্ণনা করে। এক পর্যায়ে ডিসিস্টের কথা বলার সময় ১নং আসামী ডিসিস্ট এর নিকট হইতে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে ফোন কেটে দেয়। পরবর্তী সময় সন্ধ্যা অনুমান ৬.৫৭ মিনিটে ফরিয়াদীর মোবাইলে ডিসিস্ট স্বামী মুরাদের ফোন থেকে ফরিয়াদীকে ফোন করে জানায় ডিসিস্ট আফরিন খাতুন মৃত্যুবরণ করেছে গলায় ফাঁস দিয়ে। উক্ত সময়ে ডিসিস্ট এর পিতাকেও ডিসিস্টের স্বামীর মোবাইল ফোন থেকে তার ছোট ভাই ডিসিস্টের দেবর মারুফ ফোন দিয়ে আফরিনের মৃত্যুর খবর জানায়। এখবর শোনামাত্র ডিসিস্ট এর পিতা-মাতা সহ ফরিয়াদী ঢাকা হতে রওনা দেন এবং ভোর বেলায় মিঠাপুকুর থানার সামনের রাস্তা নেমে তাহারা দেখতে পান ডিসিস্টকে একটি গাড়ীতে শোয়ানো অবস্থায় রাখা আছে। শরীরে ঢাকা দেওয়া কাপড় সরিয়ে ফরিয়াদীর পিতা-মাতা ডিসিস্ট আফরিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন বিশেষ করে, বাম স্তনের নিচে গোলাকার জখম, ডান কাধের নিচে পিঠে জখম ও গলার দুপাশে নখ বসানো আঘাতের চিহ্ন রয়েছে দেখতে পান। সেখানে কর্মরত পুলিশ ফরিয়াদীকে জানায় তাহার নাতনী আফরিন মিঠাপুকুর থানাধীন ৬নং কাফ্রিখাল ইউনিয়নের যাদববপুর পশ্চিম পাড়ায় তাহার স্বামীর বাড়ীর দোচালা টিনের ঘরের তীরের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আফরিনের এর লাশ তীরের পাথে ঝুলানো অবস্থায় পায় নাই। ডিসিস্ট এর লাশ বিছানায় শোয়ানো অবস্থায় পেয়েছে এবং স্বজনরাও শোয়ানো অবস্থায় দেখেছে। পরবর্তীতে ফরিয়াদী ১নং আসামী ডিসিস্টের স্বামী মুরাদ, ২নং আসামী শ্বশুর ও ৩নং আসামী শ্বাশুরি মিলে শারীরিক ও মানসিক
নির্যাতন করে আফরিনকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় হত্যার জন্য থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানা অভিযোগ না নিয়ে “অপমৃত্যু সংক্রান্তে অবহিত করন প্রসঙ্গে” মিঠাপুকুর থানায় অপমৃত্যুর মামলা করাতে বাধ্য করেন। যাহার স্মারক নং- ৫৫১১(২), তারিখ- ১১/১১/২০২৪ ইং। থানায় বারবার আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে গেলেও থানা কর্তৃপক্ষ মামলা গ্রহণ করেন নাই। ফরিয়াদী বাধ্য হইয়া বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করিতে কিছুটা বিলম্ব করেন আসামীগনের বিরুদ্ধে The penal code 1860 এর ৩০৯/৩৪ ধারায় অভিযোগ আমলে নিয়া আসামীগণের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা ইস্যু করে আসামিদের গ্রেফতার করে বিচারের নালিশ করলে বিজ্ঞ আদালত নালিশটি আমলে নিয়ে সিআইডি কে তদন্তের আদেশ দেন।