নীতিমালা অনুযায়ী একই ব্যক্তির একসঙ্গে সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ নেই। কিন্তু তিনি নিয়ম না মেনে দায়িত্ব পালন করছেন দুটি প্রতিষ্ঠানেই। তথ্য গোপন করে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া এ ব্যক্তির নাম সোহাগ হাওলাদার। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ের অফিস সহায়ক পদেও কর্মরত সোহাগ। তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কাজুলিয়া গ্রামের আওলাদ হোসেন হাওলাদারের ছেলে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ নভেম্বর অফিস সহায়ক পদে যোগদান করেন সোহাগ। বর্তমানে তিনি ডিসি অফিসের রেকর্ড রুমে কর্মরত। গত ২০ জুন কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে ৪ জুলাই যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি নিয়মিত অফিস করছেন।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকলেও সিটি করপোরেশনে চাকরির আবেদনে তা গোপন করেছেন সোহাগ। জনবল নিয়োগ পরীক্ষার ফল এবং এ-সংক্রান্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ২০১৯-এর বিধি ৪ ও ৬ অনুযায়ী চলতি বছরের ১৩ মে পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক পদে নিয়োগ পান সোহাগ। ২৭ জনের সঙ্গে পাওয়া নিয়োগ আদেশে তার ক্রমিক নম্বর ৯। ডিএসসিসির তৎকালীন সচিব আকরামুজ্জামান ওই নিয়োগ আদেশে স্বাক্ষর করেন।
এরপর ২ জুন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক পদে ডিএসসিসিতে যোগদান করেন সোহাগ। ডিএসসিসির অঞ্চল-২-এর আওতাধীন ২ নম্বর ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক পদে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। গত ৭ জুলাই থেকে তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত।
গত ২৪ জুলাই অঞ্চল-২-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আবু তাহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো এক পত্রে জানান, ‘পারিবারিক কারণ দেখিয়ে গত ৪ থেকে ৭ জুলাই তিন দিনের ছুটিতে যান সোহাগ। ছুটি শেষে কর্মস্থলে উপস্থিত না হলে তার মোবাইল ফোনে কারণ জানতে চাওয়া হলে তিনি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত বলে জানান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে শারীরিক সুস্থতা সম্পর্কে জানার জন্য তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনোভাবেই তা সম্ভব হয়নি। তিনি বর্তমানে নিজ কাজে অনুপস্থিত।’
ডিএসসিসির অঞ্চল-২-এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আবু তাহের বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক সোহাগ হাওলাদার কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কমকর্তাদের জানানো হয়েছে।’
জানতে চাওয়া হলে সরকারি দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরির কথা স্বীকার করে সোহাগ হাওলাদার কালবেলাকে বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশনের চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। পারিবারিক কারণ দেখিয়ে গত ১৮ আগস্ট স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের আবেদন জমা দিয়েছি।’
একসঙ্গে দুই চাকরি ও সিটি করপোরেশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসসিসির অঞ্চল-২-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আপনার মাধ্যমেই জানতে পারলাম। পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক পদে কেউ চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন—এমনটি এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। নথিপত্র দেখে বলতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সুযোগ নেই। যদি এমনটি করে থাকেন, অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে কথার বলার জন্য গতকাল বুধবার বিকেলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান ও প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাছিম আহমেদের কার্যালয়ে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে দুজনের নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়।