ঢাকা ১১:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুকুরের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়া সেই তরুণ দাসকে হাত-পা বেঁধে হত্যা

নাটোরের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে তরুণ কুমার দাস। তিনি ওই শ্মশানের পাহারাদার নয়, মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে ছিলেন। তিনি মাঝে মধ্যে কুকুরের সঙ্গে খেলা ও খাবার ভাগাভাগি করে খেতেন।

শনিবার সকালে নাটোরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে তরুণ কুমার দাসের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার হত্যা রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। খুব দ্রুত হত্যাকারীরা আইনের আওতায় আসবে বলে আশা করছে পুলিশ।

তরুণ কুমার দাস শহরের আলাইপুর ধোপাপাড়া এলাকার কালীপদ দাসের ছেলে।

কয়েকটি গণমাধ্যমে তাকে মন্দির ও মহাশ্মশানের সেবায়েত বা পাহারাদার বলা হয়েছে। তবে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলেছেন, তিনি ছিলেন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন একজন ভবঘুরে।

কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানের সাধারণ সম্পাদক সত্য নারায়ণ রায় টিপু বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাস ভবঘুরে জীবন যাপন করতেন। প্রায় প্রতিরাতে মহাশ্মশানের রান্নাঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকতেন। নাটোর পৌরসভার অর্থায়নে শ্মশানে চারজন কর্মচারী নিয়োজিত থাকলেও তরুণ দাস শ্মশানে কর্মরত কেউ ছিলেন না। শনিবার রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মহাশ্মশানে ঢুকে ভবঘুরে তরুণ দাসকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করে ভাণ্ডার কক্ষ থেকে কাঁসার পাতিল, গামলাসহ কাঁসা এবং পিতলের কিছু মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তরুণ দাসকে অনেক বার শ্মশানে রাত্রিযাপন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি, কিন্তু তিনি শোনেননি, নিজের মতো করে তিনি জীবন যাপন করতেন।

নিহতের ভাই প্রদীপ দাস জানান, তরুণ মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিল।

তার ছেলে তপু কুমার দাস বলেন, বাড়িতে বাবা আসতেন, অনেকদিন দুপুরের খাবার খেতেন, তার প্রিয় নাতনি ছোট্ট তিন্নির সঙ্গে খেলতেন, চলে যেতেন। শীতের রাতে শ্মশানের বারান্দায় রাত কাটানোর ব্যাপারে বাবা বলতেন, তার শীত লাগে না। ওই এলাকার সবাই তাকে শ্মশান বাবু নামেই জানতেন। তিনি ছিলেন সংসার ত্যাগী।

নাটোর পৌরসভার প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাকে নাটোর শহরের সব মানুষই চিনত। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আবোল-তাবোল বক্তৃতা দিতে দেখেছি তাকে। মাঝে মাঝেই কুকুরের সঙ্গে খেলা করা, কুকুরের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়ার ঘটনাও আমরা সবাই দেখেছি। হত্যাকাণ্ডের পরে কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণকে শ্মশানের পাহারাদার, আবার কেউ কেউ সেবায়েত, আবার পুরোহিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নাটোরের কাশিমপুর মহাশ্মশানে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তরুণ দাসকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে তাকে মন্দিরের দেখভাল ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বলে উল্লেখ করলেও এই সংগঠনের নাটোর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট খগেন্দ্র নাথ রায় বলেছেন, বিবৃতিতে তরুণের পরিচয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথকে বিবৃতি সংশোধন করার জন্যও তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কাশিমপুর মহাশ্মশানটি এতটা নির্জন এলাকায় নাইটগার্ড থাকলেও চুরি বা ডাকাতির উদ্দেশ্যে কেউ আসলে তার ভাগ্যেও তরুণের মতো ঘটনাই ঘটতো।

রোববার বিকালে নাটোর সদর থানার ওসি মো. মাহাবুর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তদন্তের জন্য রাজশাহী থেকে সিআইডি এবং ক্রাইমসিন ইউনিট এসেছে। জেলা পুলিশও কাজ করছে।

নাটোরের পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইন বলেছেন, আসামিদের চিহ্নিত করে খুব দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো বলে আশা করছি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

কুকুরের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়া সেই তরুণ দাসকে হাত-পা বেঁধে হত্যা

আপডেট সময় ০৭:৪৯:৩২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

নাটোরের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে তরুণ কুমার দাস। তিনি ওই শ্মশানের পাহারাদার নয়, মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে ছিলেন। তিনি মাঝে মধ্যে কুকুরের সঙ্গে খেলা ও খাবার ভাগাভাগি করে খেতেন।

শনিবার সকালে নাটোরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে তরুণ কুমার দাসের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার হত্যা রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে পুলিশ। খুব দ্রুত হত্যাকারীরা আইনের আওতায় আসবে বলে আশা করছে পুলিশ।

তরুণ কুমার দাস শহরের আলাইপুর ধোপাপাড়া এলাকার কালীপদ দাসের ছেলে।

কয়েকটি গণমাধ্যমে তাকে মন্দির ও মহাশ্মশানের সেবায়েত বা পাহারাদার বলা হয়েছে। তবে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বলেছেন, তিনি ছিলেন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন একজন ভবঘুরে।

কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানের সাধারণ সম্পাদক সত্য নারায়ণ রায় টিপু বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাস ভবঘুরে জীবন যাপন করতেন। প্রায় প্রতিরাতে মহাশ্মশানের রান্নাঘরের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকতেন। নাটোর পৌরসভার অর্থায়নে শ্মশানে চারজন কর্মচারী নিয়োজিত থাকলেও তরুণ দাস শ্মশানে কর্মরত কেউ ছিলেন না। শনিবার রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা মহাশ্মশানে ঢুকে ভবঘুরে তরুণ দাসকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করে ভাণ্ডার কক্ষ থেকে কাঁসার পাতিল, গামলাসহ কাঁসা এবং পিতলের কিছু মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তরুণ দাসকে অনেক বার শ্মশানে রাত্রিযাপন না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি, কিন্তু তিনি শোনেননি, নিজের মতো করে তিনি জীবন যাপন করতেন।

নিহতের ভাই প্রদীপ দাস জানান, তরুণ মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিল।

তার ছেলে তপু কুমার দাস বলেন, বাড়িতে বাবা আসতেন, অনেকদিন দুপুরের খাবার খেতেন, তার প্রিয় নাতনি ছোট্ট তিন্নির সঙ্গে খেলতেন, চলে যেতেন। শীতের রাতে শ্মশানের বারান্দায় রাত কাটানোর ব্যাপারে বাবা বলতেন, তার শীত লাগে না। ওই এলাকার সবাই তাকে শ্মশান বাবু নামেই জানতেন। তিনি ছিলেন সংসার ত্যাগী।

নাটোর পৌরসভার প্রকৌশলী মোস্তফা কামাল বলেন, মানসিক ভারসাম্যহীন তরুণ দাকে নাটোর শহরের সব মানুষই চিনত। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আবোল-তাবোল বক্তৃতা দিতে দেখেছি তাকে। মাঝে মাঝেই কুকুরের সঙ্গে খেলা করা, কুকুরের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করে খাওয়ার ঘটনাও আমরা সবাই দেখেছি। হত্যাকাণ্ডের পরে কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণকে শ্মশানের পাহারাদার, আবার কেউ কেউ সেবায়েত, আবার পুরোহিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নাটোরের কাশিমপুর মহাশ্মশানে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ তরুণ দাসকে হত্যার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দেওয়া বিবৃতিতে তাকে মন্দিরের দেখভাল ও নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত বলে উল্লেখ করলেও এই সংগঠনের নাটোর জেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট খগেন্দ্র নাথ রায় বলেছেন, বিবৃতিতে তরুণের পরিচয়কে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথকে বিবৃতি সংশোধন করার জন্যও তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, কাশিমপুর মহাশ্মশানটি এতটা নির্জন এলাকায় নাইটগার্ড থাকলেও চুরি বা ডাকাতির উদ্দেশ্যে কেউ আসলে তার ভাগ্যেও তরুণের মতো ঘটনাই ঘটতো।

রোববার বিকালে নাটোর সদর থানার ওসি মো. মাহাবুর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তদন্তের জন্য রাজশাহী থেকে সিআইডি এবং ক্রাইমসিন ইউনিট এসেছে। জেলা পুলিশও কাজ করছে।

নাটোরের পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইন বলেছেন, আসামিদের চিহ্নিত করে খুব দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারবো বলে আশা করছি।