জুলাইয়ের ছাত্রগণঅভ্যুত্থানের শহীদেরা এখনো আমাদের রক্তক্ষরিত হৃদয়ের টাটকা স্মৃতি। তারপর ধীরে তারা ঠাঁই পাবে জাতীয় ইতিহাসের পাতায়। এ সময়ে দৈনিক আমার দেশের পুনঃপ্রকাশ। এ পত্রিকা ঘিরে দেশপ্রেমিক মানুষের আশা-আকাঙ্খা বিপুল। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায় একটা মস্ত ভুল হয়ে গিয়েছিল। শহিদদের চিত্রায়ন থেকে চট্টগ্রামের বীর শহিদ ওয়াসিমের ফটো বাদ পড়ে গিয়েছিল।
আমার দেশ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। তারা ভুলটি ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুধরে নিয়েছেন দ্বিতীয় সংস্করণে। কোনো ইগো দেখাননি। এই শুধরে নেওয়ায় আমার মনে হয়েছে, এটা ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা নয়। ভুলই ছিল। ভুল শোধরানো মহত্ত্ব। এই মহত্ত্বের জন্য তাদেরকে ক্ষমা করা যায় বলে আমি অন্তত মনে করি।
এই ঘটনায় আবেগসঞ্জাত যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল আমি তার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। তাদের অনেকে চটজলদি সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন আমার দেশ বয়কটের। আমি এই বয়কটের ডাকের সঙ্গে একাত্ম নই। একটা ভুলই বয়কটের মতো চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। তাছাড়া এই বয়কটের ডাকের পেছনে আবেগ যেমন আছে তেমনই আছে হুজুগ। আবার কোনো কোনো মতলববাজও জুটে গেছে মওকা বুঝে তাল মেলাতে। আবেগকে আমি সম্মান করি কিন্তু হুজুগ ও মতলববাজি প্রত্যাখ্যান করি। আমি সময়ের কষ্টিপাথরে যাচাই করে আমার দেশ-এর ভূমিকা মূল্যায়নের পক্ষে।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে আমার নৈকট্য অনেকদিনের। তবে তার সঙ্গে আমার চিন্তার দূরত্ব আছে। ছাত্রজীবনে বামঘেঁষা মাহমুদ ভাই এখন চিন্তার দিক থেকে যথেষ্ট দক্ষিণপন্থী। তার এই চিন্তার রকমফের কোনো স্বার্থের কারণে নয়, এটা স্বতঃস্ফূর্ত ও অভিজ্ঞতাপ্রসূত। আমি নিজে মধ্যপন্থী ভাবনার মানুষ। চিন্তার এই দূরত্ব সত্ত্বেও আমি মাহমুদ ভাইকে শ্রদ্ধা করি তার সাহস, ত্যাগ, দেশপ্রেম ও সততার কারণে। আমি বিশ্বাস করি, মাহমুদ ভাইকে কোনো দলীয় বা গোষ্ঠীগত দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি বিবেকতাড়িত মানুষ। নিজে যা সত্য ও ন্যায় বলে মনে করবেন, তার পক্ষেই দাঁড়াবেন, ঝুঁকি নিয়ে লড়বেন। মানুষ হিসেবে তারও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল হতে পারে কিন্তু কোনো মতলববাজি হাসিলের জন্য তিনি কখনো কিছু করবেন না।
আমার দেশ-এর পুনঃপ্রকাশকে স্বাগত জানাই। মাহমুদ ভাইয়ের জন্য অনেক শুভকামনা।
মারুফ কামাল খান: সাংবাদিক ও লেখক; বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেসসচিব