ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান শেখ হাসিনা পালানোর এক মাস পেরোলেও দেশে রয়ে গেছে তার অনেক দোসোর। তেমনি শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এক কর্মকর্তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার মুস্তাফিজুর রহমান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের অন্যতম হোতা তিনি। তার ভূমিকার বর্তমানে এই সিন্ডিকেট খুবই সক্রিয়।
জনশ্রুতি আছে, শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ার কারণে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভোলা ও নোয়াখালী জেলায় ডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। জেলা পর্যায়ে বিরোধীদল এবং নিপীড়নের খড়গ চালানোর পুরস্কার হিসেবে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এই কর্মকর্তাকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়। জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে কর্মকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে রাষ্ট্রযন্ত্রকে দিলীয়করণ থেকে শুরু করে বিএনপি, জামায়াত ইসলামি, অন্যান্য ইসলামিক চিন্তা চেতনার দল এবং মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বহু মানুষের জীবন, পরিবার ধ্বংস করেছেন। সরকার বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলনে তার অধীন জুনিয়র এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ কর্মকর্তারা বিএনপি, জামায়াত ইসলামি, ছাত্রজনতার আন্দোলনকে নিষ্ঠুরতার সাথে দমন করেন।
খন্দকার মুস্তাফিজুর রহমানের কর্মকালীন সময়ে অত্র অঞ্চলে ভিন্নমতের মানুষেরা মুখ খোলার সাহস তো দূরের কথা, সব সময় আতঙ্ক/ভয়ের মধ্যে দিন পার করতে হয়েছে। নোয়াখালী জেলার ডিসি হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তার অত্যাচার, নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র অত্র অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি তৎকালীন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কাছ থেকে জানা যায়। তার স্বৈরচারী সরকারের দোসর এই কর্মকর্তা শেখ হাসিনার ক্ষমতা দেখিয়ে অত্যন্ত লোভনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পদ বাগিয়ে নিয়ে হেন অপকর্ম করেনি। সব নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বেআইনি ভাবে অত্যন্ত লোভনীয় মূল্যবান দুইটি প্লট এবং একটি ফ্ল্যাট বাগিয়ে নিয়েছেন, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ (বিশ) কোটি টাকা। অভিযোগ আছে, পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক নিয়োগ পান। মাদক অধিদপ্তরে যোগদানের পর তিনি দুর্নীতির একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তবে স্বৈরচারী সরকারের পতনের সাথে সাথেই ভোল পালটে নিজেকে বিএনপি, জামায়াতের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেয়া শুরু করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি স্বৈরচারী সরকারের দোসর এই কর্মকর্তা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন। প্রাইজ পোস্টিং এর কথা বলে প্রায় পনেরো কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। যারা টাকা দিয়েছেন তারা নিজেদের পছন্দের জায়গায় পোস্টিং এর জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। যার সুষ্ঠু নিরপেক্ষ তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন। এছাড়াও তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে যোগদানের পর সরকারি টাকার অপচয় করে বিভিন্ন কর্মকর্তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে টুংগিপাড়ায় শেখ মুজিবর রহমানের মাজার জিয়ারতসহ বিরাট বড় অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। অধিদফতরের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা পাওয়া যাবে। সেদিন তিনি ৫০/৬০ টা সরকারি গাড়ির বহরযোগে শেখ মুজিবুর রহমানের কবর জিয়ারত করতে যান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ডিজি হিসেবে যোগদান করার পরই তার নানা কার্যকলাপে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এতদিন কেউ কথা বলতে না পারলেও এখন সরকার পরিবর্তনে কর্মকর্তা কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। প্রধান উপদেষ্টা বরাবরে এক আবেদনে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তার বিচার দাবি করেছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক খন্দকার মুস্তাফিজুর রহমান দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক নয়। তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে।