ঢাকা ০১:২৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
মানবজাতির মুক্তির দিশারি মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আবুল হাশেম বক্কর বি আর টি সির চেয়ারম্যানের অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে আমাদেরকে সচেতন হতে হবে সেমিনারে অধ্যাপক ডা. এম এ হাসান চৌধুরী ভুয়া ঠিকানায় নিরাপত্তা ছাড়পত্রের চেষ্টা গণপূর্তের প্রকৌশলী রাজু আহমেদের পটুয়াখালীতে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ২০ দিন কারাদন্ড অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে পটুয়াখালী সদর উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত একমঞ্চে গাইবেন আতিফ আসলাম ও তাহসান ভোজ্যতেলে ভ্যাট ছাড় দিল এনবিআর শেখ হাসিনাকে ফেরাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সরকার রাকুলের পোশাকটি কেমন হবে, পরামর্শ দিতেন বাবা

সোনালু গাছের হলুদ ফুল গৌরীপুরের প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে

চৈত্রের খরতাপে পুড়ে পাতা ঝরিয়ে প্রকৃতি যখন মুড়িয়ে যায় তার পরই গ্রীষ্মের শুরুতেই পথে হেঁটে যেতে পথের পাশে হলুদ ফুলের শোভায় নজর আটকায় পথিকের। সোনালু গাছে হলুদ ফুলের ঝরনা দেখে মন ভরে যায়। মনে হয় প্রতিটি গাছের গা থেকে হলুদ ঝরনা নেমে এসেছে। সোনাঝরা এই পাঁচ পাপড়িওয়ালা ফুলের নাম সোনালু। কিশোরীর কানের দুলের মতো বৈশাখী হাওয়ায় দুলতে থাকে হলুদ রঙের থোকা থোকা ফুল।

গ্রীষ্মকালে প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে ফোটে সোনালু ফুল। হলুদবরণ সৌন্দর্যে যেন মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশের পরিবেশ।

সোনালু পাতাঝরা মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ। এটি আট থেকে নয় মিটার উঁচু হয়। হলুদবরণ এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আছে তার বাহারি নামও। পরিচিত নামগুলো হলো সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি ইত্যাদি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। ইংরেজি নাম- এড়ষফবহ ঝযড়বিৎ ঞৎবব, বৈজ্ঞানিক নাম- ঈধংংরধ ভরংঃঁষধ। হাজার বছর আগেও এ গাছ আমাদের উপমহাদেশে ছিল। এ গাছের সেরা বৈশিষ্ট্য হলো ঝাড় লণ্ঠনের মতো দীর্ঘ মঞ্জরি এবং উজ্জ্বল হলুদ ফুল। এ গাছের আদি নিবাস হলো ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। সোনালু গাছ শাখা-প্রশাখা নিবিড় নয়। এর বাকল ধূসর, ম্লান এবং মসৃণ। পাতা যৌগিক, একপক্ষ এবং জোড়পক্ষ, পত্রক বড়, ডিম্বাকৃতি, বর্ণ গাঢ় সবুজ। গ্রীষ্মের শুরুতেই পাতা গজায় এবং প্রথম বৃষ্টিতে ফুল ফোটার পরপরই কচি সবুজ পাতায় শাখা-প্রশাখায় গাছ ভরে উঠে। ফুল প্রায় এক ইঞ্চি চওড়া, পাপড়ি পাঁচটি, পুংকেশর দশটি। একমাত্র স্ত্রী কেশরটি কাস্তের মতো বাঁকা, রং সবুজ, ফুল সুগন্ধযুক্ত। সোনালুর ফল এক থেকে দেড় ফুট লম্বা, লাঠির মতো শক্ত। ফল কচি অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে কালো রঙের হয়। ফলের ভেতরের দেওয়ালে তেঁতুলের মজ্জার মতো মজ্জা থাকে। ফুল, ফল ও পাতা বানরের খুব প্রিয়। সোনালু কাঠের রং ইটের মতো লাল। ঢেঁকি, সাঁকো বানানোর কাজেও কাঠ ব্যবহার করা হয়। সোনালু গাছের বাকল এবং পাতায় ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এ গাছের বাকল এবং পাতার ধহঃরনধপঃবৎরধষ, ধহঃরড়ীরফধহঃ, যবঢ়ধঃড়ঢ়ৎড়ঃবপঃরাব, যুঢ়ড়মষুপবসরপ, যবঢ়ধঃড়ঢ়ৎড়ঃবপঃরাব গুণাগুণ রয়েছে। মহাকবি ব্যাস ও কালিদাস এই ফুলের গুণকীর্তন করেছেন।

সোনালু গাছের নয়নাভিরাম হলুদ রঙের ফুল যেমন সবার নজর কাড়ে, তেমনি এর ভেষজ গুণ শরীর ভালো রাখতেও বেশ ভূমিকা রাখে।

ব্লাডপ্রেসারে নাক দিয়ে রক্ত পরলে সোনালুর ফলমজ্জা আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে তা ছেঁকে চিনি বা মধু দিয়ে পান করলে এই সমস্যার সমাধান হয়। অন্ত্রের সমস্যায় ৪/৫ গ্রাম ফলমজ্জা ৪কাপ পানিতে সেদ্ধ করে ছেঁকে সকালে ও বিকালে পান করলে সুবিধা পাওয়া যায়। কোষ্ঠ্যকাঠিন্যও দূর হয়। প¯্রাবে খুব বেশি দুর্গন্ধ হলে এক চামচ সোনালু পাতার রস ৪/৫ চামচ গরম পানি মিশিয়ে খেলে সমস্যা সমাধান হয়। এই পাতা বেটে অল্প ঘি দিয়ে ক্ষত স্থানে লাগালে ক্ষতের ব্যথা দূর হয়। গলা বা ঘাড়ে ব্যথা বা লসিকা গ্রন্থিতে কোনো সমস্যা হলে মূলের ছাল বেটে লাগালে বা গরম পানিতে দিয়ে ভ্যাপার নিলে বেশ কাজে দেবে। সোনালু গাছের বাকল ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগে ব্যবহৃত হয়।

সোনালু গাছ নিজেই বেড়ে ওঠে অযতেœ অবহেলায়। নীরবে বেড়ে ওঠে, থাকেও নিষ্প্রাণ নির্ঝঞ্ঝাটভাবে। গ্রীষ্মে ফুল ফুটলে কারও সাধ্য নেই এই গাছকে এড়িয়ে যাবার। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় এই গাছটি দেখা যায়। সৌন্দর্য বর্ধনেও এই গাছ নজরে পরে বিভিন্ন পার্কে ও রাস্তার পাশে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

মানবজাতির মুক্তির দিশারি মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আবুল হাশেম বক্কর

সোনালু গাছের হলুদ ফুল গৌরীপুরের প্রকৃতিতে শোভা ছড়াচ্ছে

আপডেট সময় ১১:২২:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ জুন ২০২৩

চৈত্রের খরতাপে পুড়ে পাতা ঝরিয়ে প্রকৃতি যখন মুড়িয়ে যায় তার পরই গ্রীষ্মের শুরুতেই পথে হেঁটে যেতে পথের পাশে হলুদ ফুলের শোভায় নজর আটকায় পথিকের। সোনালু গাছে হলুদ ফুলের ঝরনা দেখে মন ভরে যায়। মনে হয় প্রতিটি গাছের গা থেকে হলুদ ঝরনা নেমে এসেছে। সোনাঝরা এই পাঁচ পাপড়িওয়ালা ফুলের নাম সোনালু। কিশোরীর কানের দুলের মতো বৈশাখী হাওয়ায় দুলতে থাকে হলুদ রঙের থোকা থোকা ফুল।

গ্রীষ্মকালে প্রকৃতিতে প্রাণের সজীবতা নিয়ে ফোটে সোনালু ফুল। হলুদবরণ সৌন্দর্যে যেন মাতোয়ারা করে রাখে চারপাশের পরিবেশ।

সোনালু পাতাঝরা মাঝারি আকৃতির বৃক্ষ। এটি আট থেকে নয় মিটার উঁচু হয়। হলুদবরণ এ ফুল দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি আছে তার বাহারি নামও। পরিচিত নামগুলো হলো সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল, বান্দরলাঠি ইত্যাদি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। ইংরেজি নাম- এড়ষফবহ ঝযড়বিৎ ঞৎবব, বৈজ্ঞানিক নাম- ঈধংংরধ ভরংঃঁষধ। হাজার বছর আগেও এ গাছ আমাদের উপমহাদেশে ছিল। এ গাছের সেরা বৈশিষ্ট্য হলো ঝাড় লণ্ঠনের মতো দীর্ঘ মঞ্জরি এবং উজ্জ্বল হলুদ ফুল। এ গাছের আদি নিবাস হলো ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। সোনালু গাছ শাখা-প্রশাখা নিবিড় নয়। এর বাকল ধূসর, ম্লান এবং মসৃণ। পাতা যৌগিক, একপক্ষ এবং জোড়পক্ষ, পত্রক বড়, ডিম্বাকৃতি, বর্ণ গাঢ় সবুজ। গ্রীষ্মের শুরুতেই পাতা গজায় এবং প্রথম বৃষ্টিতে ফুল ফোটার পরপরই কচি সবুজ পাতায় শাখা-প্রশাখায় গাছ ভরে উঠে। ফুল প্রায় এক ইঞ্চি চওড়া, পাপড়ি পাঁচটি, পুংকেশর দশটি। একমাত্র স্ত্রী কেশরটি কাস্তের মতো বাঁকা, রং সবুজ, ফুল সুগন্ধযুক্ত। সোনালুর ফল এক থেকে দেড় ফুট লম্বা, লাঠির মতো শক্ত। ফল কচি অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে কালো রঙের হয়। ফলের ভেতরের দেওয়ালে তেঁতুলের মজ্জার মতো মজ্জা থাকে। ফুল, ফল ও পাতা বানরের খুব প্রিয়। সোনালু কাঠের রং ইটের মতো লাল। ঢেঁকি, সাঁকো বানানোর কাজেও কাঠ ব্যবহার করা হয়। সোনালু গাছের বাকল এবং পাতায় ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। এ গাছের বাকল এবং পাতার ধহঃরনধপঃবৎরধষ, ধহঃরড়ীরফধহঃ, যবঢ়ধঃড়ঢ়ৎড়ঃবপঃরাব, যুঢ়ড়মষুপবসরপ, যবঢ়ধঃড়ঢ়ৎড়ঃবপঃরাব গুণাগুণ রয়েছে। মহাকবি ব্যাস ও কালিদাস এই ফুলের গুণকীর্তন করেছেন।

সোনালু গাছের নয়নাভিরাম হলুদ রঙের ফুল যেমন সবার নজর কাড়ে, তেমনি এর ভেষজ গুণ শরীর ভালো রাখতেও বেশ ভূমিকা রাখে।

ব্লাডপ্রেসারে নাক দিয়ে রক্ত পরলে সোনালুর ফলমজ্জা আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে তা ছেঁকে চিনি বা মধু দিয়ে পান করলে এই সমস্যার সমাধান হয়। অন্ত্রের সমস্যায় ৪/৫ গ্রাম ফলমজ্জা ৪কাপ পানিতে সেদ্ধ করে ছেঁকে সকালে ও বিকালে পান করলে সুবিধা পাওয়া যায়। কোষ্ঠ্যকাঠিন্যও দূর হয়। প¯্রাবে খুব বেশি দুর্গন্ধ হলে এক চামচ সোনালু পাতার রস ৪/৫ চামচ গরম পানি মিশিয়ে খেলে সমস্যা সমাধান হয়। এই পাতা বেটে অল্প ঘি দিয়ে ক্ষত স্থানে লাগালে ক্ষতের ব্যথা দূর হয়। গলা বা ঘাড়ে ব্যথা বা লসিকা গ্রন্থিতে কোনো সমস্যা হলে মূলের ছাল বেটে লাগালে বা গরম পানিতে দিয়ে ভ্যাপার নিলে বেশ কাজে দেবে। সোনালু গাছের বাকল ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগে ব্যবহৃত হয়।

সোনালু গাছ নিজেই বেড়ে ওঠে অযতেœ অবহেলায়। নীরবে বেড়ে ওঠে, থাকেও নিষ্প্রাণ নির্ঝঞ্ঝাটভাবে। গ্রীষ্মে ফুল ফুটলে কারও সাধ্য নেই এই গাছকে এড়িয়ে যাবার। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় এই গাছটি দেখা যায়। সৌন্দর্য বর্ধনেও এই গাছ নজরে পরে বিভিন্ন পার্কে ও রাস্তার পাশে।