ঢাকা ০৬:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
নেত্রকোনায় কলেজ শিক্ষকের লাশ উদ্ধার, পুলিশ বলছে হত্যা লালমনিরহাটে কলা চাষে ঝুঁকছে চাষীরা। গরু চুরি করে ভূরিভোজন মাদারগঞ্জে সেই দম্পতিসহ তিনজনকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার মাধবপুরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মিলন মেলা ও আলোচনা সভা ঈশ্বরদীতে গভীর রাতে অসহায় ও শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করছেন, ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শহিদুল ইসলাম শহীদ। ৩০ লক্ষাধিক টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত: প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে : গোয়াইনঘাটে ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদ্বোধন ভোলা জেলার উন্নয়ন শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা বাধ্যতামূলক করা হবে : আমিনুল হক মহিলালীগ নেত্রী ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও এনজিওকর্মীকে প্রাণনাশের হুমকি

লালমনিরহাটে কলা চাষে ঝুঁকছে চাষীরা।

লালমনিরহাট জেলার চাষীরা কলা চাষে ঝুঁকছে। যার ফলে বাজার লোতে কলার আমদানি আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা হাটের দিনে কলা আনছেন দূরদূরান্ত থেকে। বিভিন্ন রকমের কলা উঠছে হটে। উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় বেড়েছে কলা চাষ।
বিভিন্ন কলা চাষকে কেন্দ্র করে জেলা সদরের বড়বাড়ী হাটে গড়ে উঠেছে কলা বেচাকেনার বিশাল হাট। এ হাটে সপ্তাহে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকার কলা বেচাকেনা হয়।
এখানকার কলা চলে যায় ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি বিভাগে। সপ্তাহে বুধবার ও শনিবার দুই দিন হাটবসে বড়বাড়ীতে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট, রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলাসহ বেশকিছু এলাকা থেকে চাষিরা কলা নিয়ে আসেন এ হাটে। গত প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে এ হাটে কলা বেচাকেনা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি হাটে পিকআপ ও ট্রাকযোগে কলা যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার বেশি। এছাড়াও স্থানীয় খুচরা ব্যবাসয়ীরা প্রায় পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকার মতো কলা বেচাকেনা করেন এ হাটে। রমজান মাসে একই পরিমাণ কলার দাম বেড়ে হয় প্রায় দেড়গুণ।
উল্লেখ্যযোগ্য, মালভোগ, চিনি চম্পা, মেহের, সাগর,রঙ্গিনসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের কলার চাষাবাদ করা হয় এলাকাগুলোতে। অনেকেই ধান, পাট, আলু, ভুট্টাচাষাবাদ না করে এখন কলা চাষ করে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। কলাতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার তেমনভাবে না করে অল্প খরছে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। তাই বিগত সময়ের চেয়ে এবারে উল্লেখযোগ্য হারে কলা চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা।
কলা চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাভজনক হওয়ায় তাদের মধ্যে কলাচাষে আগ্রহ বেড়েছে। তবে কলাচাষে কিছু সমস্যা আছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাজারে মালভোগ ও চিনি সম্পা কলার দাম বেশি হলেও বাগানে রোগের প্রাদুর্ভাব ও দেখা দেয় । অন্যদিকে চিনি চম্পা কলা গাছে রোগের প্রার্দুভাব কম হয়। এজন্য চিনি চম্পাকলা চাষ করছেন অনেকেই। দুই বিঘা জমিতে গত ১০ বছর থেকে কলাচাষ করে আসছেন বড়বাড়ি ইউনিয়নের বলিরাম গ্রামের চাষী জামাল (৪৮)। তিনি বলেন, ‘যে কলাবাগান বর্তমান রয়েছে তার, সেখানে এক সময় পটল আলুসহ অন্যান্য সবজির আবাদ করতে। সবজির আবাদ করার সময় ক্ষেতে সবসময়ই কাজ করতে হতো এবং খরচও বেশি পড়তো।আর সবজির বিভিন্ন সময় কমবেশি বিভিন্ন দাম পাওয়া যেত। এরপর সবজির আবাদ ছেড়ে ওই জমিতে কলার চাষ শুরু করেন। কলাচাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। লাভও বেশি বলে জানান তিনি। কলা চাষের পদ্ধতির বিষয়ে তিনি বলেন, জমি প্রস্তুত করে বিঘা প্রতি জমিতে ৩০০-৪০০টি চারা লাগানো যায়। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসে জমিতে চারা লাগানোর দু-একদিন পর সেচ দিতে হয়। এর ৩০-৪০ দিন পর মুঁচি (চারা) গজানো শুরু হলে ইউরিয়া সার দেওয়া হয়। ৩০-৩৫ দিন পর ডিএপি (ড্যাপ), পটাশ, জিংক ও বোরন সার দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে কীটনাশকও দেওয়া হয়। গাছে কলা আসতে ৯ থেকে ১০ মাস সময় লাগে বলে জানান, চাষী জামাল। তিনি আরো বলেন,কলা পরিপক্ক হতে আরও দুইমাসের মতো সময় লাগে। প্রথম বছর যেহেতু চারা থেকে গাছ হয় এজন্য কলা আসা ও পরিপক্ক হতে সময় লাগে। দ্বিতীয় বছর আটমাসের মধ্যে কলা বাজারজাতকরণ করা সম্ভব। প্রতি বিঘা থেকে প্রতি বছর ১ লক্ষ্যে থাকে ১ লক্ষ্যে ৩০ হাজার টাকা দামের কলা পাওয়া সম্ভব। আর প্রতি বিঘাতে খরচ পড়ে ২৫থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। একবার চারা রোপণ করলে ৪-৫ বছর পর্যন্ত জমিতে থাকে। কলা বিক্রি করে বছর শেষে একবারে মোটা টাকা পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা কিনে নিয়ে যান। আবার অনেক সময় নিজেরাই কলা হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। ১৭ শতক জমিতে কলা চাষ করে গত রমজানে ৫৫ হাজার টাকার কলা বিক্রি করেছেন কলা চাষী রুবেল(৩৫) । এবার তিনি বিক্রি করেছেন ৪৫ হাজার টাকার কলা। বর্তমানে তিনি চিনি চম্পাকলা চাষ করেছেন।
কলা কিনতে আসা ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম (৪৫) বলেন, কলা চাষীদের সঙ্গে রীতিমত পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। অনেক সময় চাষীদেরকে অগ্রিম টাকাও দিয়ে রাখি। প্রতিদিন একটি ট্রাকে ৬০০-৮০০ কাদি পর্যন্ত কলা ঢাকা পাঠাই। কলা বিক্রি করে চাষীরা লাভবান হলেও আমরা ব্যাপারীরা সেভাবে লাভবান হতে পারছি না। শ্রমিকের মজুরি থেকে ট্রাকভাড়া সব কিছুর দাম বেড়েছে।
২০০৮ সাল থেকে কলা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত লালমনিরহাট সদরের বড়বাড়ী ইউনিয়নের ঝগরীর বাজার গ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ (৪৫) বলেন, বড়বাড়ীহাটে আমার মতো ২৫-৩০ জন ব্যবসায়ী আছেন। প্রতি হাটে প্রায় ২০-২৫ ট্রাক কলা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। প্রতি ট্রাকে প্রায় দুই লাখ টাকার কলা থাকে। সে হিসাবে প্রায় ৪০-৫০ লাখ টাকার কলা যায়। এছাড়া স্থানীয় কিছু খুচরা ব্যবসায়ী প্রায় পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকার কলা বেচাকেনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতি হাটে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মতো কলা বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। এর সঙ্গে কিছু ভাড়া ও আনুষঙ্গিক টাকা যোগ হয়। সবকিছু বাদ দিয়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মতো লাভ থাকে।
বড়বাড়ী হাটের ইজারাদারের জানান, মৌসুমে প্রায় প্রতি সপ্তাহে ৫০-৬০ লাখ টাকার কলা কেনাবেচা হয় এ হাটে। প্রতি হাটে গড়ে ১৬-২০টি ট্রাক লোড হয়। একটি বড় ট্রাকে সর্বনিম্ন ৭০০ কাদি কলা ধরে। ছোট ট্রাকে ৪৫০ কাদি কলা ধরে। মৌসুমে এ হাটে লোড আনলোডের কাজ করেন অনেক শ্রমিক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইফুল আরিফিন প্রতিবেদক’কে বলেন,কলা বর্ষজীবী উদ্ভিদ।
কলা চাষে খরচ কম, ঝুঁকি ও রোগবালাই কম থাকায় লালমনিরহাটে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কলা চাষ। একবার কলা চারা রোপণ করলে তা কয়েক বছর পর্যন্ত জমিতে রাখা যায়। সেই সঙ্গে আবাদে পর্যাপ্ত লাভের কারনে জেলার চর আঞ্চলের জমিগুলোতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন জাতের কলা চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নেত্রকোনায় কলেজ শিক্ষকের লাশ উদ্ধার, পুলিশ বলছে হত্যা

লালমনিরহাটে কলা চাষে ঝুঁকছে চাষীরা।

আপডেট সময় ০৩:২১:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫

লালমনিরহাট জেলার চাষীরা কলা চাষে ঝুঁকছে। যার ফলে বাজার লোতে কলার আমদানি আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা হাটের দিনে কলা আনছেন দূরদূরান্ত থেকে। বিভিন্ন রকমের কলা উঠছে হটে। উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় বেড়েছে কলা চাষ।
বিভিন্ন কলা চাষকে কেন্দ্র করে জেলা সদরের বড়বাড়ী হাটে গড়ে উঠেছে কলা বেচাকেনার বিশাল হাট। এ হাটে সপ্তাহে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকার কলা বেচাকেনা হয়।
এখানকার কলা চলে যায় ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি বিভাগে। সপ্তাহে বুধবার ও শনিবার দুই দিন হাটবসে বড়বাড়ীতে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট, রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলাসহ বেশকিছু এলাকা থেকে চাষিরা কলা নিয়ে আসেন এ হাটে। গত প্রায় তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে এ হাটে কলা বেচাকেনা হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি হাটে পিকআপ ও ট্রাকযোগে কলা যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০-৬০ লাখ টাকার বেশি। এছাড়াও স্থানীয় খুচরা ব্যবাসয়ীরা প্রায় পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকার মতো কলা বেচাকেনা করেন এ হাটে। রমজান মাসে একই পরিমাণ কলার দাম বেড়ে হয় প্রায় দেড়গুণ।
উল্লেখ্যযোগ্য, মালভোগ, চিনি চম্পা, মেহের, সাগর,রঙ্গিনসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের কলার চাষাবাদ করা হয় এলাকাগুলোতে। অনেকেই ধান, পাট, আলু, ভুট্টাচাষাবাদ না করে এখন কলা চাষ করে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। কলাতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার তেমনভাবে না করে অল্প খরছে অধিক মুনাফা অর্জন করা যায়। তাই বিগত সময়ের চেয়ে এবারে উল্লেখযোগ্য হারে কলা চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা।
কলা চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লাভজনক হওয়ায় তাদের মধ্যে কলাচাষে আগ্রহ বেড়েছে। তবে কলাচাষে কিছু সমস্যা আছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাজারে মালভোগ ও চিনি সম্পা কলার দাম বেশি হলেও বাগানে রোগের প্রাদুর্ভাব ও দেখা দেয় । অন্যদিকে চিনি চম্পা কলা গাছে রোগের প্রার্দুভাব কম হয়। এজন্য চিনি চম্পাকলা চাষ করছেন অনেকেই। দুই বিঘা জমিতে গত ১০ বছর থেকে কলাচাষ করে আসছেন বড়বাড়ি ইউনিয়নের বলিরাম গ্রামের চাষী জামাল (৪৮)। তিনি বলেন, ‘যে কলাবাগান বর্তমান রয়েছে তার, সেখানে এক সময় পটল আলুসহ অন্যান্য সবজির আবাদ করতে। সবজির আবাদ করার সময় ক্ষেতে সবসময়ই কাজ করতে হতো এবং খরচও বেশি পড়তো।আর সবজির বিভিন্ন সময় কমবেশি বিভিন্ন দাম পাওয়া যেত। এরপর সবজির আবাদ ছেড়ে ওই জমিতে কলার চাষ শুরু করেন। কলাচাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। লাভও বেশি বলে জানান তিনি। কলা চাষের পদ্ধতির বিষয়ে তিনি বলেন, জমি প্রস্তুত করে বিঘা প্রতি জমিতে ৩০০-৪০০টি চারা লাগানো যায়। বিশেষ করে চৈত্র-বৈশাখ মাসে জমিতে চারা লাগানোর দু-একদিন পর সেচ দিতে হয়। এর ৩০-৪০ দিন পর মুঁচি (চারা) গজানো শুরু হলে ইউরিয়া সার দেওয়া হয়। ৩০-৩৫ দিন পর ডিএপি (ড্যাপ), পটাশ, জিংক ও বোরন সার দেওয়া হয়। মাঝেমধ্যে কীটনাশকও দেওয়া হয়। গাছে কলা আসতে ৯ থেকে ১০ মাস সময় লাগে বলে জানান, চাষী জামাল। তিনি আরো বলেন,কলা পরিপক্ক হতে আরও দুইমাসের মতো সময় লাগে। প্রথম বছর যেহেতু চারা থেকে গাছ হয় এজন্য কলা আসা ও পরিপক্ক হতে সময় লাগে। দ্বিতীয় বছর আটমাসের মধ্যে কলা বাজারজাতকরণ করা সম্ভব। প্রতি বিঘা থেকে প্রতি বছর ১ লক্ষ্যে থাকে ১ লক্ষ্যে ৩০ হাজার টাকা দামের কলা পাওয়া সম্ভব। আর প্রতি বিঘাতে খরচ পড়ে ২৫থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। একবার চারা রোপণ করলে ৪-৫ বছর পর্যন্ত জমিতে থাকে। কলা বিক্রি করে বছর শেষে একবারে মোটা টাকা পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা কিনে নিয়ে যান। আবার অনেক সময় নিজেরাই কলা হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। ১৭ শতক জমিতে কলা চাষ করে গত রমজানে ৫৫ হাজার টাকার কলা বিক্রি করেছেন কলা চাষী রুবেল(৩৫) । এবার তিনি বিক্রি করেছেন ৪৫ হাজার টাকার কলা। বর্তমানে তিনি চিনি চম্পাকলা চাষ করেছেন।
কলা কিনতে আসা ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম (৪৫) বলেন, কলা চাষীদের সঙ্গে রীতিমত পারিবারিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। অনেক সময় চাষীদেরকে অগ্রিম টাকাও দিয়ে রাখি। প্রতিদিন একটি ট্রাকে ৬০০-৮০০ কাদি পর্যন্ত কলা ঢাকা পাঠাই। কলা বিক্রি করে চাষীরা লাভবান হলেও আমরা ব্যাপারীরা সেভাবে লাভবান হতে পারছি না। শ্রমিকের মজুরি থেকে ট্রাকভাড়া সব কিছুর দাম বেড়েছে।
২০০৮ সাল থেকে কলা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত লালমনিরহাট সদরের বড়বাড়ী ইউনিয়নের ঝগরীর বাজার গ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ (৪৫) বলেন, বড়বাড়ীহাটে আমার মতো ২৫-৩০ জন ব্যবসায়ী আছেন। প্রতি হাটে প্রায় ২০-২৫ ট্রাক কলা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। প্রতি ট্রাকে প্রায় দুই লাখ টাকার কলা থাকে। সে হিসাবে প্রায় ৪০-৫০ লাখ টাকার কলা যায়। এছাড়া স্থানীয় কিছু খুচরা ব্যবসায়ী প্রায় পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকার কলা বেচাকেনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতি হাটে প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মতো কলা বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। এর সঙ্গে কিছু ভাড়া ও আনুষঙ্গিক টাকা যোগ হয়। সবকিছু বাদ দিয়ে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মতো লাভ থাকে।
বড়বাড়ী হাটের ইজারাদারের জানান, মৌসুমে প্রায় প্রতি সপ্তাহে ৫০-৬০ লাখ টাকার কলা কেনাবেচা হয় এ হাটে। প্রতি হাটে গড়ে ১৬-২০টি ট্রাক লোড হয়। একটি বড় ট্রাকে সর্বনিম্ন ৭০০ কাদি কলা ধরে। ছোট ট্রাকে ৪৫০ কাদি কলা ধরে। মৌসুমে এ হাটে লোড আনলোডের কাজ করেন অনেক শ্রমিক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইফুল আরিফিন প্রতিবেদক’কে বলেন,কলা বর্ষজীবী উদ্ভিদ।
কলা চাষে খরচ কম, ঝুঁকি ও রোগবালাই কম থাকায় লালমনিরহাটে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কলা চাষ। একবার কলা চারা রোপণ করলে তা কয়েক বছর পর্যন্ত জমিতে রাখা যায়। সেই সঙ্গে আবাদে পর্যাপ্ত লাভের কারনে জেলার চর আঞ্চলের জমিগুলোতে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন জাতের কলা চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করে যাচ্ছে।