বছর ঘুরে চলে এসেছে বর্ষা, বইছে সুবাতাস। নদী, খাল বিলে পানি। তাই উপজেলায় চলছে নৌকা তৈরির হিড়িক। চলছে পুরনো নৌকা মেরামতের কাজও। বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে মাদারীপুর শিবচরে ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকার কারিগররা। দিনরাত হাতুড়ি-বাটালের ঠুকঠুকানিতে মুখর শিবচরে নৌকা তৈরির হাট-বাজারগুলো। এক সময় নৌকা ছিল যোগাযোগের অন্যতম বাহন। বর্তমানে শুধু বর্ষাকালে নিম্নাঞ্চল ও বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের পারাপারে নৌকা ব্যবহার হয়।
জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌকা। চারদিকে বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়, তখন নৌকা, কলাগাছের ভেলা হয়ে ওঠে পারাপারের ভরসা। এ কারণে বিভিন্ন গ্রামে নৌকা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। বর্ষাকালে চরাঞ্চলের জনপদ পানিতে থৈ থৈ করে। ডুবে যায় রাস্তাঘাট, নদী-নালা, খাল-বিল। যাতায়াত করতে হয় নৌকায়। বর্ষাকালে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করেন ছোটবড় নৌকা। তাই বর্ষা মৌসুম আসলেই এ অঞ্চলে বেড়ে যায় নৌকার কদর।
শিবচরে মাদবরের চর কাঠপট্টির কারিগররা নৌকা তৈরিতে এখন বেশ ব্যস্ত। দিনরাত নৌকা তৈরি করছেন তারা। আসবাব ব্যবসায়ী তৈয়ব আলী বলেন, ‘আমি মাদবরের চর হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে কমদামি খাট, চৌকি, দরজা, জানালা তৈরি করি। আর বর্ষা এলে নৌকা বানাই। এ সময় আমার কারিগররা দম ফেলার সময় পায় না। প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার এই হাটে নৌকা বিক্রি করি। পানি বাড়লে বিক্রি বাড়বে। এবার ৮ থেকে ১০ হাত দৈর্ঘ্যরে নৌকা চার-পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নৌকা বড় হলে দামও বাড়ে।
নৌকা ক্রেতা চর এলাকার কবির হোসেন জানান, বন্যায় নিচু সড়ক ডুবে যাচ্ছে। তাই পরিবারের সদস্যদের পারাপার করার জন্য ছোট নৌকা ৪ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন।
পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকার জেলে শফিকুল মিয়া বর্ষা মৌসুমে নদীতে মাছ শিকারের জন্য ১৩ হাত লম্বা একটি নতুন নৌকা তৈরি করছেন প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ করে।
নৌকার কারিগর কাঠমিস্ত্রি শৃজন সূত্রধর জানান, কাঠের কাজ তাঁর পেশা। বর্ষাকাল শুরুর ১-২ মাস আগে থেকেই তিনি নৌকা তৈরির কাজ শুরু করেন। বর্ষায় নৌকা আর বছরের বাকি সময়টা চেয়ার-টেবিল, দরজা-জানালা তৈরি করে চলে তার সংসার। বর্ষায় তার নৌকা বিক্রি জমে উঠেছে।
বিশ্বজিৎ সূত্রধর, পলাশ সূত্রধর, মহাদেব সূত্রধরসহ কয়েকজন নৌকার মিস্ত্রি জানান, এখন প্রায় প্রত্যেক এলাকার বড় রাস্তা পাকা করা হয়েছে। ফলে দূরের যাত্রার জন্য কেউ বড় নৌকা তৈরি করে না। বর্ষায় এ পাড়া থেকে ওপাড়া যাতায়াতের জন্য ছোট ছোট নৌকার প্রয়োজন হয়। তাই বড় নৌকা তৈরি হয় না- ছোট নৌকার কদর বেশি।
তারা জানান, বর্ষা মৌসুমে নৌকা তৈরির কাজ করেই তাদের সংসার চলে। ছোট সময় থেকে বাপ-দাদার কাছে হাতেখড়ি নিয়েছেন তারা। একটি নৌকা তৈরিতে তিনজনের ২-৩দিন সময় লাগে।
শিবচর উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাজী এনায়েত হাওলাদার বলেন, প্রতি বছরই পদ্মা নদীর তীরবর্তী চর এলাকায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। বর্ষা মৌসুমে নৌকার চাহিদা বাড়ে। আর নিচু এলাকার মানুষের বর্ষায় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। নৌকা নির্মাণ ও ব্যবহারের সুদীর্ঘ কালের ঐতিহ্য রয়েছে এ এলাকাগুলোতে। ঐতিহ্যবাহী এ বাহনকে ধরে রাখতে এবং নির্মাণ শ্রমিকদের টিকিয়ে রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই নির্মাণ শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
উপজেলার কাঠালবাড়ি, চরজানাজাত, বন্দর খোলা, মাদবরের চর এলাকা পদ্মার তীরবর্তী হওয়ায় সব সময়ই কম-বেশি নৌকার চাহিদা থাকে।