ঢাকা ০৩:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

বিচ্ছেদ না করেই ১০৫ বিয়ে, একে অপরকে চিনতেন না স্ত্রীরা

পুরো জীবনে একশর বেশি নারীকে বিয়ে করেছিলেন জিওভানি ভিজিলিওত্তো নামের এক ‌আমেরিকান নাগরিক। এজন্য তাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘বিগামিস্ট’ (যারা কোনও আইনি বিচ্ছেদ না করেই একের পর এক বিয়ে করেন) বলে মনে করা হয়।

১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে শতাধিক নারীকে বিয়ে করেছিলেন জিওভানি। কিন্তু কোনো স্ত্রীর সঙ্গেই তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় বিচ্ছেদ করেননি। সম্প্রতি তার জীবন কাহিনির বিবরণ দিয়ে টুইটারে একটি ভিডিও শেয়ার করেছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। সেখানে তার শতাধিক বিয়ে করার উল্লেখ রয়েছে।

মনে করা হয়, জিওভানি তার আসল নামও ছিল না। মূলত জিওভানি পরিচয়েই তিনি বহু নারীকে বিয়ে করেছিলেন। মাঝে মাঝে ব্যবহার করতেন অন্য নামও। এও মনে করা হয়, শেষ স্ত্রীকে বিয়ে করার সময় জিওভানি নাকি তার আসল নাম ব্যবহার করেছিলেন।

কিন্তু কেন আইনি বিচ্ছেদ না করে একের পর এক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন জিওভানি? বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি মূলত উচ্চবিত্ত পরিবারের নারীদেরই ‘শিকার’ বানাতেন। অল্পবয়সী বিত্তশালী বিধবাদের প্রেমের ‘ফাঁদে’ ফেলতেন জিওভানি।

শেষমেশ নিজের ‘কুকীর্তি’ লুকিয়ে রাখতে পারেননি জিওভানি। ধরা পড়ার সময় তার বয়স ছিল ৫৩ বছর। সেই সময় জিওভানি দাবি করেন, ১৯২৯ সালের ৩ এপ্রিল ইটালির সিসিলি দ্বীপের সিরাকুসায় তার জন্ম। আরও জানান, তার আসল নাম নিকোলাই পেরুসকভ। যদিও সরকারি আইনজীবীর দাবি ছিল, জিওভানির আসল নাম ফ্রেড জিপ এবং ১৯২৯ নয়, ১৯৩৬ সালের ৩ এপ্রিল তার জন্ম।

dhakapost

সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, জন্মস্থান নিয়েও মিথ্যা বলেছেন জিওভানি। ইতালি নয়, আসলে আমেরিকার নিউ ইয়র্কে জন্মেছিলেন তিনি।

সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, ১৯৪৯ থেকে ১৯৮১-এর মধ্যে সালের মধ্যে জিওভানি ১০৫ জন নারীকে বিয়ে করেছিলেন। তার স্ত্রীরা কেউই একে অপরকে চিনতেন না।

প্রতিবারই ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে মোট ১৪টি দেশের নারীদের বিয়ে করেছিলেন জিওভানি। যার মধ্যে শুধু আমেরিকারই ২৭টি শহরের নারীদের তিনি বিয়ে করেছিলেন।

জিওভানি নারীদের সঙ্গে মূলত আলাপ জমাতেন বাড়ির বাইরে। রেস্তোরাঁ বা সবজি বাজারে। প্রথম আলাপের কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ের প্রস্তাব দিতেন ইনিয়ে বিনিয়ে। নারী রাজি হলে কোনো কারণ দেখিয়ে দিন কয়েকের মধ্যেই বিয়ে ঠিক করে ফেলতেন। স্ত্রীর মনে বিশ্বাস তৈরি করতে আইনি প্রক্রিয়া মেনেই তিনি বিয়েগুলো করতেন।

বিয়ের পর কয়েকদিন সংসার করেই নতুন স্ত্রীর অর্থ এবং গয়না নিয়ে পালিয়ে যেতেন জিওভানি। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীকে জিওভানি বলতেন, কর্মসূত্রে তাকে অনেক দূরে যেতে হবে। স্ত্রীকেও সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতেন তিনি। জিওভানির কথা শুনে স্ত্রী টাকা, গয়না, জামাকাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে ফেললে তিনি সেই ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যেতেন।

dhakapost

এক শহর থেকে পালিয়ে জিওভানি আশ্রয় নিতেন অন্য শহরে। আগের স্ত্রীর হাতিয়ে নেওয়া টাকা দিয়ে এবং গয়না বিক্রি করে জীবন কাটাতে কাটাতেই চলত নতুন ‘শিকারের’ খোঁজ। এভাবেই জীবন কাটছিল জিওভানির। এর মধ্যেই আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের থানায় জিওভানির নামে বহু অভিযোগ জমা পড়তে থাকে।

জিওভানির শেষ স্ত্রী ছিলেন শ্যারন ক্লার্ক। তিনি ইন্ডিয়ানায় মোটা বেতনের চাকরি করতেন। সামাজিক পরিচিতিও ছিল অন্যদের থেকে বেশি। জিওভানি তার টাকা-পয়সা হাতিয়ে পালালে শ্যারন তাকে খুঁজে বের করার পণ করেন। অনেকদিন ধরে তন্নতন্ন করে খোঁজ চালানোর পর শ্যারন জানতে পারেন, জিওভানি ফ্লোরিডায় আছেন। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে জিওভানির নতুন আস্তানায় হানা দেন শ্যারন। ১৯৮১ সালের ২৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন জিওভানি।

১৯৮৩ সালের জানুয়ারিতে জিওভানির বিচার শুরু হয়। তাকে মোট ৩৪ বছর কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়। যার মধ্যে জালিয়াতির জন্য ২৮ এবং আইন না মেনে একের পর এক বিয়ে করার জন্য ছয় বছরের সাজা দেওয়া হয়। জরিমানাও করা হয় কোটি কোটি টাকা।

জীবনের শেষ আট বছর অ্যারিজোনা স্টেট কারাগারে কাটিয়েছিলেন জিওভানি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে ১৯৯১ সালে ৬১ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তবে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালে একবারও নিজের দোষ স্বীকার করেননি জিওভানি। উল্টো তিনি দাবি করেছিলেন, তার একমাত্র অপরাধ ছিল নারীদের প্রতি দুর্বলতা। বিচার চলাকালে নিজেকে ‘আবেগপ্রবণ প্রেমিক’ বলেও দাবি করেন তিনি।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে

বিচ্ছেদ না করেই ১০৫ বিয়ে, একে অপরকে চিনতেন না স্ত্রীরা

আপডেট সময় ১২:৫৬:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩

পুরো জীবনে একশর বেশি নারীকে বিয়ে করেছিলেন জিওভানি ভিজিলিওত্তো নামের এক ‌আমেরিকান নাগরিক। এজন্য তাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘বিগামিস্ট’ (যারা কোনও আইনি বিচ্ছেদ না করেই একের পর এক বিয়ে করেন) বলে মনে করা হয়।

১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে শতাধিক নারীকে বিয়ে করেছিলেন জিওভানি। কিন্তু কোনো স্ত্রীর সঙ্গেই তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় বিচ্ছেদ করেননি। সম্প্রতি তার জীবন কাহিনির বিবরণ দিয়ে টুইটারে একটি ভিডিও শেয়ার করেছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। সেখানে তার শতাধিক বিয়ে করার উল্লেখ রয়েছে।

মনে করা হয়, জিওভানি তার আসল নামও ছিল না। মূলত জিওভানি পরিচয়েই তিনি বহু নারীকে বিয়ে করেছিলেন। মাঝে মাঝে ব্যবহার করতেন অন্য নামও। এও মনে করা হয়, শেষ স্ত্রীকে বিয়ে করার সময় জিওভানি নাকি তার আসল নাম ব্যবহার করেছিলেন।

কিন্তু কেন আইনি বিচ্ছেদ না করে একের পর এক বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন জিওভানি? বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি মূলত উচ্চবিত্ত পরিবারের নারীদেরই ‘শিকার’ বানাতেন। অল্পবয়সী বিত্তশালী বিধবাদের প্রেমের ‘ফাঁদে’ ফেলতেন জিওভানি।

শেষমেশ নিজের ‘কুকীর্তি’ লুকিয়ে রাখতে পারেননি জিওভানি। ধরা পড়ার সময় তার বয়স ছিল ৫৩ বছর। সেই সময় জিওভানি দাবি করেন, ১৯২৯ সালের ৩ এপ্রিল ইটালির সিসিলি দ্বীপের সিরাকুসায় তার জন্ম। আরও জানান, তার আসল নাম নিকোলাই পেরুসকভ। যদিও সরকারি আইনজীবীর দাবি ছিল, জিওভানির আসল নাম ফ্রেড জিপ এবং ১৯২৯ নয়, ১৯৩৬ সালের ৩ এপ্রিল তার জন্ম।

dhakapost

সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, জন্মস্থান নিয়েও মিথ্যা বলেছেন জিওভানি। ইতালি নয়, আসলে আমেরিকার নিউ ইয়র্কে জন্মেছিলেন তিনি।

সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, ১৯৪৯ থেকে ১৯৮১-এর মধ্যে সালের মধ্যে জিওভানি ১০৫ জন নারীকে বিয়ে করেছিলেন। তার স্ত্রীরা কেউই একে অপরকে চিনতেন না।

প্রতিবারই ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে মোট ১৪টি দেশের নারীদের বিয়ে করেছিলেন জিওভানি। যার মধ্যে শুধু আমেরিকারই ২৭টি শহরের নারীদের তিনি বিয়ে করেছিলেন।

জিওভানি নারীদের সঙ্গে মূলত আলাপ জমাতেন বাড়ির বাইরে। রেস্তোরাঁ বা সবজি বাজারে। প্রথম আলাপের কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ের প্রস্তাব দিতেন ইনিয়ে বিনিয়ে। নারী রাজি হলে কোনো কারণ দেখিয়ে দিন কয়েকের মধ্যেই বিয়ে ঠিক করে ফেলতেন। স্ত্রীর মনে বিশ্বাস তৈরি করতে আইনি প্রক্রিয়া মেনেই তিনি বিয়েগুলো করতেন।

বিয়ের পর কয়েকদিন সংসার করেই নতুন স্ত্রীর অর্থ এবং গয়না নিয়ে পালিয়ে যেতেন জিওভানি। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে সদ্য বিয়ে করা স্ত্রীকে জিওভানি বলতেন, কর্মসূত্রে তাকে অনেক দূরে যেতে হবে। স্ত্রীকেও সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতেন তিনি। জিওভানির কথা শুনে স্ত্রী টাকা, গয়না, জামাকাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে ফেললে তিনি সেই ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যেতেন।

dhakapost

এক শহর থেকে পালিয়ে জিওভানি আশ্রয় নিতেন অন্য শহরে। আগের স্ত্রীর হাতিয়ে নেওয়া টাকা দিয়ে এবং গয়না বিক্রি করে জীবন কাটাতে কাটাতেই চলত নতুন ‘শিকারের’ খোঁজ। এভাবেই জীবন কাটছিল জিওভানির। এর মধ্যেই আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের থানায় জিওভানির নামে বহু অভিযোগ জমা পড়তে থাকে।

জিওভানির শেষ স্ত্রী ছিলেন শ্যারন ক্লার্ক। তিনি ইন্ডিয়ানায় মোটা বেতনের চাকরি করতেন। সামাজিক পরিচিতিও ছিল অন্যদের থেকে বেশি। জিওভানি তার টাকা-পয়সা হাতিয়ে পালালে শ্যারন তাকে খুঁজে বের করার পণ করেন। অনেকদিন ধরে তন্নতন্ন করে খোঁজ চালানোর পর শ্যারন জানতে পারেন, জিওভানি ফ্লোরিডায় আছেন। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে জিওভানির নতুন আস্তানায় হানা দেন শ্যারন। ১৯৮১ সালের ২৮ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন জিওভানি।

১৯৮৩ সালের জানুয়ারিতে জিওভানির বিচার শুরু হয়। তাকে মোট ৩৪ বছর কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়। যার মধ্যে জালিয়াতির জন্য ২৮ এবং আইন না মেনে একের পর এক বিয়ে করার জন্য ছয় বছরের সাজা দেওয়া হয়। জরিমানাও করা হয় কোটি কোটি টাকা।

জীবনের শেষ আট বছর অ্যারিজোনা স্টেট কারাগারে কাটিয়েছিলেন জিওভানি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে ১৯৯১ সালে ৬১ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তবে বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালে একবারও নিজের দোষ স্বীকার করেননি জিওভানি। উল্টো তিনি দাবি করেছিলেন, তার একমাত্র অপরাধ ছিল নারীদের প্রতি দুর্বলতা। বিচার চলাকালে নিজেকে ‘আবেগপ্রবণ প্রেমিক’ বলেও দাবি করেন তিনি।