ঢাকা ০৩:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

ইসরায়েলে বিক্ষোভ সমর্থন করছে মোসাদ, মানতে নারাজ নেতানিয়াহু

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলিদের বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে হওয়া টানা এই বিক্ষোভে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছেন নেতানিয়াহু।

আন্তর্জাতিক পর্যায়েও চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে মোসাদ মানুষকে সমর্থন করছে বলে খবর সামনে এসেছে। তবে এটি অস্বীকার করেছে নেতানিয়াহু সরকার। সোমবার (১০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থার প্রস্তাবিত সংস্কারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলজুড়ে হওয়া সাম্প্রতিক বিক্ষোভে গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের শীর্ষ নেতারা সমর্থন করেছিল বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন থেকে একটি নথি ফাঁস হয়। তবে নথির এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েলের সরকার।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টে দেখা যায়- ইসরায়েলের বর্তমান এবং সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক সংকটে মোসাদ নেতাদের সরাসরি জড়িত না হওয়ার ঐতিহ্য ভেঙে বিক্ষোভে সরাসরি সমর্থনের এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

গত মার্চ মাসের ১ তারিখে এই মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়। ওই দিন মোসাদের সাবেক পাঁচ প্রধান নেতানিয়াহুর বিতর্কিত সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেন। এছাড়া মোসাদের বর্তমান প্রধান ডেভিড বারনেয়া ওইদিন নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মোসাদ কর্মীদের বিক্ষোভ অংশ নেওয়ার অনুমতি দেন।

অবশ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ফাঁস হওয়া নথিগুলো খাঁটি বলে মনে হলেও এর অর্থ এই নয় যে, সেগুলো সঠিক ছিল।

তবে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এই রিপোর্টকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে নেতানিয়াহুর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে রোববার দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনটি ‘মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন’।

এতে আরও দাবি করা হয়েছে, ‘মোসাদ এবং এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এজেন্সি কর্মীদের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, রাজনৈতিক বিক্ষোভ বা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে উৎসাহিত করেনি – এবং করবেও না।’

আল জাজিরা বলছে, গত বছরের শেষের দিকে কট্টর-ডান ও ধর্মীয় দলগুলোর সমন্বয়ে জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিচারিক সংস্কারের জন্য নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা ইসরায়েলে অভূতপূর্ব বিক্ষোভের জন্ম দেয় এবং ইসরায়েলের এই পরিস্থিতি তাদের পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যেও শঙ্কা সৃষ্টি করে।

মূলত ক্ষমতায় আসার পরপরই ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন এবং সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পনা উন্মোচন করে নেতানিয়াহু সরকার। এসব সংস্কার বাস্তবায়ন হলে ইসরায়েলের পার্লামেন্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়গুলোকে বাতিল করা সহজ হবে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, নেতানিয়াহু সরকারের এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরায়েলের বিচারিক স্বাধীনতাকে পঙ্গু করবে, দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করবে, সংখ্যালঘুদের অধিকার নষ্ট করবে এবং ইসরায়েলের আদালত ব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করবে।

এছাড়া নতুন এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরায়েলের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সিস্টেমকে হুমকির মুখে ফেলবে বলেও দাবি বিক্ষোভকারীদের। মূলত ওই আইন পাস হলে আইনসভা এবং নির্বাহী বিভাগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। একইসঙ্গে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তমূলক ক্ষমতা পাবেন পার্লামেন্টের আইন প্রণেতারা।

টানা কয়েক সপ্তাহের তীব্র বিক্ষোভের পর নেতানিয়াহু মার্চের শেষের দিকে তার এই সংস্কার পরিকল্পনা থেকে পিছু হটেন এবং বিরোধী দলগুলোর সাথে আলোচনায় রাজি হন। যদিও এরপরও ইসরায়েলে প্রতি সপ্তাহেই বিক্ষোভ হচ্ছে।

এদিকে মার্কিন বিচার বিভাগ গত শুক্রবার বলেছে, তারা মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে যোগাযোগ করছে এবং নথিপত্র ফাঁসের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। অবশ্য সেসময় আর কোনও মন্তব্য করেনি তারা।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে

ইসরায়েলে বিক্ষোভ সমর্থন করছে মোসাদ, মানতে নারাজ নেতানিয়াহু

আপডেট সময় ১২:৩৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০২৩

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলিদের বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে হওয়া টানা এই বিক্ষোভে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছেন নেতানিয়াহু।

আন্তর্জাতিক পর্যায়েও চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করতে মোসাদ মানুষকে সমর্থন করছে বলে খবর সামনে এসেছে। তবে এটি অস্বীকার করেছে নেতানিয়াহু সরকার। সোমবার (১০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থার প্রস্তাবিত সংস্কারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলজুড়ে হওয়া সাম্প্রতিক বিক্ষোভে গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের শীর্ষ নেতারা সমর্থন করেছিল বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন থেকে একটি নথি ফাঁস হয়। তবে নথির এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েলের সরকার।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ফাঁস হওয়া ডকুমেন্টে দেখা যায়- ইসরায়েলের বর্তমান এবং সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, রাজনৈতিক সংকটে মোসাদ নেতাদের সরাসরি জড়িত না হওয়ার ঐতিহ্য ভেঙে বিক্ষোভে সরাসরি সমর্থনের এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

গত মার্চ মাসের ১ তারিখে এই মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়। ওই দিন মোসাদের সাবেক পাঁচ প্রধান নেতানিয়াহুর বিতর্কিত সংস্কার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে যোগ দেন। এছাড়া মোসাদের বর্তমান প্রধান ডেভিড বারনেয়া ওইদিন নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মোসাদ কর্মীদের বিক্ষোভ অংশ নেওয়ার অনুমতি দেন।

অবশ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ফাঁস হওয়া নথিগুলো খাঁটি বলে মনে হলেও এর অর্থ এই নয় যে, সেগুলো সঠিক ছিল।

তবে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এই রিপোর্টকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে নেতানিয়াহুর কার্যালয়। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে রোববার দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনটি ‘মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন’।

এতে আরও দাবি করা হয়েছে, ‘মোসাদ এবং এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এজেন্সি কর্মীদের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, রাজনৈতিক বিক্ষোভ বা কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে উৎসাহিত করেনি – এবং করবেও না।’

আল জাজিরা বলছে, গত বছরের শেষের দিকে কট্টর-ডান ও ধর্মীয় দলগুলোর সমন্বয়ে জোট ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিচারিক সংস্কারের জন্য নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা ইসরায়েলে অভূতপূর্ব বিক্ষোভের জন্ম দেয় এবং ইসরায়েলের এই পরিস্থিতি তাদের পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যেও শঙ্কা সৃষ্টি করে।

মূলত ক্ষমতায় আসার পরপরই ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন এবং সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পনা উন্মোচন করে নেতানিয়াহু সরকার। এসব সংস্কার বাস্তবায়ন হলে ইসরায়েলের পার্লামেন্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়গুলোকে বাতিল করা সহজ হবে।

তবে সমালোচকরা বলছেন, নেতানিয়াহু সরকারের এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরায়েলের বিচারিক স্বাধীনতাকে পঙ্গু করবে, দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করবে, সংখ্যালঘুদের অধিকার নষ্ট করবে এবং ইসরায়েলের আদালত ব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করবে।

এছাড়া নতুন এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরায়েলের চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স সিস্টেমকে হুমকির মুখে ফেলবে বলেও দাবি বিক্ষোভকারীদের। মূলত ওই আইন পাস হলে আইনসভা এবং নির্বাহী বিভাগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। একইসঙ্গে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তমূলক ক্ষমতা পাবেন পার্লামেন্টের আইন প্রণেতারা।

টানা কয়েক সপ্তাহের তীব্র বিক্ষোভের পর নেতানিয়াহু মার্চের শেষের দিকে তার এই সংস্কার পরিকল্পনা থেকে পিছু হটেন এবং বিরোধী দলগুলোর সাথে আলোচনায় রাজি হন। যদিও এরপরও ইসরায়েলে প্রতি সপ্তাহেই বিক্ষোভ হচ্ছে।

এদিকে মার্কিন বিচার বিভাগ গত শুক্রবার বলেছে, তারা মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে যোগাযোগ করছে এবং নথিপত্র ফাঁসের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে। অবশ্য সেসময় আর কোনও মন্তব্য করেনি তারা।