ইরানে নিজেদের কূটনৈতিক মিশন পুনরায় চালু করার বিষয়ে আলোচনা করতে তেহরানে পৌঁছেছে সৌদি আরবের একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল। শনিবার (৮ এপ্রিল) ওই প্রতিনিধি দলটি তেহরানে পৌঁছায়।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই তথ্য সামনে এনেছে বলে রোববার (৯ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের একটি কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল সাত বছরের অনুপস্থিতির পর নিজেদের কূটনৈতিক মিশন পুনরায় চালু করার বিষয়ে আলোচনা করতে তেহরানে পৌঁছেছে বলে রিয়াদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
গত মাসে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দু’টি কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়। এরপর গত সপ্তাহে চীনে উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেন এবং এরপরই তেহরান সফরে গেল সৌদি প্রতিনিধি দল।
আল জাজিরা বলছে, শনিবারের এই সফরটি ২০১৬ সালে বিচ্ছিন্ন সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চীনের মধ্যস্থতায় দুই আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে গত ১০ মার্চ হওয়া ‘ত্রিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নের’ অংশ বলে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির সরকারি সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানিয়েছে, সৌদি আরবের ‘প্রযুক্তিগত প্রতিনিধিদল’ তেহরানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইরানের প্রধান প্রটোকল কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে।
এর আগে দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর গত মাসেই কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরব। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে আবার বাণিজ্য এবং নিরাপত্তা সহযোগিতাও শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আর সেই বৈঠকও হয়েছিল চীনে।
২০১৬ সাল থেকে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই বড় দেশের মধ্যে কোনও কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। সেবছর সৌদি আরব এক শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। আর তারপর দুই দেশের সম্পর্কে নাটকীয় অবনতি ঘটে।
মূলত ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারপর থেকে সুন্নি এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন এই প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই জারি ছিল। এই দুই দেশ একে অপরকে নিজের আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।
এছাড়া সিরিয়া এবং ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘাতে ইরান ও সৌদি একে অপরের বিরোধী পক্ষ হয়ে কার্যত পরোক্ষ লড়াইয়ে নিয়োজিত রয়েছে। আর তাই সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব এবং শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরানের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই অনেক বেশি ছিল।
তবে গত মাসের উভয় দেশের চুক্তির অধীনে দুই দেশ দুই মাসের মধ্যে তাদের দূতাবাস ও মিশন পুনরায় চালু করবে এবং ২০ বছরেরও বেশি আগে স্বাক্ষরিত নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা চুক্তি বাস্তবায়ন করবে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে সৌদি বাদশাহ সালমান ইতোমধ্যেই রিয়াদে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ইসলামিক পবিত্র রমজান মাসের পরে সৌদিতে প্রেসিডেন্ট রাইসির সফর অনুষ্ঠিত হবে।
আল জাজিরা বলছে, সিরিয়া, লেবানন ও ইরাকে প্রভাব বিস্তারের জন্য লড়াই করছে ইরান ও সৌদি আরব। এছাড়া এই দেশ দু’টি ইয়েমেনসহ এই অঞ্চলজুড়ে বেশ কয়েকটি সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষকে সমর্থন করে। ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীরা তেহরানের সাথে জোটবদ্ধ এবং অন্যদিকে সরকারকে সমর্থনকারী একটি সামরিক জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে রিয়াদ।
অন্যদিকে হুথি বিদ্রোহীদের এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি নতুন যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে শনিবার ওমানের মধ্যস্থতাকারীরা ইয়েমেনের রাজধানী সানায় পৌঁছেছেন। বিমানবন্দরের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা এএফপি একথা জানিয়েছে।
মূলত চীনের মধ্যস্ততায় সৌদি-ইরান সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের চুক্তির পর থেকে বিরোধ সমাধানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গতি পেয়েছে।