শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মদিন। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করা এই মহান নেতার জীবনী বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি উজ্জ্বল অধ্যায়। তিনি শুধু একজন সামরিক বাহিনীর অফিসার নন, বরং দেশের স্বাধীনতার অন্যতম কাণ্ডারি এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি আজও স্মরণীয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জিয়াউর রহমান একজন মেজর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার নাম ইতিহাসে খোদিত হয়েছে ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার মধ্য দিয়ে। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল দৃঢ় করে এবং পুরো জাতিকে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার অনুপ্রেরণা দেয়।
যুদ্ধের পর বাংলাদেশে অস্থিরতা এবং নেতৃত্বের সংকট দেখা দেয়। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। তার নেতৃত্বে দেশ একটি নতুন দিকনির্দেশনা পায়। তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং অর্থনৈতিক সংস্কার উদ্যোগ নেন। তার শাসনামলে তিনি গ্রামীন অর্থনীতির উন্নয়নে কৃষি খাতকে শক্তিশালী করেন এবং শিল্পায়নের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
জিয়াউর রহমানের অন্যতম কৃতিত্ব হলো তার শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি। তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ইসলামি বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ঘটান। তার শাসনামলে বাংলাদেশ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যুক্ত হয় এবং তিনি SAARC প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন।
জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শ ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, যার ভিত্তিতে তিনি ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন। এই আদর্শ বাংলাদেশের জনগণের ভাষা, সংস্কৃতি এবং স্বাধীনতা-চেতনার ভিত্তিতে একতাবদ্ধ হওয়ার বার্তা দেয়। তার এই দর্শন আজও বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে।
১৯৮১ সালের ৩০ মে এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের জীবনাবসান ঘটে। তার অকাল মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক শূন্যতা তৈরি করে। তবে তার কৃতিত্ব এবং অবদান তাকে বাঙালির হৃদয়ে চিরজাগ্রত করে রেখেছে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আজ জন্মদিনে, আমরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তার সততা, সাহসিকতা, এবং দেশপ্রেম আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়।