চলতি বছরের মে-তে এক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হন। যে কারণে দেশটিতে এখন নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী শুক্রবার ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন দেশটির নাগরিকরা।
এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হিসেবে নাম নিবন্ধন করেন ৮০ জন। এর মধ্যে মাত্র ৬ জনের প্রার্থিতা অনুমোদন করে দেশটির আলেম ও আইনবিদদের নিয়ে গঠিত প্যানেল- গার্ডিয়ান কাউন্সিল। যা দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির তত্ত্বাবধানে গঠিত। দেশটির প্রেসিডেন্টকেও এই গার্ডিয়ান কাউন্সিল ও সর্বোচ্চ নেতার কাছে জবাবদিহিতা রয়েছে।
যাইহোক, ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে চূড়ান্ত ৬ প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজনই কট্টরপন্থি এবং একজন মধ্যমপন্থি। চলুন, জেনে নেওয়া যাক তাদের বিষয়ে-
আমির হোসেন গাজিজাদেহ-হাশেমি
ইরানের বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং শহিদ ফাউন্ডেশনের প্রধান গাজিজাদেহ-হাশেমি একজন কট্টরপন্থি রাজনীতিবিদ। ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। ৫৩ বছর বয়সি হাশেমি পেশায় নাক, কান, গলার সার্জন। এর আগে চারবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ
ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সাবেক কমান্ডার এবং সর্বোচ্চ নেতা খামেনির মিত্র ৬২ বছর বয়সি মোহাম্মদ বাগের গালিবাফ একজন কট্টরপন্থি এবং পার্লামেন্টের বর্তমান স্পিকার। এর আগে দুবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছিলেন এবং একবার ইব্রাহিম রাইসির পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। তেহরানের মেয়র হিসেবে রেকর্ড টানা ১২ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন গালিবাফ। ২০০৯ সালে মেয়রের দায়িত্ব নিয়েই তেহরানের রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা দমনে সাহায্য করেছিলেন তিনি।
সাঈদ জালিলি
৫৮ বছর বয়সি সাঈদ জালিলি একজন কট্টরপন্থি কূটনীতিক। আশির দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধে গার্ডদের পক্ষে লড়াই করার সময় তিনি তার ডান পা হারিয়েছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি করা জালিলি ২০০৭ সাল থেকে পাঁচ বছরের জন্য সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক এই উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ২০১৩ সালে এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত করেছিলেন খামেনি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রধান পারমাণবিক আলোচক জালিলি একবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও হয়েছিলেন।
মোস্তফা পুরমোহাম্মদি
ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে গার্ডিয়ান কাউন্সিল কর্তৃক অনুমোদিত একমাত্র ধর্মগুরু ৬৫ বছর বয়সি মোস্তফা পুরমোহাম্মদি। ২০০৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কট্টরপন্থি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের প্রথম মেয়াদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৮৮ সালে ইরানের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ভিন্নমতাবলম্বী বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে ভূমিকা রেখে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযুক্তের তালিকায় ছিলেন তিনি। পুরমোহাম্মদি অবশ্য সেই অভিযোগের কোনো জবাব দেননি।
আলীরেজা জাকানি
তিন বছর ধরে তেহরানের কট্টরপন্থী মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৫৯ বছর বয়সি আলিরেজা জাকানি। সাবেক এই আইন প্রণেতাকে ২০১৩ ও ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। বিপ্লবী গার্ডের একটি সহযোগী বাহিনী-বাসিজের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি। চারবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জাকানি। রাইসিকে সমর্থনের জন্য ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছিলেন।
মাসুদ পেজেশকিয়ান
এবারের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র মধ্যপন্থি ৭০ বছর বয়সি মাসুদ পেজেশকিয়ান। পেশায় চিকিৎসক পেজেশকিয়ান পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সংস্কারপন্থি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ খাতামির অধীনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০২২ সালে পুলিশ হেফাজতে ইরানি কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর বিষয়ে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেন পেজেশকিয়ান।