ঢাকা ০৭:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কাজাখস্তানে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ভিডিও চট্টগ্রাম বন্দরের টেন্ডারবিহীন চুক্তি বাতিল চেয়ে আইনি নোটিশ নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন বড়দিন উপলক্ষে জোনাইল পারর্বণী মিশন পরিদর্শন করেন। কর্মঘণ্টা বাড়তে পারে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় পতাকা খামচে ধরেছে, সেই পুরনো শকুন জামায়াত-শিবির, রংপুরে অধ্যক্ষ চুনারুঘাটে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটার মহোৎসব জিন্নাতুন নেছা দারুন জান্নাত মহিলা ক্বাওমি মাদ্রাসায় হিফজের ছবক প্রদান অনুষ্ঠান। গোয়াইনঘাটে ইউএনও’র উদ্যোগে পরিবেশ রক্ষায় দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে প্রকৃতির দৃশ্য সি আই পি মর্যাদা পেলেন প্রবাসী রেমিট্যান্স যুদ্ধা মোঃ আনসারুল হক (আনসার) যুগপৎ আন্দোলনের ইঙ্গিত বিএনপির

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাফলংয়ে স্বপন বাহিনীর তাণ্ডব

  • সিলেট প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় ০৩:০৩:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৫১১ বার পড়া হয়েছে

রাতের আধারে জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে জোরপূর্বক চিপ-বালু পাথর উত্তোলন করছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন ও তার বাহিনী। তার এই চাঁদাবাজ ও লুটপাটকারী সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হেলোয়ার, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আহমেদ, পূর্বজাফলং ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ, পূর্বজাফলং ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন,পূর্বজাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক উসমান, ছাত্রদল সভাপতির বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন ও ইসলাম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন।

এলাকাবাসীসহ সাধারণ শ্রমিকরা জানান, শাহ্ আলম স্বপন ও তার চাঁদাবাজ বাহিনীর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। একের পর এক অপরাধ করে গেলেও এই বাহিনীর ভয়ে কোনো কথা বলতে পারেন না স্থানীয় লোকজন। স্বপন বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বললেই চালানো হয় নির্যাতন নিপীড়ন। কিছুদিন পূর্বে অবৈধভাবে পাথর লুটপাটের প্রতিবাদ করায় শাহ্ আলম স্বপনের ভাগনা ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন ও তার বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন, ছাত্রদল নেতা সুমন, পারভেজ, হেলোয়ার, ইউসুফ সঙ্গ বন্ধ ভাবে যুবদল নেতা ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের উপর হামলা চালায়। তার অপরাধ তিনি তাদের লুটপাটের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বক্তব্য দিয়ে ছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় মামার বাজার শামীম পারভেজ এর মার্কেটের সামনে প্রকাশ্য ব্যবসায়ী ইসমাইলের উপর হামলা চালায় স্বপন বাহিনী। জাফলংয়ের নিরীহ বারকি শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, নিরীহ গরিব শ্রমিকদের পেটে লাথি দিয়ে উপজেলা প্রশাসন বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ করে রেখেছেন। অপরদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ্ আলম স্বপন বাহিনীকে অবৈধভাবে বালু পাথর উত্তোলনে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন অদৃশ্য কারণে। বিগত সরকারে এই দীর্ঘ সময়ে আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এর চাঁদাবাজ লাইন সিন্ডিকেট বাহিনীর সাথে আতাঁত করে লুটেপুটে খেয়েছেন জাফলং ইসিও এলাকার শত কোটি টাকার বালু-পাথর।

স্থানীয় অনেকে নাম প্রকাশ না করে অভিযোগ করে বলেন, শাহ্ আলম স্বপনকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়েছে পাশাপাশি তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদও হারিয়েছেন। এরপরও কীভাবে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে তিনিসহ তার বাহিনীর সদস্যরা অবৈধভাবে জাফলং এলাকায় বালু-পাথর লুটপাট করে যাচ্ছেন এনিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। জাফলং নদী থেকে অসহায় সাধারণ বারকি শ্রমিকরা সনাতন পদ্ধতিতে নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে সেটা অবৈধ হয়ে যায়, আর স্বপন বাহিনীর সদস্যরা মেশিন বা গাড়ি দিয়ে বালু উত্তোলন করলে তা বৈধ হয়ে যায় কি করে? অনেকে এর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়ী করে বলেন তিনিই শাহ্ আলম স্বপন ও তার চাঁদাবাজ বাহিনীকে পরোক্ষভাবে মদদ দিয়েছেন। যার ফলে দিনে রাতে জাফলং থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। অপরদিকে রাতের আধারে বিভিন্ন এলাকায় এক্সেভেটর দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে এই স্বপন বাহিনীর সদস্যরা।

স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের আমলে স্বপনসহ তার বাহিনীর সদস্য জাফলংয়ে লাইনম্যান নামে চাঁদাবাজদের সাথে মিলে মিশে খাবলে খেয়েছে জাফলংকে। তারা এখনও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিয়োগকৃত আনসার বাহিনীকে ম্যানেজ করে স্বপন বাহিনী জাফলং থেকে অবৈধ ভাবে বালু-পাথর লুট করে নিচ্ছে। এই বাহিনীর সাথে সরাসরি জড়িত নির্বাহী অফিসারের নিয়োগকৃত আনসার বাহিনীর সদস্যরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার পরও গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালু ও পাথর পূর্বজাফলং ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতি দিন ফেলোডার দিয়ে ট্রাক দিয়ে বালু-পাথর বিক্রি করছেন শাহ্ আলম স্বপন, মিজানুর রহমান হেলোয়ার, ইউসুফ আহমেদ, হাসান আহমেদ, আজির উদ্দিনরা। অবৈধ ভাবে জমি দখল ও বালু পাথর উত্তোলনকৃত টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১১টার দিকে উপজেলার মামার বাজার মধুবন মিষ্টি দোকানের সম্মুখে আরেকটি পক্ষের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় স্বপন বাহিনীর সদস্যরা। বিষয়টি মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। শাহ আলম স্বপনের উপস্থিতিতে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ সময় স্থানীয় লোকজন জানান, জাফলং নয়া বস্তির ইউসুফ আলীর জমি জোরপূর্বক দখল করে নেন স্বপনসহ তার বাহিনীর সদস্যরা। সেখান থেকে তারা অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করে আসছিলেন। বিষয়টি মীমাংসা জন্য ঐ এলাকার সেলিম জমিদারের বাড়িতে একটি বৈঠক বসলে স্বপনসহ তার বাহিনীর সদস্যদের দখলকৃত জমি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হলে স্বপন ও হেলোয়ার উত্তেজিত হয়ে হুমকি দেন তারা জোরপূর্বক ইউসুফের জমির পাথর উত্তোলন করে নিবেন। কেউ বাধা দিলে তাকে প্রাণে হত্যা করা হবে। এরপর স্বপন তার বাহিনী নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলে ২য় বার স্বপনের বাড়িতে স্থানীয় লোকজন বৈঠকে বসেন। এ সময় স্বপন ও তার বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় লোকজনের উপর অর্তকৃত ভাবে হামলা চালায়। এনিয়ে রাতভর জাফলং এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়ার কথা থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্বপন বাহিনীর ভয়ে কেউ থানায় মামলা করতে সাহস পাচ্ছেনা। এর আগে স্বপনের বাসায় জাফলং এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে লুটপাটকৃত বালু-পাথরের ৫ কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক বিএনপির নেতা জানান, স্বপন বাহিনীর বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে, তবে তা এখনো রেকর্ড করা হয়নি।

স্থানীয় একাধিক বিএনপির নেতা বলেন, শাহ আলম স্বপনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তার পিএস মিজানুর রহমান হেলোয়ারের নেতৃত্বে জাফলংয়ে আধিপত্য ধরে রেখেছেন তিনি। বিগত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে শাহ আলম স্বপন নিজে বাহিনী নিয়ে লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন। তামাবিল স্থলবন্দরে লুটপাটসহ স্থানীয় ভারতীয় চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় স্বপন বাহিনী। তারা জাফলং থেকে প্রায় শত কোটি টাকার পাথর লুট করে নেয়। এদিকে (১৮ অক্টোবর) গোয়াইনঘাট থানায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বাদী হয়ে একটি এবং (১৭ অক্টোবর) সিলেটের পরিবেশ আদালতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মামুনুর রসিদ ২২ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। দুই মামলায় মোট আসামি ১১৪ জন। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের আলোকে লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে মামলা করা হয়েছে। পরিবেশগত সংকটাপন্ন (ইসিএ) ঘোষিত এলাকা সিলেটের জাফলংয়ে শতকোটি টাকার পাথর লুটের ঘটনায় এই মামলায় জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপনসহ তার বাহিনীর একাধিক সদস্য আসামি হলে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে লুটপাটকারী স্বপন বাহিনীর বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলাও রুজু করেন, কিন্তু স্বপন বাহিনীর তাণ্ডব থামানো যাচ্ছে কোন কিছু করে। স্বপন বাহিনীর সদস্য বিএনপিসহ অঙ্গসঙ্গ গঠনের ব্যানারে থেকে তারে চাঁদাবাজিসহ লুটপাট চালিয়ে গেলে দায় পড়তে শুরু করেছে উপজেলা বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীর উপর। প্রতিবাদ করলে নিজ দলের নেতাকর্মীকে ছাড় দিচ্ছেনা স্বপন বাহিনীর সদস্যরা। তাদের এসব কর্মকাণ্ড বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও একমাত্র শাহ আলম স্বপন ছাড়া তার বাহিনীর বাকি সদস্যরা এখনো দলীয় পদে বহাল রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীর।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

কাজাখস্তানে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ভিডিও

প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জাফলংয়ে স্বপন বাহিনীর তাণ্ডব

আপডেট সময় ০৩:০৩:৫০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

রাতের আধারে জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে জোরপূর্বক চিপ-বালু পাথর উত্তোলন করছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন ও তার বাহিনী। তার এই চাঁদাবাজ ও লুটপাটকারী সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হেলোয়ার, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আহমেদ, পূর্বজাফলং ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ, পূর্বজাফলং ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন,পূর্বজাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক উসমান, ছাত্রদল সভাপতির বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন ও ইসলাম উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন।

এলাকাবাসীসহ সাধারণ শ্রমিকরা জানান, শাহ্ আলম স্বপন ও তার চাঁদাবাজ বাহিনীর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। একের পর এক অপরাধ করে গেলেও এই বাহিনীর ভয়ে কোনো কথা বলতে পারেন না স্থানীয় লোকজন। স্বপন বাহিনীর বিরুদ্ধে কথা বললেই চালানো হয় নির্যাতন নিপীড়ন। কিছুদিন পূর্বে অবৈধভাবে পাথর লুটপাটের প্রতিবাদ করায় শাহ্ আলম স্বপনের ভাগনা ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন ও তার বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন, ছাত্রদল নেতা সুমন, পারভেজ, হেলোয়ার, ইউসুফ সঙ্গ বন্ধ ভাবে যুবদল নেতা ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেনের উপর হামলা চালায়। তার অপরাধ তিনি তাদের লুটপাটের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বক্তব্য দিয়ে ছিলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় মামার বাজার শামীম পারভেজ এর মার্কেটের সামনে প্রকাশ্য ব্যবসায়ী ইসমাইলের উপর হামলা চালায় স্বপন বাহিনী। জাফলংয়ের নিরীহ বারকি শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, নিরীহ গরিব শ্রমিকদের পেটে লাথি দিয়ে উপজেলা প্রশাসন বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ করে রেখেছেন। অপরদিকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ্ আলম স্বপন বাহিনীকে অবৈধভাবে বালু পাথর উত্তোলনে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন অদৃশ্য কারণে। বিগত সরকারে এই দীর্ঘ সময়ে আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এর চাঁদাবাজ লাইন সিন্ডিকেট বাহিনীর সাথে আতাঁত করে লুটেপুটে খেয়েছেন জাফলং ইসিও এলাকার শত কোটি টাকার বালু-পাথর।

স্থানীয় অনেকে নাম প্রকাশ না করে অভিযোগ করে বলেন, শাহ্ আলম স্বপনকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হয়েছে পাশাপাশি তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের পদও হারিয়েছেন। এরপরও কীভাবে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে তিনিসহ তার বাহিনীর সদস্যরা অবৈধভাবে জাফলং এলাকায় বালু-পাথর লুটপাট করে যাচ্ছেন এনিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। জাফলং নদী থেকে অসহায় সাধারণ বারকি শ্রমিকরা সনাতন পদ্ধতিতে নদী থেকে বালু উত্তোলন করলে সেটা অবৈধ হয়ে যায়, আর স্বপন বাহিনীর সদস্যরা মেশিন বা গাড়ি দিয়ে বালু উত্তোলন করলে তা বৈধ হয়ে যায় কি করে? অনেকে এর জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দায়ী করে বলেন তিনিই শাহ্ আলম স্বপন ও তার চাঁদাবাজ বাহিনীকে পরোক্ষভাবে মদদ দিয়েছেন। যার ফলে দিনে রাতে জাফলং থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। অপরদিকে রাতের আধারে বিভিন্ন এলাকায় এক্সেভেটর দিয়ে পাথর উত্তোলন করছে এই স্বপন বাহিনীর সদস্যরা।

স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, বিগত সরকারের আমলে স্বপনসহ তার বাহিনীর সদস্য জাফলংয়ে লাইনম্যান নামে চাঁদাবাজদের সাথে মিলে মিশে খাবলে খেয়েছে জাফলংকে। তারা এখনও স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিয়োগকৃত আনসার বাহিনীকে ম্যানেজ করে স্বপন বাহিনী জাফলং থেকে অবৈধ ভাবে বালু-পাথর লুট করে নিচ্ছে। এই বাহিনীর সাথে সরাসরি জড়িত নির্বাহী অফিসারের নিয়োগকৃত আনসার বাহিনীর সদস্যরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখার পরও গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত বালু ও পাথর পূর্বজাফলং ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতি দিন ফেলোডার দিয়ে ট্রাক দিয়ে বালু-পাথর বিক্রি করছেন শাহ্ আলম স্বপন, মিজানুর রহমান হেলোয়ার, ইউসুফ আহমেদ, হাসান আহমেদ, আজির উদ্দিনরা। অবৈধ ভাবে জমি দখল ও বালু পাথর উত্তোলনকৃত টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১১টার দিকে উপজেলার মামার বাজার মধুবন মিষ্টি দোকানের সম্মুখে আরেকটি পক্ষের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় স্বপন বাহিনীর সদস্যরা। বিষয়টি মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। শাহ আলম স্বপনের উপস্থিতিতে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ সময় স্থানীয় লোকজন জানান, জাফলং নয়া বস্তির ইউসুফ আলীর জমি জোরপূর্বক দখল করে নেন স্বপনসহ তার বাহিনীর সদস্যরা। সেখান থেকে তারা অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন করে আসছিলেন। বিষয়টি মীমাংসা জন্য ঐ এলাকার সেলিম জমিদারের বাড়িতে একটি বৈঠক বসলে স্বপনসহ তার বাহিনীর সদস্যদের দখলকৃত জমি ছেড়ে দিতে অনুরোধ করা হলে স্বপন ও হেলোয়ার উত্তেজিত হয়ে হুমকি দেন তারা জোরপূর্বক ইউসুফের জমির পাথর উত্তোলন করে নিবেন। কেউ বাধা দিলে তাকে প্রাণে হত্যা করা হবে। এরপর স্বপন তার বাহিনী নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলে ২য় বার স্বপনের বাড়িতে স্থানীয় লোকজন বৈঠকে বসেন। এ সময় স্বপন ও তার বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় লোকজনের উপর অর্তকৃত ভাবে হামলা চালায়। এনিয়ে রাতভর জাফলং এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়ার কথা থাকলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্বপন বাহিনীর ভয়ে কেউ থানায় মামলা করতে সাহস পাচ্ছেনা। এর আগে স্বপনের বাসায় জাফলং এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে লুটপাটকৃত বালু-পাথরের ৫ কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক বিএনপির নেতা জানান, স্বপন বাহিনীর বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে, তবে তা এখনো রেকর্ড করা হয়নি।

স্থানীয় একাধিক বিএনপির নেতা বলেন, শাহ আলম স্বপনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও তার পিএস মিজানুর রহমান হেলোয়ারের নেতৃত্বে জাফলংয়ে আধিপত্য ধরে রেখেছেন তিনি। বিগত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে শাহ আলম স্বপন নিজে বাহিনী নিয়ে লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন। তামাবিল স্থলবন্দরে লুটপাটসহ স্থানীয় ভারতীয় চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় স্বপন বাহিনী। তারা জাফলং থেকে প্রায় শত কোটি টাকার পাথর লুট করে নেয়। এদিকে (১৮ অক্টোবর) গোয়াইনঘাট থানায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বাদী হয়ে একটি এবং (১৭ অক্টোবর) সিলেটের পরিবেশ আদালতে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো. মামুনুর রসিদ ২২ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন। দুই মামলায় মোট আসামি ১১৪ জন। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনের আলোকে লুটপাটকারীদের চিহ্নিত করে মামলা করা হয়েছে। পরিবেশগত সংকটাপন্ন (ইসিএ) ঘোষিত এলাকা সিলেটের জাফলংয়ে শতকোটি টাকার পাথর লুটের ঘটনায় এই মামলায় জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহ আলম স্বপনসহ তার বাহিনীর একাধিক সদস্য আসামি হলে তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বাদী হয়ে লুটপাটকারী স্বপন বাহিনীর বিরুদ্ধে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলাও রুজু করেন, কিন্তু স্বপন বাহিনীর তাণ্ডব থামানো যাচ্ছে কোন কিছু করে। স্বপন বাহিনীর সদস্য বিএনপিসহ অঙ্গসঙ্গ গঠনের ব্যানারে থেকে তারে চাঁদাবাজিসহ লুটপাট চালিয়ে গেলে দায় পড়তে শুরু করেছে উপজেলা বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীর উপর। প্রতিবাদ করলে নিজ দলের নেতাকর্মীকে ছাড় দিচ্ছেনা স্বপন বাহিনীর সদস্যরা। তাদের এসব কর্মকাণ্ড বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও একমাত্র শাহ আলম স্বপন ছাড়া তার বাহিনীর বাকি সদস্যরা এখনো দলীয় পদে বহাল রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীর।