আধুনিকতার এই যুগে যান্ত্রিকতার ছোঁযায় মানুষ ভুলতে বসেছে অতীত ঐতিহ্য সংস্কৃতি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মোহিত করা আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভরা সবুজ প্রকৃতিতে ভোরে হরক রকম পাখির কলরবে ঘুম ভাঙ্গা রক্তিম লাল সূর্যোদয়ের সবুজ সুন্দর পরিবেশের কথা।তাইতো বর্তমান সময় মানুষ অবলীলায় প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর চালিয়েছে নির্মমতা।পৃথিবী হারাচ্ছে তার সঠিক ভারসাম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ।তবুও মানুষের হুস হচ্ছে না।কেউ লোভের মোহে কেউবা অসচেতনতার বসে আবার কেউ সাময়িক ফায়দা হাসিলের অর্থ উপার্জনে অকাতরে নষ্ট করছে চারিদিকের প্রকৃতি ও পরিবেশের অমলিন সৌন্দর্য। সবুজ প্রকৃতি ও পরিবেশের সৌন্দর্য বিনষ্ট কারীদের দাপট ও দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে।তাদের রুখবে এমন সাধ্য আছে কার। মানব যখন দানবের রূপ ধারণ করে প্রকৃতি ও পরিবেশকে নষ্ট করছে সৃষ্টি হচ্ছে মানব জীবনের চলার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের।
তবুও থেমে নেই প্রকৃতিমনা মানুষের এক প্রকার যুদ্ধ করে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় কাজ করা। সবুজ প্রকৃতিকে মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে প্রকৃতি ও পরিবেশের গুরুত্ব বুঝাতে শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সৌন্দর্যখ্যাত প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো শোভা পাচ্ছে উপজেলা পরিষদের নির্মাণাধীন ভবনের দেওয়ালে দেওয়ালে ও সীমানা প্রচীরে। বদলে যাচ্ছে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দেয়ালের রূপ।
শুধু ছবির মত দেখতে নয়, বাস্তবতায় ফুটিয়ে তুলতে উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটের স্থানগুলোকে রং তুলির মাধ্যমে এঁকে এঁকে বিভিন্ন সীমানা প্রাচীরের দেয়ালে নির্মাণাধীন ভবনের ওয়ালে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোকে। আর এর স্বপ্নদ্রষ্টা হচ্ছেন উপজেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। যার সুপরিকল্পনায় নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে প্রকৃতির রঙ্গে রঙিত হচ্ছে পুরো উপজেলা পরিষদ। গত দুই সপ্তাহ ধরে কাজ চলছে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত লোকেরা অনেকেই উপজেলা পরিষদের এই নান্দনিক সৌন্দর্য দেখে অবাক হচ্ছেন বিস্ময় প্রকাশ করছেন। এও কি সম্ভব। আবার নিজেরাই উত্তর দিচ্ছেন হ্যাঁ সম্ভব সুন্দর মনের দায়িত্বশীল মানুষ হলে।আমাদের নির্বাহী কর্মকর্তা একজন সুন্দর মনের কর্মঠ দায়িত্বশীল মানুষ বলেই সম্ভব হচ্ছে। দৃশ্যগুলো দেখে কোনরকম কৃপণতা ছাড়াই প্রশংসা করছেন নির্বাহী কর্মকর্তার।যদিও তিনি সরাসরি শুনতে পারছেন না। তীক্ষ্ম বুদ্ধি সম্পন্ন নয়,যে কেউ দেখে সহজে বুঝতে পারছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একজন সুদূর প্রসারী চিন্তাধারার নিখুঁত পরিকল্পনার অধিকারী প্রকৃতি মনা ও সুন্দর মনের মানুষ। এইতো কয়দিন আগে বিভিন্ন দেয়াল অনেকটা নোংরা ছিল।সময়ের ব্যবধানে এমন দৃশ্য হতবাক সবাই। উপজেলায় অবস্থিত সোয়াম ফরেস্ট রাতারগুল, পর্যটন স্পট জাফলং, বিছানাকান্দি,লালাখাল ও লাল শাপলা চা-বাগানসহ উপজেলার বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো স্থান পাচ্ছে দেওয়ালে দেওয়ালে।উপজেলার অনেক বাসিন্দারা দেয়ালে আঁকা প্রাকৃতিক দৃশ্যেগুলোর সামানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে নিজ নিজ ফেসবুকে আপলোড দিয়ে বলছেন আজ এই জায়গায়। অনেকে বাস্তবতা বুঝতে না পেরে সুন্দর সুন্দর মন্তব্যে উৎসাহিত করছেন বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজনকে। অনেকেই আবার আফসোস করে বলছেন বন্ধু এই সুন্দর জায়গাটায় তোমার সাথে যেতে পারলাম না।
সরজমিনে দেখা যায়, গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিগত সময়ের দৃশ্য থেকে বর্তমান সময়ের সৌন্দর্যে এক ভিন্নমাত্রা দৃশ্যমান হয়েছে। বর্তমান উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনিক ভবনের দেয়াল গুলোতে পূর্বে সাধারণ পেইন্টিং করে রাখা হতো সেখানে উপজেলার বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি শিল্পীর তুলিতে অঙ্কন করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়,প্রকৃতি ও পরিবেশের রক্ষণাবেক্ষণে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং গোয়াইনঘাট উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্যপূর্ণভরা সৌন্দর্য মন্ডিত উল্লেখযোগ্য স্থান ও নির্দেশন সমূহের দেশ ও বিদেশে এর পরিচিতির পরিধি বৃদ্ধিতে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন।
তাছাড়া উপজেলার প্রতিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়,উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে প্রকৃতি ও ঐতিহাসিক নির্দেশন সমূহের দৃশ্যাবলী দিয়ে সাজানো হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।যাতে করে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা তাদের উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে খুব সহজেই জানতে পারে এবং বুঝতে পারে এবং তা রক্ষণাবেক্ষণ শুরু থেকেই সচেতন হয়।এই উপজেলার একজন বাসিন্দা ও সচেতন নাগরিক হিসাবে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে।শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই থেমে থাকবে না,সৌন্দর্যের এই কারুকাজ।উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলাতে অংকন করা হবে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ নির্দশন ও প্রকৃতির সুনির্মল মনোমুগ্ধকর সিনারি।যাতে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সুন্দরের পূজারী প্রকৃতিপ্রেমীরা খুব সহজেই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পট সম্পর্কে জানতে পারে এবং তাদের পছন্দসই পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পারে।এতে করে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে সহজেই গোয়াইনঘাট উপজেলার পরিচিতি প্রসারিত হবে বলে মনে করে উপজেলা প্রশাসন।পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে উপজেলার প্রাকৃতিক সম্পদের এবং সুন্দর পরিবেশের গুরুত্ব বহন করবে।তারা নিজ উদ্যোগে উপজেলার প্রকৃতি ও পরিবেশের সৌন্দর্য রক্ষায় এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা প্রশাসনের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এর মূল স্বপ্নদ্রষ্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রশাসক সদ্য পদোন্নিত প্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (কুমিল্লা) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন,প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে গোয়াইনঘাট একটি সমৃদ্ধ উপজেলা।কিন্তু বর্তমানে এই উপজেলার প্রকৃতি ও পরিবেশ বিপন্ন। প্রকৃতি ও পরিবেশের রক্ষণাবেক্ষণে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এবং গোয়াইনঘাট উপজেলার ইতিহাস ঐতিহ্যপূর্ণভরা সৌন্দর্য মন্ডিত উল্লেখযোগ্য স্থান ও নির্দেশন সমূহের দেশ ও বিদেশে এর পরিচিতির পরিধি বৃদ্ধিতে এই উদ্যোগ। তিনি বলেন,উপজেলা কে শুধু নান্দনিক সৌন্দর্য ও পর্যটন আকর্ষণে নয়, একটি সমৃদ্ধ উপজেলায় তৈরি করতে আমার নিরলস প্রচেষ্টা। এই উপজেলার সচেতন নাগরিক যাতে বুঝতে পারে তাদের এই উপজেলায় অবস্থিত প্রকৃতি ও পরিবেশের গুরুত্ব। নিজ থেকে এইসব ঐতিহ্যপূর্ণ নির্দশন সমূহের কদর করতে পারে। মূলত উপজেলার বাসিন্দাদের সচেতন করতে উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। তিনি বলেন, উপজেলার সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় হাইস্কুল ও কলেজ এবং উপজেলার সকল প্রধান প্রধান সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোকে এই সৌন্দর্যের আওতায় নিয়ে আসা হবে।।যাতে করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সুন্দরের পূজারী প্রকৃতিপ্রেমীরা খুব সহজেই উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পট সম্পর্কে জানতে পারে এবং তাদের পছন্দসই পর্যটন স্পট ঘুরে দেখতে পারে।এতে করে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে সহজেই গোয়াইনঘাট উপজেলার পরিচিতি প্রসারিত হবে বলে মনে করে উপজেলা প্রশাসন।পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে উপজেলার প্রাকৃতিক সম্পদের এবং সুন্দর পরিবেশের গুরুত্ব বহন করবে।তারা নিজ উদ্যোগে উপজেলার প্রকৃতি ও পরিবেশের সৌন্দর্য রক্ষায় এগিয়ে আসবে এবং উপজেলার একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করতে পারবে। তিনি আরো বলেন,সুপরিকল্পিত পরিবেশ মানুষের বাসযোগ্য করার প্রধান নিয়ামক। অপরিকল্পিতভাবে গাছ না লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগালে টেকসই ও বাসযোগ্য পরিবেশ গড়ে উঠবে।