ঢাকা ০৯:০৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দালালি করে শূন্য থেকে কোটিপতি সরওয়ার

কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়ার জেলে ছলিমুল্লার ছেলে সরওয়ার আলম। তার বাবার তেমন জায়গাজমি ছিল না। সাগরে মাছ ধরে সংসার চলত তাদের। সরওয়ার একসময় একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে যুক্ত হন কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় দালালি কাজে। তখন থেকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দালালি পেশায় যুক্ত হয়ে যেন পেয়ে গেলেন আলাদীনের চেরাগ। নানা অনিয়ম দুর্নীতি এবং কমিশন বাণিজ্য করে বনে গেলেন কোটি টাকার মালিক। কিনেছেন কোটি টাকার সম্পদও। কক্সবাজার এলএ শাখার চিহ্নিত অনেক দালালকে আইনের আওতায় আনা হলেও এখনো অধরা রয়ে গেছেন পেকুয়ার শীর্ষ দালাল সরওয়ার আলম।

জানা গেছে, এ শাখার বেশ কয়েকজন সার্ভেয়ার ও দালাল সরওয়ার মিলে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তিনি প্রতি সপ্তাহের রোববার সকালে চলে যান এলএ শাখায় দালালি করতে। পুরো সপ্তাহে কমিশন বাণিজ্য করে যে টাকা আয় করেন তা পলিথিন মুড়িয়ে বা ছোট শপিংব্যাগে নিয়ে বৃহস্পতিবার সাগরপথে চলে আসেন পেকুয়ায়। এভাবে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন দালাল সরওয়ার।

সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার এলএ শাখার শীর্ষ দালাল সরওয়ার থাকেন এয়ারকন্ডিশন্ড (এসি) রুমে। তার বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে স্থানীয়দের মনে নানা জল্পনা। তিনি পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মিয়াপাড়ায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন বিলাসবহুল দোতলা বাড়ি। ইতোমধ্যে নিচতলার কাছ শেষ করেছেন। দ্বিতীয়তলার কাজ চলছে। তার নিজ এবং স্ত্রীর নামে কিনেছেন কোটি টাকার সম্পদ। তিনি ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর পেকুয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দলিলমূলে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের গোলাম রহমান নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা দিয়ে ৬ শতক জায়গা, ২০২২ সালের ২৬ জুলাই একই মালিক থেকে স্ত্রীর নামে ৬ লাখ টাকায় ২ শতক জায়গা, এছাড়া একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ১২ লাখ টাকায় ৪ শতক জায়গা, সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ মে স্ত্রী সুফিয়া হাসান রুমকির নামে ১০ লাখ টাকা দিয়ে ২.৫ শতক জায়গা কিনেছেন। এছাড়া কিনেছেন ৫০ লাখ দামের একটি ফিশিং ট্রলার। এভাবে নামে বেনামে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চৌমুহনীর আশপাশে কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরওয়ার ২০১৮ সালের ৫ জুলাই পেকুয়া সমবায় অফিস থেকে আশার আলো সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লি. নামে একটি সমিতির অনুমোদন নেন। এ সমিতির নির্বাহী পরিচালক তিনি। সমিতির অনুমোদন নেওয়ার পর ২২ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এ টাকা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নারীদের কাছে ১৩ শতাংশ সুদের বিনিময়ে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেন। প্রতি সপ্তাহে ঋণের টাকা উত্তোলনের জন্য রেখেছেন একজন ম্যানেজারও। কিন্তু এক বছর আগে পেকুয়া সমবায় অফিস এ সমিতিকে অকার্যকর ঘোষণা করলেও এখনো ঋণের কার্যক্রম চালাচ্ছেন তিনি। এদিকে সমবায় সমিতির ঠিকানা পেকুয়া আলহাজ কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের উল্লেখ করা হলেও সেখানে কোনো অফিসের হদিস পাওয়া যায়নি। সমবায় অফিস থেকে এ সমিতির অনুমোদন নিয়ে অনেকটা সুদের ব্যবসা করছেন সরওয়ার। তার এত টাকার উৎস কোথায়-এমন প্রশ্ন এখন জনমনে।

স্থানীয়রা বলছেন, সরওয়ার এলএ শাখায় দালালি করে কোটিপতি হয়েছেন। এলএ শাখায় তার কাছে জিম্মি রয়েছেন অনেকেই। তাদের অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করছেন না। এত সম্পদের মালিক কেমন করে হয়েছেন জানতে চাইলে সরওয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, আমার ব্যবসা আছে। কী ব্যবসা জিজ্ঞেস করা হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। পরে এলএ শাখায় দালালির বিষয়ে কথা বলতে চাইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিতে বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দালালি করে শূন্য থেকে কোটিপতি সরওয়ার

আপডেট সময় ১০:৪০:২৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামা ইউনিয়নের কাকপাড়ার জেলে ছলিমুল্লার ছেলে সরওয়ার আলম। তার বাবার তেমন জায়গাজমি ছিল না। সাগরে মাছ ধরে সংসার চলত তাদের। সরওয়ার একসময় একটি এনজিওতে চাকরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে যুক্ত হন কক্সবাজার ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখায় দালালি কাজে। তখন থেকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দালালি পেশায় যুক্ত হয়ে যেন পেয়ে গেলেন আলাদীনের চেরাগ। নানা অনিয়ম দুর্নীতি এবং কমিশন বাণিজ্য করে বনে গেলেন কোটি টাকার মালিক। কিনেছেন কোটি টাকার সম্পদও। কক্সবাজার এলএ শাখার চিহ্নিত অনেক দালালকে আইনের আওতায় আনা হলেও এখনো অধরা রয়ে গেছেন পেকুয়ার শীর্ষ দালাল সরওয়ার আলম।

জানা গেছে, এ শাখার বেশ কয়েকজন সার্ভেয়ার ও দালাল সরওয়ার মিলে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তিনি প্রতি সপ্তাহের রোববার সকালে চলে যান এলএ শাখায় দালালি করতে। পুরো সপ্তাহে কমিশন বাণিজ্য করে যে টাকা আয় করেন তা পলিথিন মুড়িয়ে বা ছোট শপিংব্যাগে নিয়ে বৃহস্পতিবার সাগরপথে চলে আসেন পেকুয়ায়। এভাবে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন দালাল সরওয়ার।

সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার এলএ শাখার শীর্ষ দালাল সরওয়ার থাকেন এয়ারকন্ডিশন্ড (এসি) রুমে। তার বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে স্থানীয়দের মনে নানা জল্পনা। তিনি পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মিয়াপাড়ায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন বিলাসবহুল দোতলা বাড়ি। ইতোমধ্যে নিচতলার কাছ শেষ করেছেন। দ্বিতীয়তলার কাজ চলছে। তার নিজ এবং স্ত্রীর নামে কিনেছেন কোটি টাকার সম্পদ। তিনি ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর পেকুয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দলিলমূলে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের গোলাম রহমান নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা দিয়ে ৬ শতক জায়গা, ২০২২ সালের ২৬ জুলাই একই মালিক থেকে স্ত্রীর নামে ৬ লাখ টাকায় ২ শতক জায়গা, এছাড়া একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর ১২ লাখ টাকায় ৪ শতক জায়গা, সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ মে স্ত্রী সুফিয়া হাসান রুমকির নামে ১০ লাখ টাকা দিয়ে ২.৫ শতক জায়গা কিনেছেন। এছাড়া কিনেছেন ৫০ লাখ দামের একটি ফিশিং ট্রলার। এভাবে নামে বেনামে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের চৌমুহনীর আশপাশে কোটি টাকার সম্পদ কিনেছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরওয়ার ২০১৮ সালের ৫ জুলাই পেকুয়া সমবায় অফিস থেকে আশার আলো সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি লি. নামে একটি সমিতির অনুমোদন নেন। এ সমিতির নির্বাহী পরিচালক তিনি। সমিতির অনুমোদন নেওয়ার পর ২২ লাখ টাকা মূলধন নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। এ টাকা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নারীদের কাছে ১৩ শতাংশ সুদের বিনিময়ে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেন। প্রতি সপ্তাহে ঋণের টাকা উত্তোলনের জন্য রেখেছেন একজন ম্যানেজারও। কিন্তু এক বছর আগে পেকুয়া সমবায় অফিস এ সমিতিকে অকার্যকর ঘোষণা করলেও এখনো ঋণের কার্যক্রম চালাচ্ছেন তিনি। এদিকে সমবায় সমিতির ঠিকানা পেকুয়া আলহাজ কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের উল্লেখ করা হলেও সেখানে কোনো অফিসের হদিস পাওয়া যায়নি। সমবায় অফিস থেকে এ সমিতির অনুমোদন নিয়ে অনেকটা সুদের ব্যবসা করছেন সরওয়ার। তার এত টাকার উৎস কোথায়-এমন প্রশ্ন এখন জনমনে।

স্থানীয়রা বলছেন, সরওয়ার এলএ শাখায় দালালি করে কোটিপতি হয়েছেন। এলএ শাখায় তার কাছে জিম্মি রয়েছেন অনেকেই। তাদের অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে সাহস করছেন না। এত সম্পদের মালিক কেমন করে হয়েছেন জানতে চাইলে সরওয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, আমার ব্যবসা আছে। কী ব্যবসা জিজ্ঞেস করা হলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। পরে এলএ শাখায় দালালির বিষয়ে কথা বলতে চাইলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিতে বলে মোবাইল ফোনের সংযোগ কেটে দেন তিনি।