পাকিস্তানে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে সরকার ও বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে এ আলোচনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে- আসলেই কী ইমরান খানের সঙ্গে আঁতাত করেছে পাকিস্তান সরকার?
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দেশটির পার্লামেন্ট ভবনে প্রথমবারের মতো এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। খবর ডন।
এর আগে গত বছরের মে মাসে ইমরান খানকে গ্রেপ্তারের পর সরকার ও পিটিআইয়ের সম্পর্ক তীব্রভাবে খারাপ হয়ে যায়। এই সময়েই পিটিআই একাধিক প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে, যার মধ্যে কিছু সহিংসতায় পরিণত হয়। বিশেষ করে পিটিআইয়ের ‘ফাইনাল কল’ কর্মসূচি রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। পিটিআই দাবি করে, অন্তত ১২ জন সমর্থক নিহত হয়েছে, যদিও পাকিস্তান সরকার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
এদিকে, রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হলে ইমরান খান আলোচনার জন্য একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ একটি সরকারি কমিটি গঠন করেন, যার মধ্যে আছেন সরকারের শীর্ষ নেতারা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। এর মাধ্যমে সরকারি ও পিটিআইয়ের মধ্যে আলোচনার পথ খুলে যায়।
সরকারি কমিটিতে রয়েছেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ইশাক দার, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ, সিনেটর ইরফান সিদ্দিকী, পিপিপি নেতা রাজা পারভেজ আশরাফ, নবীদ কামার, এমকিউএম-পি নেতা ড. খালিদ মকবুল সিদ্দিকী, আইপিপি নেতা আলিম খান, পিএমএল-কিউ নেতা চৌধুরী সালিক হুসেইন এবং বালুচিস্তান আওয়ামী পার্টির সরদার খালিদ ম্যাগসি।
অন্যদিকে, পিটিআইর কমিটিতে রয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ওমর আয়ুব খান, খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুর, সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান সাহেবজাদা হামিদ রেজা, পিটিআই মহাসচিব সালমান আকরাম রাজা এবং সংসদ সদস্য আসাদ কায়সার।
তবে এই আলোচনা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। সমালোচকরা মনে করছেন, পিটিআই ও ইমরান খানের সাথে সরকারের আলোচনায় কিছুই চমকপ্রদ নয়, বরং এটি সরকারের একটি রাজনৈতিক কৌশল হতে পারে। তারা দাবি করছেন, সরকার হয়তো পিটিআইয়ের সহায়তা চাইছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে।
ইমরান খানের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে একত্রিত হওয়ার এবং তাদের সমর্থন পাওয়ার জন্য সরকারের এই পদক্ষেপকে অনেকেই ‘আঁতাত’ হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে, যেহেতু ইমরান খান বারবার বলেছেন, সরকার বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তা তার বিরুদ্ধে সরকারের পলিসির অংশ হতে পারে।
তবে, এই আলোচনা যদি সত্যিই সফল হয়, তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বড় পরিবর্তনের মুখে পড়তে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলছেন, সরকারের সাথে ইমরান খানের আলোচনা শুধু ক্ষমতার দখল নেওয়ার জন্য নয়, বরং জাতীয় স্বার্থে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
এই পরিস্থিতি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এখন দেখার বিষয় হবে, এ আলোচনা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়।