ডাক্তার আসে ১০ টারপর,জরুরি বিভাগে ভোগান্তিতে রোগী কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকাল ৯ টায় ডাক্তার আসার কথা থাকলেও একাধিক রোগী দেখার কক্ষে সকাল ১০ টার পরও দেখা মিলেনি ডাক্তার উপস্থিতি।
২৩ ডিসেম্বর (সোমবার) সকাল ১০ টা ১৫ মিনিটে এমন চিত্র দেখা যায় দেবীদ্বার উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর ১০১,১০২,১০৩ ও ১০৪ নম্বর কক্ষে। ডাক্তার বসার কক্ষে ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায় নেই কোনো ডাক্তার। দুই/ এক জন ডাক্তার ছুটিতে থাকলেও যেন এমন দৃশ্য প্রতিনিয়ত দেখা বলে জানান স্থানীয় ভুক্তভোগী।
এ বিষয়ে একাধিক রোগীর সাথে কথা বলে জানা যায়- রোগীরা সকাল ৯ টায় এসে টিকেট সংগ্রহ করে সিরিয়ালে দাড়িয়ে সকাল ১০ টার সময় পার হলেও ডাক্তার অনুপস্থিতর কারনে ভোগান্তিতে পড়েছে দাড়িয়ে থাকা অনেক রোগী। সিরিয়ালে দাড়িয়ে থাকা ভোগক্তভোগি রোগী উপজেলার মহেশপুর গ্রামের ফুল মিয়া জানান- সকাল ৯ টায় হাসপাতালে টিকেট সংগ্রহ করে দাড়িয়ে রইলাম ১০ টার পর হয়ে গেলো ডাক্তার আসার কোনো খবর নাই,বৃদ্ধ মানুষ দাড়িয়ে থাকতে পারছিনা। ভিংলাবাড়ি গ্রামের ফজর আলী বলেন – গরিব মানুষ বলে সরকারি হাসপাতালে আসি, তবে কখন যে ডাক্তার আসবে জানিনা। বড়শালঘর থেকে আসা আখি আক্তার বলেন,অনেকক্ষণ ধরে টিকেট নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম ডাক্তারের অপেক্ষায়।
এদিকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক না পেয়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। গত ২২ ডিসেম্বর (রোববার) বিকাল সাড়ে ৪টায় এমন ঘটনা দেখা যায়, দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে। চিকিৎসক না পেয়ে তিনজন গুরুতর অসুস্থ রোগী বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ৬জন রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। এর মধ্যে একজন কিশোর তিনজন নারী ও দুইজন পুরুষ। এই ৬জন রোগীর মধ্যে ৫জন গুরুতর অসুস্থ্য ও ১জন মারামারি করে আহত। ওই সময়ে হাসতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের দায়িত্বে ছিলেন ডা. সাইফুল ইসলাম শুভ। তবে তিনি জরুরি বিভাগে অনুপস্থিত প্রায় দেড় ঘন্টা। জরুরি বিভাগ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে জরুরি বিভাগে অনুপস্থিত কর্তব্যরত চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম শুভ। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময়ে তিনি বেসরকারি একটি ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাকে জরুরি বিভাগের সরকারি নম্বর থেকে ১০বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে রোগীদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পাশ্ববর্তী একটি প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে একজন চিকিৎসক এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর বিকাল ৫টা ৪৫মিনিটে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশ করে সাইফুল ইসলাম শুভ। তখন তার কাছে রোগীর স্বজনরা জানতে চায় এই ১ঘন্টা তিনি কোথায় ছিলেন ? তিনি বলেন, আমি ফোনে বলেছি আমার আসতে দেরি হবে। দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেননি। এরপর তিনি ১০ মিনিট জরুরি বিভাগে অবস্থান করে আবারও বাহিরে চলে যান। আধা ঘন্টার পর তিনি জরুরি বিভাগে আসলে জনরোষে পড়েন। জরুরি বিভাগের সহকারি নার্স আবদুল লতিফ বলেন, আমি ১০ বার কল দিয়েছি, স্যার কল রিসিভ করেননি। পরে একবার কল ধরে বলছেন ১০ মিনিটের মধ্যে আসবেন।
জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা একটি সংস্থায় কর্মরত মরিচাকান্দা গ্রামের মো. জাকির হোসেন ভূইয়া ক্ষোভ নিয়ে বলেন, আমি প্রায় ৩০ মিনিট ধরে জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছি, আমার মাথা ফেটে গেছে, কিন্তু কোন চিকিৎসক নাই। আমি জানতে চাই এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক কই থাকেন। আমি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
উপজেলার রসুলপুর থেকে আসার রোগীর স্বজন প্রফেসর ইব্রাহীম খলিল বলেন, আমার ভাতিজা প্রচন্ড শ্বাসকষ্টে ভোগছে। তাকে আমি জরুরি বিভাগের নিয়ে আসি। এখানে এসে অক্সিজেন লাগানোর পর কোন চিকিৎসক পায়নি। ২০ মিনিট অপেক্ষার পর স্থানীয় সাংবাদিকদের অনুরোধে ডা.সাদ্দাম হোসেন এসে জরুরি বিভাগের রোগীদের চিকিৎস সেবা দেন। ওই সমেয় তিনি না এলে আমার ভাতিজা হয়তো মারাই যেত।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনদেরও অভিযাগ রয়েছে। একাধিক রোগী জানান,যথাসময়ে হাসপাতালে
চিকিৎসক পাওয়া যায় না। ডিউটি চলাকালীন চিকিৎসকরা বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন। ডাক্তার কোথায় গেছেন জানতে চাইলে আমাদেরকে বলা হয়, বাহিরে টেবিলে গিয়ে বসেন, স্যার আসবে। ডাক্তার ওনার মর্জিমত জরুরি বিভাগে আসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা শুক্কু মিয়া বলেন, আজকে দুপুর ২টার পর আমি একজন রোগী নিয়ে জরুরি বিভাগে আসি। ওই সময়ে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম শুভকে না পেয়ে জানতে চাই কোথায় আছেন, পরে হাসপাতালের এক ব্যক্তি জানান, তিনি মেডিকমপ্লেক্স নামে একটি ডায়াগনিস্টিক সেন্টারে আছেন। পরে আমি সেখানে গিয়ে ডা.সাইফুল ইসলাম শুভ’র কাছে চিকিৎসা করাই। জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন না করা খুবই দুঃখজনক।
এ বিষয়ে ডা.সাইফুল ইসলাম শুভ বলেন,পারিবারিক একটু সমস্যার কারনে আমি বাহিরে ছিলাম। তিনি এ বিষয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা.মহিবুস সালাম খান বলেন, সোমবার সকাল ১০টার পরও ডাক্তার রুমে না থাকার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ডা. সাইফুল ইসলাম শুভ’র বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে অবগত হয়েছি। উভয় বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সংবাদ শিরোনাম ::
জরুরি বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় ভোগান্তিতে রোগীরা
- মো:আশিকুর রহমান রনি
- আপডেট সময় ০৮:৩৯:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- ৫০৮ বার পড়া হয়েছে
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ