ঝলমলে হেসে উঠেছে সকালের রোদ। গত দুইদিনের তুলনায় তাপমাত্রা বেড়ে কমেছে শীত। স্বস্তি মিলছে জনমনে। রোববার (২২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা শনিবার ও শুক্রবার রেকর্ড হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল থেকে শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই সকালে দেখা মিলছে রোদের। তাপমাত্রা বাড়ার সাথে শীতের মাত্রাটাও কিছুটা কমেছে। সকালে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও বেলা অবধি পাওয়া যায় না রোদের উষ্ণতা। তবে শীতে দুর্ভোগে রয়েছে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। এদের মধ্যে পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর ও অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর কষ্টেই যাপিত হচ্ছে দিনযাপন। শীতের কারণে জীবিকার তাগিদে তাদেরকে কাজে যেতে দেখা গেছে।
চা শ্রমিক, পাথর শ্রমিক ও দিনমজুররা জানান, সকালে বরফের মতো কনকনে শীত। কাজ করতে গেলে হাত-পা অবশ হয়ে আসে। কিন্তু কী করবো, পেটের দায়ে আর পরিবারের কথা চিন্তা করে কাজে বের হতে হয় আমাদের। একই কথা বলছেন নারী পাথর শ্রমিকরা। তারা বলছেন, তীব্র শীতের কারণে তাদেরও কাজে যেতে কষ্ট হচ্ছে। ঘর সংসার সামলিয়ে তাদেরকে জীবিকার তাগিদে কাজে যেতে হচ্ছে। শীতের কারণে তাদের অনেক সময় কাজে যেতে দেরি হলে মহাজনরা অনেক সময় কাজে নিতে চান না।
স্থানীয়রা জানান, মাঘের শীতে পোহাচ্ছি আমরা। বিকেল গড়ালে শুরু হয় হিমেল হাওয়া। সে হাওয়ায় প্রবাহিত হতে থাকে কনকনে শীত। সন্ধ্যার পর থেকেই বাড়তে থাকে শীতের তাণ্ডব। মধ্যরাত থেকে ভোর অবধি পর্যন্ত বরফের হিমাঞ্চল হয়ে উঠে এ জেলা।
স্থানীয়রা জানায়, দিনের চেয়ে রাতের শীত বেশি মনে হয়। পুরো রাত বরফের মতো লাগে। যেন আমরা বরফের দেশে বাস করছি।এদিকে শীতে বেড়েছে নানান দুর্ভোগ। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিভিন্ন শীতজনিত রোগও। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে জরুরী বিভাগ, আন্ত:বিভাগে ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন শীতজনিত রোগীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। এসব রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা সদর হাসপাতালে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। চলতি মাসের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ও নিয়েছেন ২৭৫ জন। এদের মধ্যে ২২০ জনই শিশু। বাকি ৫৫ জন নারী-পুরুষ। এ হাসপাতালে শ্বাসকষ্ট রোগী এসেছিল ১১৫ জন। জ্বরে ৫৩ জন।
চিকিৎসকরা বলছেন, শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়ে থাকে। এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলে বলে পরামর্শ চিকিৎসকদের।
জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, জেলায় গত দুদিনের তুলনায় তাপমাত্রা বেড়েছে। আজ রোববার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত শুক্রবার-শনিবার ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।