চাকরিতে স্থায়ী হওয়া সত্ত্বেও বিধিমালা অনুযায়ী পেনশনসহ বিভিন্ন ভাতা থেকে বঞ্চিত বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) কর্মচারীরা। এজন্য বিটিসিএলের এমডি মো. রফিকুল মতিনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতাকে দায়ী করেছেন স্থায়ী কর্মচারী কল্যাণ সমিতির নেতারা।
মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সরকারি সুবিধাবঞ্চিত প্রায় তিন হাজার কর্মচারীদের পক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এসময় স্থায়ী কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির ও সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম সেলিমসহ সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংগঠনের সভাপতি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, বিটিসিএলের এমডি মো. রফিকুল মতিনের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমরা স্থায়ী হওয়ার পরও অবসর ভাতাসহ প্রাপ্য অন্যান্য সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দীর্ঘদিন আন্দোলন করার পরও পাওনা পাচ্ছি না। এমনকি ২০০৮ সাল থেকে প্রায় ৪০০ জন কর্মচারী মৃত্যুবরণ ও অবসর নিয়েছেন। তাদের আনুতোষিকের কোনো ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় তাদের শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে সাবেক টি অ্যান্ড টি একটি লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠান ছিল। সময়ের প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানটিতে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত হলেও তৎকালীন সরকার বিভিন্ন কমিটির অজুহাতে লোক নিয়োগ বন্ধ রাখে। ১৯৮২ সাল থেকে আমরা ওই প্রতিষ্ঠানে শ্রম, মেধা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ে অবিশ্বাস্য ভূমিকা পালন করে আসছি। তৎকালীন বিটিটিবিতে ৪ থেকে ৫ হাজার শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও আমাদের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে আত্মীকরণ করা হয়নি। ধারাবাহিক আন্দোলনের পর রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে ২০০৮ সালের জুলাইয়ে বিটিটিবি বিটিসিএলে রূপান্তর হওয়ার পর ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি অর্গানোগ্রামের ১২তম গ্রেডে শূন্য পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ‘চাকরি বিধিমালা-২০১১’ দ্বারা নিয়োগ পত্রে শর্ত উল্লেখ থাকলেও তা যথাযথ অনুসরণ করা হয়নি।
হুমায়ুন কবির বলেন, নিয়োগ পত্রের শর্তে শিক্ষানবিশ কাল একবছর পার হওয়ার পর স্থায়ীকরণের কথা উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়েছে তিনবছর ছয়মাস পর। অর্গানোগ্রামের ১১ ও ১০তম গ্রেডের হাজার হাজার শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতির কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ইতোমধ্যে আমাদের অনেক কর্মচারী অবসরগ্রহণ ও মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী মামলা প্রত্যাহার, মামলা প্রত্যাহার প্রক্রিয়াধীন ও মামলা বিহীন ওয়ার্কচার্জড কর্মচারীদের শূন্য পদে আত্মীকরণ প্রক্রিয়া ঝুলে আছে।
অবসরপ্রাপ্ত স্থায়ী কর্মচারীদের অর্জিত ছুটি, অর্ধবেতনে ছুটি নগদায়ন, কল্যাণ তহবিল ও যৌথবীমা চালু করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বেশকিছু দাবি উপস্থাপন করা হয়। সংগঠনটির দাবিগুলো হলো:
১. সাবেক বিটিটিবিতে কর্মরত ওয়ার্কচার্জড কর্মচারীদের বিটিসিএলে ন্যস্ত করণের আগে বাংলাদেশ টি অ্যান্ড টি শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেল ইউনিয়ন (সিবিএ-বি-১৮২০) কর্তৃক শিল্প বিরোধে উত্থাপিত ৩০০ মাসের আনুতোষিক প্রদান।
২. বিটিসিএলে যোগদানকৃত অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত্যুবরণকারী স্থায়ী কর্মচারীদের নিয়োগপত্রে শর্তানুযায়ী
২০০৮ সালের ১ জুলাই থেকে গণনাপূর্বক আনুতোষিক প্রদান করা।
৩. মামলা প্রত্যাহারকারী, মামলা প্রত্যাহার প্রক্রিয়াধীন ও মামলা বিহীন ওয়ার্কচার্জড কর্মচারীদের দ্রুত শূন্য পদে আত্মীকরণ করা।
৪. অর্জিত ছুটি, অর্ধবেতনে ছুটি নগদায়ন, কল্যাণ তহবিল ও যৌথবীমা অবিলম্বে চালু করা।
৫. বিটিসিএল বর্তমান অর্গানোগ্রামের ১১ ও ১০ তম গ্রেডের পদ ও পদবীসমূহ অক্ষুণ্ন রেখে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া।
৬. বিটিসিএলে চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী কর্মচারীদের দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বিটিসিএল কল্যাণ তহবিল থেকে তাৎক্ষণিক এক লাখ টাকা প্রদান করা।