নওগাঁয় ভোরের চেতনা পত্রিকার জেলা প্রতিনিধির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তিলকপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন অনিয়ম সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ (অডিও,ভিডিও ও ফটো সংরক্ষিত)। নওগাঁ সদর উপজেলার ৪নং তিলকপুর ইউনিয়ন নিয়ে প্রায় দুই মাস অনুসন্ধান চালিয়ে মিলেছে নানা অনিয়মের প্রমাণ। দূর্নিতী আর অনিয়ম করার জন্যই যেন ইউনিয়ন পরিষদের অবকাঠামো সাজিয়েছে চেয়ারম্যান রেজাউল করিম।
অফিস সহকারী কাম-কম্পিটার অপারেটার সারিকা জামান মিম জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে গ্রহণ করে ১হাজার ১২ শত টাকা। উদ্দোক্তা হান্নান খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি অনলাইন করার জন্য সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে গ্রহণ করে প্রায় মোট ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা এছাড়াও অনলাইন ডিজিটাল জন্ম-নিবন্ধন করতে গুণতে হয় ৩০০ টাকা। উদ্দোক্তার সাথে এসব নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন, মেম্বার চেয়ারম্যান ছাড়া আমি কী ইউনিয়ন থেকে ১০ টাকা উঠাতে পারবো। এসব অনিয়মেই শেষ নয় রয়েছে- ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্দি ভাতা, কাবিখা, টিআর সহ সব ধরণের প্রকল্প। চেয়ারম্যানের নির্বাচনি কর্মী হওয়ায় নূর-নবী নামক এক অযোগ্য ব্যক্তিকে (নেই বয়স, নেই শিক্ষাগত যোগ্যতা) গ্রাম পুলিশে নিয়োগও দেওয়া হয়। দূর্নিতী আর অনিয়ম ছাড়া যেন চলেই না নওগাঁর তিলকপুর ইউনিয়ন পরিষদ।
গত ২৮ শে আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের ভিজিডি প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগীদের চাউল বিতরন করেন তিলকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম। গ্রাম আদালতের রুমে থেকে যায় প্রায় ৫০ বস্তা (৩০ কেজি ওজনের) চাউল। বিষয়টি জানতে পারলে আমরা ২৯ শে আগস্ট সরজমিনে যাই দেখার জন্য। আমরা সরজমিনে দেখতে পাই পরিষদের ঘর থেকে চাউল ব্যাপারীর কাছে সরাসরি চাউল বিক্রয় হচ্ছে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে (ভিডিও সংরক্ষিত)। এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এই চাউলগুলো গ্রাম পুলিশদের। আমাদের অনুসন্ধানে যার কোন লিগ্যাল ডকুমেন্টস্ পাওয়া যায় নাই।
তিলকপুর ইউনিয়নের এক গ্রাম পুলিশ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তিনি বলেন, চাউল বিক্রির বিষয়ে চেয়ারম্যান জড়িত প্রতিবার চাউল বিতরণের সময় এসব অনিয়ম হয়। উদ্দোক্তা হান্নান নিজের ইচ্ছামতো সরকারি ফির থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে থাকে নিশ্চয় এর পেছনে কোন শেলটার কাজ করছে একা তো এগুলো করা সম্ভব নয়। (সাক্ষাৎকারের গোপন ভিডিও সংরক্ষিত)।
ভিজিডি ও ভিজিএফ চাউল যেহেতু ট্যাগ অফিসারদের সম্মুখে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে সেহেতু আমরা তিলকপুর ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার সাইদুর রহমানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, ট্যাগ অফিসার হিসেবে আমাকে চাউল বিতরণের সময় উপস্থিত থাকা এবং আমার ও চেয়ারম্যানের সাক্ষরিত প্রতিবেদন মহিলা অধিদপ্তরে জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান রেজাউল করিম কবে চাউল দিবেন সে বিষয়ে আমাকে ইনফর্ম করেন না। তিনি তার নিজের ইচ্ছামতো এসব বিতরণ করে থাকেন। প্রতিবেদন জমা দেওয়া ও ভিজিডি প্রকল্পের অনিয়মের ব্যাপারে মহিলা অধিদপ্তরের সদর উপজেলা প্রোগ্রাম অফিসার বলেন, তারা কবে বিতরণ করবেন সে তারিখ আমাদের জানান না।
বারবার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়ে বললেও তারা প্রতিবেদন জমা দেন না। আমরা তো আর তাদের সকোস করতে পারি না। এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে হলে ইউএনও অথবা জেলা প্রশাসক মহোদয় নিতে পারেন। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেন, নওগাঁর তিলকপুর ইউনিয়ন নিয়ে বেশ কিছু অনিয়মের কথা শুনতে পাচ্ছি তার প্রেক্ষিতেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি অনিয়মের ব্যাপারে সত্যতা মিললে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে