বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী বিজ্ঞানীদের একজন হিসেবে আবারও স্বীকৃতি পেয়েছেন মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি গবেষক অধ্যাপক ড. এমএ হান্নান। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্বখ্যাত অ্যানালিটিক্স প্রতিষ্ঠান ‘ক্লারিভেট’, নবায়নযোগ্য শক্তি নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণার এবং ওয়েব অব সায়েন্স টিএমের একাধিক শীর্ষ ১ শতাংশ উদ্ধৃত পেপারের ওপর ভিত্তি করে প্রকৌশল বিভাগে ২০২২ এবং ২০২৩ সালে পর পর দুবার ড. এমএ হান্নানকে হাইলি সাইটেড গবেষক (এইচসিআর) যাহা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের এক হাজার জনের মধ্যে ১ জন (০.০১ শতাংশ) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
ড. এমএ হান্নান বর্তমানে মালয়েশিয়ার সানওয়ে ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে শক্তি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলে ডিস্টিংগুইসড অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত আছেন।
এক বিবৃতিতে জানা যায়, ৬৯ দেশের গবেষকরা এই স্বীকৃতি পান। তাদের মধ্যে একজন এমএ হান্নান। একজন বাংলাদেশি হিসেবে মালয়েশিয়াতে কেবল তিনিই এবারের স্বীকৃতি তালিকায় আছেন।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১১ বছরে ড. এমএ হান্নানের গবেষণার ওপর ভিত্তি করে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এমএ হান্নান ধারাবাহিকভাবে স্কুপাস ইনডেক্সে ১৬ হাজার ৩৯২টি উদ্ধৃতিসহ ৪১৩টি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। ড. এমএ হান্নানের ২৮ বছরেরও বেশি শিল্প, একাডেমিক শিক্ষা এবং গবেষণা কার্যক্রমে অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং সম্মেলনের কার্যক্রমে প্রকাশিত ৪৫০টিরও বেশি নিবন্ধের লেখক বা সহ-লেখক।
সানওয়ে ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক সিব্র্যান্ড পপেমা, অধ্যাপক এমএ হান্নানকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ক্লারিভেট হাইলি সাইটেড গবেষক (এইচসিআর) তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া মহান কৃতিত্ব এবং সম্মানের! অধ্যাপক এমএ হান্নানের এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য সানওয়ে ইউনিভার্সিটি গর্বিত।
ইউনিটেনের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নূর আজুয়ান আবু ওসমান বলেন, এই সাফল্য ইউনিটেনকে বৈজ্ঞানিক গবেষণার উৎকর্ষতায় বৈশ্বিক মঞ্চে এনেছে।
অধ্যাপক ড. এমএ হান্নানের এ অর্জনের খবর মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা বার্নামাসহ শীর্ষস্থানীয় সবকটি সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করেছে। এ নিয়ে মালয়েশিয়ান ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
ড. এমএ হান্নান ১৯৯০ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক প্রকৌশলে স্নাতক করেন। ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) থেকে এমএসসি ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বহলা গ্রামের মোহাম্মদ হোসেন ও হালিমা হোসেনের ছেলে ড. এমএ হান্নান।
অনুভূতি জানাতে গিয়ে ড. এমএ হান্নান যুগান্তরকে বলেন, একজন উচ্চ উদ্ধৃত গবেষকের স্বীকৃতি মহান সম্মানের। এটি অবশ্যই আমাকে ও আমার বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও অনেক বেশি স্বীকৃতি দেবে, মনোবল বাড়াবে। আশা করি আমার দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশকেও গর্বিত করবে।
তিনি বলেন, আমার আকাঙ্ক্ষা হলো গবেষণা পরিচালনা, উচ্চমানের প্রশিক্ষণ এবং মিশনের নেতৃত্ব প্রদান, যার লক্ষ্য গবেষণার অখণ্ডতা, শ্রেষ্ঠত্ব এবং আর্থ-সামাজিক শক্তি পরিবর্তন, চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বিশ্বব্যাপী অবস্থান অর্জনের দিকে প্রভাবের একটি শক্তিশালী সংস্কৃতি রচিত করা।
নতুন ও উদীয়মান গবেষক-বিজ্ঞানীদের জন্য ড. এমএ হান্নানের উপদেশ, মানুষের মনের কৌতূহলই হলো সর্বোত্তম গবেষণার হাতিয়ার। তাই কৌতূহল এবং সহজাত প্রবৃত্তির উদ্রেককারী প্রশ্নগুলো অনুসরণের পরামর্শ থাকবে। এতে সাফল্য-স্বীকৃতি সবই ধরা দেবে। সেই সঙ্গে পরিশ্রম, সততা, সহযোগিতা এবং সহকর্মীদের প্রতি সম্মানের সঙ্গে আচরণেও সচেতন থাকতে হবে।