এ যেন বাংলাদেশের ভূখণ্ডের মাঝে আরেকটি দেশ, যেখানে ভয় ,সংকোচ, দ্বিধা ,মানবতা, বিবেক ,কোনটার স্থান এখানে নাই।ক্ষমতা অধিপত্য চাঁদাবাজি সন্ত্রাস মাদক তাদের জীবনের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন।রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা , সংসদ ভবন, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এলাকায় প্রায় ৪৮ হাজার বাসিন্দার একটি ক্যাম্প মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প।এমন কোন মাদকদ্রব্য নেই যা এখানে মিলবে না, ঢাকার যে কয়েকটি হট-স্পট মাদক কারবারের জন্য কুখ্যাত তার মধ্যে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প সবার শীর্ষে বর্তমানে শীর্ষে থাকা মাদক ব্যবসায়ী বুনিয়া সোহেল তার সহযোগী সহ গ্রেফতারের পরেও মাদক সেবনকারীরা ক্যাম্পের দিকে হাত বড়ালেই সহজেই পাচ্ছে মাদক।
উর্দুভাষীদের বসবাসের স্থান হিসেবে পরিচিত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প। তবে এই ক্যাম্পকে রাজধানীবাসীর কাছে ভিন্নভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে জেনেভা ক্যাম্পের কাচ্চির দোকান কামাল বিরিয়ানি ও বোবা বিরিয়ানি। শুধু কাচ্চি বিরিয়ানির জন্যই বিখ্যাত নয় দোকান দুটি। বিরিয়ানির দোকানের আড়ালে মাদক ও ছিনতাইয়ের বড় নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
কামাল বিরিয়ানির আড়ালে মাদক কারবার কামাল বিরিয়ানি জেনেভা ক্যাম্পের অন্যতম জনপ্রিয় একটি নাম। বিহারিদের মধ্যে তো বটেই, এর জনপ্রিয়তা আছে বাঙালিদের মধ্যেও। ১৪০ টাকায় ফুল প্লেট গরুর মাংসের কাচ্চির ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে পুরো রাজধানীতে।
কামাল বিরিয়ানির মূল ব্যবসায়ী কামাল ও তার শালা তৎকালীন স্বৈরাশাসক শেখ হাসিনার পতনের আগে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ঢাকা ১৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের আস্থাভাজন কাউন্সিলর সৈয়দ নুর ইসলাম রাষ্ট্রনের হয়ে ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে নিশংস বর্বরচিত হয়ে উঠে তিল্লি সাইদ ও তার উর্দুভাষী ক্যাম্পসীদের নিয়ে। তিল্লি সাঈদ নামটি যেন মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম।
ও ছেলে ইরফানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সৈয়দপুরিয়া বাবু যাকে দিয়ে রক্তাক্ত গুম এমনকি হত্যা বিষয়টি খুবই স্বাভাবিক ভাবেই করানো সম্ভব এমন একটি কিলারের সাথে সম্পর্ক গভীর হওয়ার কারণে ইরফানকে সবাই আতঙ্ক মনে করতো এছাড়াও শীর্ষ মাদক কারবারি ভুঁইয়া সোহেলের অধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে এই কামাল বিরানি পুরো পরিবারটি।
মাদকের আধিপত্যকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য জেনেভা ক্যাম্পের সাম্প্রতিক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন, গোলাগুলি অগ্নি সংযোগে ও হত্যা কান্ডে অংশ নেওয়া বুনিয়া সোহেলের বাহিনীর সাথে এক হয়ে কাজ করে এই প্রতিষ্ঠানটির পুরো পরিবার।
সূত্র জানিয়েছে, কামাল বিরিয়ানির একাধিক কর্মচারী নিজেদের চাকরি টিকিয়ে রাখতে তিল্লি সাইদ ও ইরফানের নেতৃত্বে মাদক কারবারে সম্পৃক্ত হতে হচ্ছে৷ এছাড়া ইরফান মাদক কারবারিদের ব্যবসার স্বার্থে অর্থ বিনিয়োগ করছেন বলেও জানিয়েছেন জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা।বোবা বিরিয়ানির আড়ালে ছিনতাই-কিশোর গ্যাং জেনেভা ক্যাম্পের আরেক নামকরা কাচ্চির দোকান ফাইজানে মদিনা, যা বোবা বিরিয়ানি নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আলতাফ ও তার ভাই মো: কামরান সহ তার পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে ও আছে নানান অভিযোগ। নিজেদের অধিপত্য বিস্তারের জন্য আফতাব তার নিজ বাহিনী নিয়ে বোমা নিক্ষেপ ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন ভাবে প্রতিপক্ষকে আক্রমন করতে দেখা যায় নেতৃত্বে দেওয়া আফতাবকে।
এছাড়াও জেনেভা ক্যাম্পের আশপাশের এলাকায় ছিনতাইকারী চক্রের নিয়ন্ত্রক কামরান। ছিনতাইয়ের পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেন তিনি। নিজে ব্যবসা না করলেও বড় ভাই আফতাবের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের জন্য সহযোগিতা করে আসছে ছোট ভাই কামরান।যৌথবাহিনীর নজরদারি ও তৎপরতার মুখে সম্প্রতি আত্মগোপনে থাকলেও সেলাদেরকে দিয়ে বিক্রি করছে মরণ নেশা সব ধরনের মাদক।
পারিবারিকভাবে জেনেভা ক্যাম্পে প্রভাবশালী একটি পরিবার বোবা বিরিয়ানি । ফলে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহসও পায় না কেউ। এই ক্ষমতকে পুঁজি করে হাতে নিয়েছেন চোয়া সেলিম ,শাহ আলম, ইমতিয়াজ, ও মনূদের মত বড় বড় মাদক ব্যবসায়ীদেরকে।
ক্যাম্পের মূল গেটে ঢোকার আগেই দেখা মেলে অনেক মানুষের সরগরম এবং ক্যাম্পের ভিতরে থমথমে পরিবেশ, ক্যাম্পের গেটের সামনে ডজন খানেক মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হ্যান্ডকাফ পরিহিত অবস্থায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। এরা সবাই মরণ নেশা ইয়াবা হিরোইন ও গাঁজায় আসক্ত এরা সকলে নেশাগ্রস্থ।
স্থানীয় কয়েকজন সাথে কথা বলে জানতে পারি প্রতিনিয়ত পুলিশ র্যাব সেনাবাহিনীর কাছে যেভাবে গ্রেফতার হচ্ছে এসব চিহ্নিত মাদক সেবনকারী, মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে মাদক বিক্রি করেই যাচ্ছে।বোবা বিরিয়ানি ও কামাল বিরিয়ানির পৃষ্ঠপোষকতায় ক্যাম্পের আজকে এই পরিণতি তারা বিরিয়ানি ব্যবসার আড়ালে সহজে বেশি টাকার লাভের আশায় ভয়ংকর এই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে এবং তৈরি হচ্ছে এক একজন মাদক সেলার ও ডিলার । হাজারো মাদক ব্যবসায়ীদের কে গ্রেপ্তার করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে প্রকৃত খলনায়ক।
মাদকের হাতছানি সারাদেশে, শুধু শহরে নয় গ্রামের ছড়িয়ে পড়েছে মাদক। তার বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও সম্ভাবনা।সর্বনাশা মাদক ধ্বংস করে একটি মানুষের শরীর মন জ্ঞান বিবেক ও তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তার পরিবারের সব স্বপ্নকে এবং তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। শুধু পরিবারকে নয়, মাদকের কালো থাবা ধ্বংস করে একটি সমাজকে, একটি জাতিকে এবং পরবর্তী সময়ে এটি বৃহৎ আকার ধারণ করে একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। তরুণ তাজা প্রাণের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ায় পিছনে পড়ছে সমাজ আর ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের অবক্ষয়।
প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির অসামঞ্জস্যতা। মাদককে হয়তোবা পুরোপুরি নির্মুল করা সম্ভব নয় তবে নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই সম্ভব কেননা যারা মাদক বিক্রেতা বা ক্রেতা তারাও মানুষ, তারা সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবনে ফিরে আসুক এটাই প্রত্যাশা।