বেগম রোকেয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন ৩৮ লাখ টাকার বিনিময়ে। এমন অভিযোগ সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. হাসিবুর রশীদ ও সাবেক প্রক্টর এবং ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক মোঃ গোলাম রব্বানী বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানীতে দেখা যায়,বেরোবি’র সাবেক শিক্ষার্থী সিমা আক্তারের সম্প্রতি whatsapp এর একটি স্ক্রিনশট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
যাতে বলা হয়েছে- আসসলামু আলাইকুম স্যার, স্যার আমি সীমা, এটা আমার নতুন নাম্বার স্যার মেনেজ করেছো কি?-স্যার ২৮ লাখ করেছি -না না ৩৮, আমি একা হলে কম হতো এখানে ভিসি, এক্সপার্ট, নেতা, আরো অনেকে আছে সবাইকে ম্যানেজ করতে হবে-জি¦ স্যার এরশাদ লোন করবে। ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে স্যার। আপান শুধু দেখেন আমার যেনো হয়। বাসায় সবাই টেনশন করে।যা এরশাদ হলো সীমা আক্তারের স্বামী । যিনি ৩০.১১.২০২৩ তারিখে ব্যাংক থেকে ১৮ লাখ টাকা লোন করেন। সাবেক উপাচার্য ড. হাসিবুর রশিদের আমলে গোলাম রব্বানীর নেতৃতে নিয়োগ বাণিজ্যে¡র একটি চক্র গড়ে ওঠে। রাব্বানী প্রক্টর হওয়ায় সহজে ভিসিকে চাপ প্রায়োগ করতেন। তৎকালিন ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে এসব অপকর্ম করতেন ছাত্রলীগের তৎকালিন সভাপতি ও গোলাম রব্বানীর একই জেলার বাসিন্দা হওয়ায় এবং তার উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন । ২২ মে ২০২২ সালে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ১টি প্রভাষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী আবেদনের যোগ্যতা না থাকলেও সীমা আক্তারকে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দেন ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৎকালিন বিভাগীয় প্রধান ও বিভাগের প্লানিং কমিটির চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী অপর দিকে মো. রবিউল ইসলাম নামের প্রার্থীকে নিয়োগ পক্রিয়া সর্ম্পূণ করেন বলে অভিযোগ ও রয়েছে। আরো অনুসন্ধানে যে দেখা যায়, মো. রবিউল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম.এ পাশ করেন ১৫ বছর আগে। তিনি বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংকে চাকুরি করতেন। সকলের প্রশ্ন ১৫ বছর আগে পাশ করা এমন প্রার্থী কি করে লিখিত পরীক্ষায় উর্ত্তীন হন?২২ মে ২০২২ এর বিজ্ঞপ্তিতে সীমা আক্তার এর শর্ত পূরণ হয়নি বলে গোলাম রব্বানী নিয়োগ থেকে বিরত ছিলেন। তার চক্রকে কাছে লাগিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে শিক্ষক নিয়োগের শর্ত শিথিল করে সীমা আক্তারকে নিয়োগ দানের সুযোগ করে দেন। ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ সালে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে একটি প্রভাষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে নিয়ম অনুযায়ী ১টি পদের জন্য একজনকে নিয়োগের নিয়ম থাকলেও এক চক্রটি একাধিক নিয়োগ প্রদান করেন। একজন শিক্ষক শিক্ষা ছুটির আবেদন করার ৬ মাস পরে তা অনুমোদ দেয় প্রশাসন। বিশ্ব বিদ্যালয়ে নিয়ম অনুযায়ী ২ জন শিক্ষক ছুটিতে গেলে ১ জন শিক্ষক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দিতে পারবে।গোলাম রব্বানী ও তার চক্র ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সোহাগ আলী ছুটিতে না গেলেও ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ নিয়োগ বোর্ডে ১টি পদ থাকলেও অবৈধ ভাবে একাধিক প্রার্থী নিয়োগের উদ্দেশ্যে ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বিভাগের শিক্ষকের চাহিদা দিয়ে প্লানিং করে প্রশাসনে পাঠান এক্ষেত্রে প্লানিং কমিটির অন্য দুজন মেম্বারকে এক প্রকার চাপ প্রয়োগ করে স্বাক্ষর নেন। প্রশাসন থেকে যখন জানতে পারেন সোহাগ আলী ছুটিতে না গেলে এই প্লানিং অবৈধ তখন তড়িঘড়ি করে ৯ সেপ্টেম্বরের নিয়োগ বোর্ড স্থগিত করা হয়। ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে সোহাগ আলীকে এক প্রকার বাধ্য করে শিক্ষা ছুটিতে যাওয়ার জন্য। তিনি গোলাম রব্বানী ও প্রশাসনের চাপে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শিক্ষা ছুটি নেন। গোলাম রব্বানী ঐ দিনই বিভাগে প্লানিং করে শিক্ষকের চাহিদা দিয়ে একাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ তৈলী করেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন সংস্থাপন শাখার ঐ কর্মকর্তা। প্লানিং কমিটির সদস্যদের পদোন্নতির আশা দেখিয়ে জোর করে স্বাক্ষর নেন। ১৯ সেপ্টেম্বর ২৩ নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন মোট ৪৭ জন। যেখানে লিখিত পরীক্ষায় পাস করেন মোট ৭ জন প্রার্থী। ভিসিসহ গোলাম রব্বানীর পাতানো বোর্ডে ১ টি পদের বিপরীতে কম যোগ্যতা সম্পূর্ণ একাধিক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। যা ২৪ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কার্যকর হয়। সীমা আক্তার ছাড়াও অপরজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম। অথচ এই বিভাগের শিক্ষার্থী হয়েও নিজ বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষায় ডাক পাননি জোবেদা আক্তার।প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ঐ শিক্ষার্থী যোগ্য প্রার্থী হিসেবে আবেদন করলেও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তাঁকে ডাকা হয়নি। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী চাকরি প্রার্থী জোবেদা আক্তার। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করেন। জানা যায়, জোবেদা আক্তার ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালে স্নাতকে (সম্মান) সিজিপিএ ৩.৬২ (৪ স্কেলে) এবং ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর সিজিপিএ ৩.৫৫ (৪ স্কেলে) পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এ কারণে ওই বছর তিনি প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পান।এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জোবেদা জানিয়েছেন, স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন করি। কিন্তু গত ২১ সেপ্টেম্বর সেই নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর নিয়োগ সম্পন্ন করা হলেও আমাকে কোনো চিঠি, মেসেজ বা মোবাইল কল করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, আমাকে মেসেজ ও কল করা হয়েছিল। কিন্তু আমি মোবাইল বার বার চেক করেছি। গ্রামীণফোন অফিস থেকে এক মাসের কল ও মেসেজ লিস্টও বের করে দেখেছি। সেপ্টেম্বর মাসের ১ থেকে ২৫ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কল বা মেসেজ আসেনি। এ ঘটনায় বিচার চাওয়ার পর ভুক্তভোগীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরি ‘খেয়ে দেওয়া’র হুমকি দেন তৎকালীন প্রক্টর প্রক্টর শরিফুল ইসলাম ও ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী। ওই নিয়োগ প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়।
মূলত সীমা আক্তার ও ছাত্রলীগের নেতা মনিরুল ইসলামকে নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত জোবেদা আক্তারকে নিয়োগ পরীক্ষায় ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের যুগ্ন সম্পাদক কে নিয়োগ দিয়েছেন রাব্বানী। শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ে এই নিয়োগ বাস্তবায়ন করা হয়। আর একজন প্রার্থী সীমা আক্তার যে পূর্বের নিয়মে আবেদন করার যোগ্যতা রাখেন না তাকেও তখন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল এমনকি তিনি লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। জানা যায় ২০২২ সালের শিক্ষক নিয়োগে গোলাম রব্বানীর বি টিম ছিল এই সিমা আক্তার। যদি রবিউল ইসলামকে নিয়োগ দিতে না পারতে তাহলে বি টিম সিমাকে নিয়োগ দিতেন । যেখানে আবেদন করার যোগ্যতা রাখেনা সেখানে ভাইভা পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল এই গোলাম রব্বানীর পাতানো নিয়োগ বোর্ড। এমনকি অপর একজন বহি:সদস্য চট্রগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক যিনি বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রভাবশালী শিক্ষক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তার পূর্ব পরিচিত। ভিসি থেকে শুরু করে গোলাম রব্বানীর নেতৃত্বে এক চক্রটি নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত ছিল। শুধু ইতিহাস বিভাগ নয় শোনা যায় অন্যান্য বিভাগেও এই চক্রটি নিয়োগ বাণিজ্য করে থাকতো।
এ বিষয় সিমা আক্তারের নিকট একাধিকবার অফিসিয়াল ফোন থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি।