ঢাকা ০১:০২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কুমিল্লায় তায়কোয়ানদো প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ সম্পন্ন গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পরিকল্পনা শিল্পঘাতক: আইইএফ দেশীয় সিগারেট শিল্প বৈষম্যের শিকার জুলাই বিপ্লবে নিহত মাহবুবের পরিবারের পাশে তারেক রহমান ‘নিত্যপণ্যে ভ্যাট বসিয়ে ফ্যাসিস্টের রাস্তায় হাঁটছে সরকার’ বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ চলতি বছরেই নির্বাচন সম্পন্ন করা জরুরি ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে বদরগঞ্জ পৌরসভার ঠিকাদারী কাজের টেন্ডার স্থগিত বদরগঞ্জে একতা ইটভাটার বৈধ কাগজপত্র না থাকায় দেড় লাখ টাকা জরিমানা

যান্ত্রিক নগরে এক চিলতে গ্রাম

হায়দরাবাদ (ভারত) থেকে: ঘরের পাশে বসে মা-মেয়ে খোশগল্প করছে। মেয়ের মাথায় চুলের বেণী বাঁধছেন মা, মেয়েও আহ্লাদ করে কিছু একটা বলছে মাকে।

পাশেই আরেক ঘরে কাজের ফাঁকে আলাপ-সালাপ চলছে গেরস্থ-বধূদের, বিছানায় খুনসুটি করছে কচি-কাচারা। কোনো বাড়িতে চলছে সুঁই-সুতার বুননের কাজ। কোনো গৃহবধূ আবার চুলায় রান্না বসিয়ে করছেন তরকারি কাটাকুটি। অদূরের বিলে মাছ শিকার করছে জেলে। দূর থেকে যেন ভেসে আসছে কামার ঘরের টুং-টাং শব্দও।
তবে সত্যিকারে নয়, এমন গ্রামীণ জীবনের চিত্র দেখা গেল প্রদর্শনীতে। তাও ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের ব্যস্ত নগর হায়দরাবাদে একেবারে যানজটপ্রবণ এলাকার কেন্দ্রে, ‘গ্রাম জাদুঘর’-এ।

স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়া আসার আগে এমনই সুন্দর-সরল জীবন যাপিত হয়েছে জলে-বিলে ভরপুর সবুজে মোড়ানো জনপদে। কিন্তু সেই দিন এখন দেখা মেলা ভার। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক আর ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল ডিভাইস গ্রামকেও করে ফেলেছে যান্ত্রিক। নগরের কংক্রিট আর পিচঢালা সড়কের নিচে এই প্রাণোচ্ছল ঘর-সংসার তো কবেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।

এমনই বিবর্ণ সময়ে এই অভিনব গ্রাম জাদুঘর ছড়িয়ে যাচ্ছে মুগ্ধতা। এক প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তাদের আগের প্রজন্মগুলোর জীবনযাত্রাকে। যে-ই জাদুঘরে ঢুকছিলেন, একের পর এক শিল্পকর্মে যেন ঘোরে পড়ে যাচ্ছিলেন।

শহরের হাইটেক সিটি এলাকার সড়কে বাস থেকে নামতেই বর্ণিল সাজে সজ্জিত শিল্পরামাম কারুশিল্প গ্রামের ফটক। সন্ধ্যার লাল-নীল বাতি আরও আলোকজ্বল করে তোলে ফটক। ভেতরে যেতেই চোখে পড়ে হস্তশিল্পের নানা পণ্যের পসরা। বিচিত্র রকমের নানা রং-ঢংয়ের শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, পার্স থেকে শুরু করে অলঙ্কার, গৃহসজ্জার সামগ্রী, আসবাবপত্র, এমন কিছু বাকি নেই, যা এই কারুশিল্পগ্রামে মিলবে না। এসব পণ্যের কিছু তেলেঙ্গানা রাজ্যের, কিছু এসেছে অন্ধ্র প্রদেশ থেকে, আবার কিছু এসেছে উড়িষ্যা বা তারও দূরের কোনো প্রান্ত থেকে।

প্রায় ২০ বছর আগে চালু হওয়া শিল্পরামামের খ্যাতি এখন হায়দরাবাদ ছাড়িয়ে গোটা ভারতে। সেজন্য পর্যটকরা হায়দরাবাদে এলে এই কারুশিল্প গ্রামটিতে এক চক্কর দিয়েই যান।

ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে হায়দরাবাদে গড়ে উঠেছে শিল্পরামাম কারুশিল্প গ্রাম। এরই অংশ এই ‘গ্রাম জাদুঘর’।

‘গ্রাম জাদুঘর’র মতো শেকড়সন্ধানী প্রদর্শনী অনেককে বারবার টেনে আনে এই কারুশিল্প গ্রামে। অনেকে প্রথমে নিজে এলেও পরে নিয়ে আসেন বাচ্চা-কাচ্চাসহ পরিবারকে।

তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক এন ভেঙ্কটেরশ্বর রাও বাংলানিউজকে বলছিলেন, ‘আমরা যানজটের নগরে এমন এক আয়োজন করেছি, যেখানে এলে মানুষ গ্রামের প্রশান্তি পাবে। গ্রামকে অনুভব করবে। গ্রামীণ জীবনের স্মৃতিতে ফিরে যেতে পারবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম তাদের আগের প্রজন্মের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যেসব পণ্যের পসরা বসেছে, সবই হাতে তৈরি। মোদ্দাকথা, পুরো কারুশিল্প গ্রামটিই যান্ত্রিক নগরে এক চিলতে গ্রাম হয়ে উঠেছে। ’

বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা শিল্পরামামে শত শত পণ্যের দোকান আর গ্রাম জাদুঘরের পাশাপাশি আছে অ্যাম্ফিথিয়েটার, স্কাল্পচার বা ভাস্কর্য পার্ক, ঝর্না ও রক মিউজিয়াম এবং চিত্ত বিনোদনের এলাকা।

অ্যাম্ফিথিয়েটারে দেড় হাজার লোক বসে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করতে পারেন।

শিল্পরামামের প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকতেই সবুজ ময়দানে চিত্তবিনোদনের এলাকা আছে। যেখানে শোভা পাচ্ছে মোটিফ ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য।

শিল্পরামাম খোলা থাকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। টিকিট কেটে যে কেউ এই কারুশিল্প গ্রামে প্রবেশ করতে পারেন।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কুমিল্লায় তায়কোয়ানদো প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণ সম্পন্ন

যান্ত্রিক নগরে এক চিলতে গ্রাম

আপডেট সময় ১১:০৪:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৩

হায়দরাবাদ (ভারত) থেকে: ঘরের পাশে বসে মা-মেয়ে খোশগল্প করছে। মেয়ের মাথায় চুলের বেণী বাঁধছেন মা, মেয়েও আহ্লাদ করে কিছু একটা বলছে মাকে।

পাশেই আরেক ঘরে কাজের ফাঁকে আলাপ-সালাপ চলছে গেরস্থ-বধূদের, বিছানায় খুনসুটি করছে কচি-কাচারা। কোনো বাড়িতে চলছে সুঁই-সুতার বুননের কাজ। কোনো গৃহবধূ আবার চুলায় রান্না বসিয়ে করছেন তরকারি কাটাকুটি। অদূরের বিলে মাছ শিকার করছে জেলে। দূর থেকে যেন ভেসে আসছে কামার ঘরের টুং-টাং শব্দও।
তবে সত্যিকারে নয়, এমন গ্রামীণ জীবনের চিত্র দেখা গেল প্রদর্শনীতে। তাও ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের ব্যস্ত নগর হায়দরাবাদে একেবারে যানজটপ্রবণ এলাকার কেন্দ্রে, ‘গ্রাম জাদুঘর’-এ।

স্মার্টফোন বা সোশ্যাল মিডিয়া আসার আগে এমনই সুন্দর-সরল জীবন যাপিত হয়েছে জলে-বিলে ভরপুর সবুজে মোড়ানো জনপদে। কিন্তু সেই দিন এখন দেখা মেলা ভার। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক আর ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া এবং ডিজিটাল ডিভাইস গ্রামকেও করে ফেলেছে যান্ত্রিক। নগরের কংক্রিট আর পিচঢালা সড়কের নিচে এই প্রাণোচ্ছল ঘর-সংসার তো কবেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে।

এমনই বিবর্ণ সময়ে এই অভিনব গ্রাম জাদুঘর ছড়িয়ে যাচ্ছে মুগ্ধতা। এক প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে তাদের আগের প্রজন্মগুলোর জীবনযাত্রাকে। যে-ই জাদুঘরে ঢুকছিলেন, একের পর এক শিল্পকর্মে যেন ঘোরে পড়ে যাচ্ছিলেন।

শহরের হাইটেক সিটি এলাকার সড়কে বাস থেকে নামতেই বর্ণিল সাজে সজ্জিত শিল্পরামাম কারুশিল্প গ্রামের ফটক। সন্ধ্যার লাল-নীল বাতি আরও আলোকজ্বল করে তোলে ফটক। ভেতরে যেতেই চোখে পড়ে হস্তশিল্পের নানা পণ্যের পসরা। বিচিত্র রকমের নানা রং-ঢংয়ের শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, পার্স থেকে শুরু করে অলঙ্কার, গৃহসজ্জার সামগ্রী, আসবাবপত্র, এমন কিছু বাকি নেই, যা এই কারুশিল্পগ্রামে মিলবে না। এসব পণ্যের কিছু তেলেঙ্গানা রাজ্যের, কিছু এসেছে অন্ধ্র প্রদেশ থেকে, আবার কিছু এসেছে উড়িষ্যা বা তারও দূরের কোনো প্রান্ত থেকে।

প্রায় ২০ বছর আগে চালু হওয়া শিল্পরামামের খ্যাতি এখন হায়দরাবাদ ছাড়িয়ে গোটা ভারতে। সেজন্য পর্যটকরা হায়দরাবাদে এলে এই কারুশিল্প গ্রামটিতে এক চক্কর দিয়েই যান।

ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে হায়দরাবাদে গড়ে উঠেছে শিল্পরামাম কারুশিল্প গ্রাম। এরই অংশ এই ‘গ্রাম জাদুঘর’।

‘গ্রাম জাদুঘর’র মতো শেকড়সন্ধানী প্রদর্শনী অনেককে বারবার টেনে আনে এই কারুশিল্প গ্রামে। অনেকে প্রথমে নিজে এলেও পরে নিয়ে আসেন বাচ্চা-কাচ্চাসহ পরিবারকে।

তেলেঙ্গানা রাজ্য সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক এন ভেঙ্কটেরশ্বর রাও বাংলানিউজকে বলছিলেন, ‘আমরা যানজটের নগরে এমন এক আয়োজন করেছি, যেখানে এলে মানুষ গ্রামের প্রশান্তি পাবে। গ্রামকে অনুভব করবে। গ্রামীণ জীবনের স্মৃতিতে ফিরে যেতে পারবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম তাদের আগের প্রজন্মের জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানতে পারবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যেসব পণ্যের পসরা বসেছে, সবই হাতে তৈরি। মোদ্দাকথা, পুরো কারুশিল্প গ্রামটিই যান্ত্রিক নগরে এক চিলতে গ্রাম হয়ে উঠেছে। ’

বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা শিল্পরামামে শত শত পণ্যের দোকান আর গ্রাম জাদুঘরের পাশাপাশি আছে অ্যাম্ফিথিয়েটার, স্কাল্পচার বা ভাস্কর্য পার্ক, ঝর্না ও রক মিউজিয়াম এবং চিত্ত বিনোদনের এলাকা।

অ্যাম্ফিথিয়েটারে দেড় হাজার লোক বসে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করতে পারেন।

শিল্পরামামের প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকতেই সবুজ ময়দানে চিত্তবিনোদনের এলাকা আছে। যেখানে শোভা পাচ্ছে মোটিফ ও পোড়ামাটির ভাস্কর্য।

শিল্পরামাম খোলা থাকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। টিকিট কেটে যে কেউ এই কারুশিল্প গ্রামে প্রবেশ করতে পারেন।