নারী নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলছে।২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে সারা দেশে কন্যাশিশুসহ ৪৮৬ জন নারী নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এই সময়ে ২৩৬২ জন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনের মডারেটর ছিলেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সংগঠনের পক্ষে লিখিত বক্তৃতা তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা।
লিখিত বক্তৃতায় রেখা সাহা বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৬টি জাতীয় দৈনিক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ১০৩৬ জন কন্যাসহ ২৩৬২ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গত ১১ মাসে নারী ও কন্যার বিরুদ্ধে নানা ধরনের সহিংসতার মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে নারী হত্যার ঘটনা। বিভিন্ন কারণে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে শিশু কন্যাসহ ৪৮৬ জন নারীকে। দীর্ঘসময়ে অব্যাহতভাবে নারী আন্দোলনের পরও নারীর প্রতি সহিংসতার এই পরিসংখ্যান অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে অনেক আইন ও নীতিমালা হওয়ার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও বাস্তবিক অর্থে সামাজিক পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। এই পরিবর্তনের কাজটি দীর্ঘমেয়াদি।
এই ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সব পর্যায়ের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন, প্রতিকারের আন্দোলন এবং নারীর প্রতি ইতিবাচক সংবেদনশীল, মানবিক সংস্কৃতি গড়ার আন্দোলনকে সমন্বিতভাবে অগ্রসর করে নেওয়াসহ তরুণ প্রজন্মকে নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে তিনি বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে ২৫টি সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নারীবান্ধব অনেক আইন থাকলেও বাস্তবে তার সঠিক প্রয়োগ নেই। এই পরিস্থিতিতে পারিবারিক আইনগুলোর সংস্কারের পাশাপাশি বিচার ব্যবস্থায় সংস্কারসহ জেন্ডার জাস্টিস সিস্টেম বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে। এসব বিষয়ে রাষ্ট্রকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে তার শাস্তি নিশ্চিত করতে সাক্ষী সুরক্ষা আইন সংস্কার হওয়া জরুরি।
লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার অপ্রকাশিত ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনার চেয়ে অনেক বেশি। এটাই ভয়াবহ। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ কেবল নারী আন্দোলনের কাজ নয়। সহিংসতাকে শূন্য সহিষ্ণু করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ধর্ষণের ঘটনার বিচার কোনো ধরনের সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা হওয়া সম্পূর্ণ বেইআইনি। প্রচলিত আইনের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
মডারেটরের বক্তব্যে সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার প্রকাশিত ঘটনা সামগ্রিক ঘটনার চেয়ে আংশিক। তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নারীর প্রতি সহিংসতার মামলাগুলোর রায় ঘোষণা হতে দীর্ঘমেয়াদি সময় লাগে। অনেক সময় এর মধ্যে অপরাধীরা বিদেশে পালিয়ে যায় এবং সহিংসতার শিকার নারী ন্যায্য বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন- এই বিষয়গুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এ সময় তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের জন্য রাষ্ট্রের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।