‘আঘাতের চিহ্নে জাগ্রত সংগ্রাম, নতুন সূর্যের প্রত্যয়ে’ এ স্লোগানকে ধারণ করে সন্তান ও অভিভাবক ফোরামের উদ্যোগে একটি সন্তান ও অভিভাবক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের উদ্দেশ্যে ছিল জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতার সুচিকিৎসা এবং আহত ও শহিদ পরিবারের দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন নিশ্চিত করা এবং তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ সুগম করা।
এতে সভাপতিত্ব করেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সমাজকর্মী অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ।
শারমিন এস মুরশিদ তার বক্তব্যে জুলাই অভ্যুত্থানের সংগ্রামীদের ও তাদের পরিবারের পাশে থাকা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ৭১ দেখেছি। আজ যখন ২০২৪ দেখি, তখন ৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্জন্ম দেখতে পাই। যে ব্যক্তি মৃত্যুকে ভয় পায় না, একদিন পৃথিবী তাকেই ভয় পাবে। আমরা ক্ষমতায় বসতে আসিনি, আমরা দায়িত্ব পালনের জন্য এসেছি। এবারের সরকার সেই সেবারকার সরকার নয়। আমরা নতুন দায়িত্ববোধ, নতুন প্রত্যয়ে জনগণের সেবা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আহতদের চিকিৎসার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে অবশ্যই নিতে হবে এবং সেটা খুব শিগগিরই।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে কোনো সরকার এ ধরনের অত্যাচার করেনি আগে যেটা গত সরকার করেছে। এমন একটা সরকার তৈরি হয়েছিল যারা ভেবেছিল তাদেরকে কেউ উৎখাত করতে পারবে না। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর এখন অনেক চক্রান্ত শুরু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যত আহত নিহত হয়েছে তার সঠিক তালিকা আমরা এখনো করতে পারি নাই। গত সরকারের আমলে আমরা দেখেছি অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই কাজটি রিপিট করবেন না।’
আহতদের চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘অনেক আহতই আছেন যারা অর্থাভাবে পারিবারিকভাবে চিকিৎসা করতে পারছে না। এই অবস্থায় এই দায়িত্ব রাষ্ট্রকে অবশ্যই নিতে হবে। এবং খুব শিগগিরই সেটা নিতে হবে। ২০০০ নিহতের পরিবার ও ১৯ হাজারের বেশি আহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সরকারের এই দায়িত্ব গ্রহণ করা উচিত। যেই আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা আবার এই নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেটি যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সন্তান অভিভাবক ফোরামকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি তার বক্তব্য শেষ করেন।’
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ড. আব্দুল মঈন খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি, ও অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, উপ-উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও বক্তব্য দেন ডা. শাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত, সাধারণ সম্পাদক, জি-৯, মানস নন্দী, সভাপতি, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন ঢাকা মহানগর, শিরীন পারভীন হক, সভানেত্রী, নারীপক্ষ, কবি মোহন রায়হান, আহ্বায়ক, জাতীয় কবিতা পরিষদ, তাসলিমা আখতার, সভাপতি, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি, ডা. কাজী সাইফউদ্দীন বেন্নূর, আহ্বায়ক, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ।
এ সম্মেলনের অনুষ্ঠানসূচীতে ছিল শহিদ ও আহত পরিবারের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি, শহিদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন নিয়ে আলোচনা, আন্দোলনের চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করে উপস্থিত অতিথিদের বিমোহিত করে রাখেন ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, বটতলা, সমগীত, মাভৈ, টিম অ্যাজ অমিক্স ও সাইদুর রহমান বয়াতি।