সরকারি প্রকল্পের অর্থ লোপাট করে গাজীপুরে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলার অভিযোগ, শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় পল্লি উন্নয়ন সঞ্চয় ব্যাংকের ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ সোহাগের বিরুদ্ধে কোটি টাকার লোন আত্মসাতের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকের লোন ও সঞ্চয় প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে গোপনে ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সরকারি প্রকল্প “একটি বাড়ি একটি খামার” এর আওতায় অনেক ভুক্তভোগীর হিসাবের বইতে কিস্তি জমার এন্ট্রি নেই, আবার কারও ক্ষেত্রে লোন পরিশোধের রেকর্ড থাকা পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। ফলে সদস্যরা প্রতারিত হয়েছেন এবং ব্যাংকের প্রতি আস্থা মারাত্মকভাবে নষ্ট হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, আত্মসাৎ করা টাকায় সুলতান মাহমুদ সোহাগ গাজীপুরে ব্যবসা ও সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ
১. রাজন গাজী, পিতা: মোহাম্মদ সালমান গাজী, গ্রাম: সোনিকান্দি, চরভাগা। তিনি জানান, ২০১৭ সালে ২০ হাজার টাকার লোন নিয়ে তা নিয়মমাফিক পরিশোধ করেন। কিন্তু হঠাৎই দেখা যায়, তার নামে পরপর ৭০ হাজার টাকা করে দুটি লোন তোলা হয়েছে। অথচ তিনি বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন এবং বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
২. তাসলিমা, যিনি ৫-৬ বছর আগে মারা গেছেন, তার নামেও ৭০ হাজার টাকার লোন তোলা হয়েছে।
৩. আসমা আক্তার, স্বামী: শুকুর আলী দেওয়ান, গ্রাম: সোনিকান্দি। ৪. পিয়ারা আক্তার, স্বামী: আফজাল মোল্লা, গ্রাম: সোনিকান্দি। ৫. ডলি আক্তার, স্বামী: ইমাম হোসেন গাজী, গ্রাম: সোনিকান্দি। ৬. নাজমা, স্বামী: মাস্টার মইনুদ্দিন সিকদার, গ্রাম: সোনিকান্দি।
তারা অভিযোগ করেন—
ম্যানেজার, ক্যাশিয়ার এবং মাঠ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ সোহাগ আমাদের নামে লোন তুলে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর। এখন অন্যায়ভাবে আমাদের নামে যে লোন তোলা হয়েছে, তার দায় কেন আমরা নেবো? আমরা এর সঠিক বিচার চাই এবং দায়ী কর্মকর্তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করছি।”
স্থানীয়রা জানান, এক পর্যায়ে মাঠ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ সোহাগ সদস্যদের সঞ্চয় ও লোনের হিসাবের খাতা জোরপূর্বক নিয়ে যান।এ মাঠ কর্মকর্তার নাম সুলতান মাহমুদ সোহাগ গাজী পিতা:আলাউদ্দিন গাজী গ্রাম গৌরাঙ্গ -বাজার, চরভাগা। এতে ভুক্তভোগীদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। তারা দ্রুত দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সুষ্ঠু তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানান।
ভেদরগঞ্জ পল্লি উন্নয়ন সঞ্চয় ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমি শুনেছি। তবে আমি নতুন এসেছি। সুলতান মাহমুদ সোহাগের ব্যাপারে কিছু জানি না। তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন। শরীয়তপুর পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা পিন্টু লাল দে জানান, ঘটনাটি সত্য। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা একটি অডিট টিম পাঠায়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ঘটনার সময় ভেদরগঞ্জ শাখায় কর্মরত ম্যানেজার আনিসুজ্জামান থেকে জানতে চাইলে তিনি জানান,ঘটনা সত্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা অডিট টিম পরিচালনা করেছেন। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি জানান, এ দায় আমার একার নয় আমি কাগজ পত্র চেক করে স্বাক্ষর করি পরবর্তীতে ক্যাশিয়ারের উপর কাজ বর্তায়।
এ বিষয়ে মাঠ কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ সোহাগের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ভেদরগঞ্জের পল্লি উন্নয়ন সঞ্চয় ব্যাংকের লোন আত্মসাত কেলেঙ্কারিতে প্রায় ৬০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষদের কাঁধে অজান্তে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ভুয়া ঋণের বোঝা। ভুক্তভোগীরা এ ঘটনায় দ্রুত বিচার এবং দোষী কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
শাহাজাদী সুলতানা 






















