সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় বিজিবি ক্যাম্পে হামলা-লুটপাটকারী এক ইউনিয়ন বিএনপি নেতার দাপটে অতিষ্ট এলাকার শান্তিকামী মানুষজন। উপজেলা জুড়ে ওই বিএনপি নেতা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সে উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম শাহিন আহমদ। ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হওয়ার পর সারাদেশের মানুষ বিজয় উল্লাসে মেতে উঠেন। কিন্তু শাহিন ওই সময় লুটপাট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। গত ৫ আগস্ট বিকালে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে সোনারহাট বিজিবি ক্যাম্পে শাহিনের নেতৃত্বে হামলা ও লুটপাট করা হয়। এসময় লুটপাটকারীরা বিজিবি ক্যাম্প থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার সরকারি সম্পদ লুটের পাশাপাশি দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিজিবির সদস্যরা আহত হন। পরে বিজিবির সদস্যরা তাদের আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছুড়েন। পরে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় সোনারহাট বিজিবি ক্যাম্পের হাবিলদার রহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে গোয়াইনঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় শাহিনসহ তার সহযোগীদের আসামি করা হয়। এরপর তারা মামলা থেকে রক্ষা পেতে ভিবিন্ন প্রকার তালবহানা করতে থাকে। কিন্তু সে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে সে পশ্চিম জাফলং ও মধ্য জাফলং ইউনিয়নে তার ত্রাসের রাজত্ব বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, শাহিন গত ৫ আগস্টের আগে স্থানীয় হাদারপর বাজারে গরুর দালালী করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু ৫ আগস্টের পাল্টে যায় শাহিনের চেহরা। রাতারাতি সে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।
তারই নেতৃত্বে পশ্চিম জাফলং ও মধ্য জাফলং ইউনিয়নে ভারতীয় চোরাচালানকারীদের নিয়ে সে একটি গ্রুুপ তৈরি করা হয়েছে। এই গ্রুপের মূলহোতা কথিত যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন ও যুবলীগ নেতা সবুজ। এই গ্রুপের নেতা হলেন শাহিন। পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় থানা পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ফলে সে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি নৌকার মাঝিদের কাছ থেকে চাঁদা দাবির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এই ভিডিও যারা ফেসবুকে পোষ্ট করে প্রতিবাদ জানিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শাহিন থানায় অভিযোগ করছেন বলে জানা গেছে। অথচ একজন পলাতক আসামি প্রকাশ্যে থানায় আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। এনিয়ে থানা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গত ৫ আগস্টের শাহিন বেপরোয়া ভাবে এলাকায় লুটপাট শুরু করেছে। তার বিরুদ্ধে দলীয় কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না। ফলে থানা পুলিশও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। বিধায় সে পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সাধরণ সম্পাদকের পদকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ সুবিদা নিচ্ছে।
অভিযোগে প্রকাশ খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলারশীপ অবৈধ ভাবে হাতিয়ে নিয়েছে শাহিন। কিন্তু সে মাতুরতল বাজারে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও সে দলীয় প্রভাব খাঁিটয়ে তার নিজ এলাকা মনরতল বাজারে বিতরণ করে আসছে। সেই বিতরণেও ব্যপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কার্ডধারীদের ৩০ কেজি চাল দেওয়ার কথা থাকলেও ২৫ কেজি চাল দিয়ে থাকে। প্রতি কার্ড থেকে ৫ কেজি করে চাল আত্মসাৎ করছেন সে।
পশ্চিম জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সাধরণ সম্পাদক এস এম শাহিনের এহেন অনিয়ম-দূনীতি ও লাগামহীন চাঁদাবাজি বন্ধ গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।
বিএনপি নেতা শাহিনের বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, বিএনপিতে কোন চাঁদাবাজের স্থান নেই। চাঁদাবাজ যেই হোক না কেন দলীয় নির্দেশ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে শাহিনের বিরুদ্ধে এখনো আমাদের কাছে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেনি। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরকার তোফায়েল আহমদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার কোন রেসপন্স পাওয়া যায়নি।