সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা এখন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে চোরাচালানের চাঁদাবাজরা। চোরাকারবারীর চেয়ে চাঁদাবাজদের সংখ্যা বেশি এমনটাই মনে করছেন উপজেলার সচেতন মহল। আওয়ীমী লীগ সরকারের আমলে যেমন ছিলো বর্তমানে তার চেয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজ চক্র। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে চাঁদাবাজদের গডফাদাররা পরিবর্তন হয়েছেন। কিন্তু চাঁদাবাজরা পরিবর্তন হয়নি। এরা এখন বিএনপির গডফাদারদের হয়ে কাজ করছে।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালানোর পরই শুরু হয়েছে গোয়াইনঘাটে লাইন দখল করা। সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক নেতা বর্তমান গোয়াইনঘাট উপজেলা বিএনপির সদস্য আরিফ ইকবাল নেহাল তিনি এখন চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রক। পুরো উপজেলা জুড়ে রয়েছে তার চাঁদাবাজ চক্র। তিনি নতুন কোন চাঁদাবাজ নয়।
তিনি গোয়াইনঘাটের ৯নং ডৌবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১৯ সালে আরিফ ইকবাল নেহালকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগ। এলজিএসপির-৩ স্কীমের অনুমোদনের পূর্বেই ১২ লক্ষ ৩ হাজার টাকা আত্মসাতের দুর্নীতির প্রমাণ মেলায় তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এরপর থেকে এলাকার মানষের কাছে তার কোন মূল্য নেই। সে সরকারের টাকা আত্মসাত ও জনগনের সম্পদ লুটপাটকারী হিসাবে চিহিৃত হয়। তবুও বিএনপি থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়নি। বর্তমানে তিনি বিএনপির সিনিয়র নেতা পরিচয়ে দাপটের সাথে উপজেলা জুড়ে চাঁদাবাজি করে চলেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট এর পরই তিনি সিলেট নগরীর আম্বরখানার একটি আবাসিক হোটেলে চোরাকারবারীদের সাথে একটি গোপন মিটিং করেন। এরপর থেকে শুরু হয় লাইন দখল করার কার্যক্রম। প্রথমেই উপজেলার শীর্ষ লাইনম্যান আলোচিত সামসুদ্দিন উরপে সাম কালা ও তার সহযোগী আল-আমিনকে কৌশলে হাতে নেন। অবস্তান করেন নগরীর বারুতখানা এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে। সেখান থেকে শুরু হয় তাদের চোরাচালানের মিশন। এই মিশনে অংশ নেন গোয়াইনঘাটের বাসিন্দা ও জেলা যুবদলের পদদারী দুই নেতা। তাদেরকে সাথে নিয়ে উপজেলা জুড়ে লুটপাট শুরু করেন। তাহার লুটপাট নির্যাতনে অতিষ্ট এলাকার শান্তিকামী মানুষজন বুধবার (১৩ নভেম্বর) উপজেলার ফতেহপুর বাজারে প্রতিবাদ সভা করেন। সেখানে বক্তারা আরিফ ইকবাল নেহালকে কঠোর হুশিয়ারী প্রধান করেন। এছাড়া গোয়াইনঘাট থানার প্রতিটি ভিট অফিসারদের সাথে নেহালের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। যার ফলে তিনি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে তাহার নিজস্ব মানুষ রয়েছে। এই মানুষ গুলো দিয়েই সে চাঁদাবাজি করায়। উপজেলাবাসীর কাছে এরা লাইনম্যান হিসাবে চিহ্নিত এবং পুলিশের অবৈধ আয়ের হাতিয়ার। বিদায় পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করছে। তারা কোন প্রকার অভিযান পরিচালনা করছে না। তাই বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার সদস্যদের নিয়ে চোরাচালানের বিরুদ্ধে অভিযান দিয়ে ভারতীয় চোরাই পণ্য আটক করছে। চোরাচালানকারীদের সাথে আরিফ ইকবাল নেহালের একাধিক ফোন আলাপ সংরক্ষিত রয়েছে।
তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার জন্য গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম ইব্রাহিম আলীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগে যোগদানের চেষ্টা করেন। তখন আওয়ামী লীগে যোগদানের প্রক্রিয়া বন্ধ ছিলো তাই তিনি যোগ দিতে পারেননি। কিন্তু তিনি বিএনপির হয়েও তার খালাতো ভাই গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মুজিবুর রহমানের মাধ্যমে নিয়মিত চাঁদা নিয়েছেন। উপজেলা যুবলীগ নেতা গুলাম কিবরিয়া রাসেল নেহালকে বিকাশের মাধ্যমে এসকল টাকা পরিশোধ করতেন। এছাড়া নেহালের ভাই গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা লংপুর গ্রামের বাসিন্দা হেলালের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন থেকে নদীর পাড় কেটে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। এই মাটি উত্তোলনে বাধা দেওয়ায় নেহাল ও হেলালের বাহিনীর লোকজনের হামলার শিকার হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস কারো হয়নি। এ পর্যন্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সকল নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে কিন্তু নেহালের ভাই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হেলালের বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়নি। একথা ছাত্র-জনতার হামলাকারীদের নেতৃত্ব দানকারী ও আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায় এই কথিত বিএনপি নেতা আরিফ ইকবাল নেহাল।