ঢাকা ০১:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যা, গৃহশিক্ষকের মৃত্যুদণ্ড

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যার দায়ে অংবাচিং মারমা ওরফে বামং (৪৬) নামে একজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার রাঙামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক এ ই এম ইসমাইল হোসেন এ রায় দেন

বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা ও পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২ ধারার অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেন। এছাড়া তাকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটির আদালতে কোনো আসামির এটাই প্রথম মৃত্যুদণ্ডাদেশ
রায়ে বলা হয়, ২০১৯ সালে ২ ফেব্রুয়ারি কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের পূর্ব কোদালা এলাকায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মিতালী মারমা বদ্দ পাড়ায় তার মামার বাসায় প্রাইভেট পড়তে যায়। এ সময় আসামি প্রাইভেট শিক্ষক অংবাচিং মারমা ওরফে বামং অন্য শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে মিতালীকে আরও পড়ানোর অজুহাতে রেখে দেয়।

একপর্যায়ে একা পেয়ে আসামি ধর্ষণ করতে চাইলে ভিকটিম কান্নাকাটি ও চিৎকার করে। এতে আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে, একপর্যায়ে ভিকটিমকে গলায় কাপড়ের ব্যাগের ফিতা দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ বস্তায় ভরে ঘরের মাচাংয়ের ওপর তুলে রাখে। ভিকটিম বিকালে বাসায় না যাওয়ায় তার বাবা–মা ও প্রতিবেশীরা খুঁজতে থাকে। পরে আসামির কাছে জানতে চাইলে তার আচরণ সন্দেহ হওয়ায় তার ওপর নজর রাখে।

পরে আসামি রাতের বেলায় বস্তায় করে লাশ নিয়ে বের হলে হাতেনাতে আটক করে এলাকাবাসী। এতে বস্তা খুলে ভিকটিম মিতালী মারমার লাশ দেখতে পায়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ঘাতককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ আসামি বামংকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হত্যাচেষ্টা, হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টায় মামলা দায়ের পর আদালতে তোলা হয়।

দীর্ঘ ছয় বছর মামলা চলার পর বৃহস্পতিবার মামলার চূড়ান্ত রায়ে রাঙামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক এ ই এম ইসমাইল হোসেনের আদালতে তোলা হয়। এতে আদালতের বিচারক উপস্থিত মামলার বাদী-বিবাদীদের উভয় পক্ষের সামনে মামলার রায় পড়ে শুনান।

মামলার এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম অভি বলেন, আদালতের এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ রায়ের ফলে সমাজে এ ধরনের জঘণ্য অপরাধ কমে যাবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মামুনুর রশীদ বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের বিষয়ে আসামির পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যা, গৃহশিক্ষকের মৃত্যুদণ্ড

আপডেট সময় ১২:৪৩:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ জুন ২০২৪

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ৯ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার পর হত্যার দায়ে অংবাচিং মারমা ওরফে বামং (৪৬) নামে একজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার রাঙামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক এ ই এম ইসমাইল হোসেন এ রায় দেন

বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের আসামিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা ও পেনাল কোড ১৮৬০ এর ৩০২ ধারার অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেন। এছাড়া তাকে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেন আদালত।

আদালত সূত্রে জানা যায়, রাঙামাটির আদালতে কোনো আসামির এটাই প্রথম মৃত্যুদণ্ডাদেশ
রায়ে বলা হয়, ২০১৯ সালে ২ ফেব্রুয়ারি কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের পূর্ব কোদালা এলাকায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মিতালী মারমা বদ্দ পাড়ায় তার মামার বাসায় প্রাইভেট পড়তে যায়। এ সময় আসামি প্রাইভেট শিক্ষক অংবাচিং মারমা ওরফে বামং অন্য শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে মিতালীকে আরও পড়ানোর অজুহাতে রেখে দেয়।

একপর্যায়ে একা পেয়ে আসামি ধর্ষণ করতে চাইলে ভিকটিম কান্নাকাটি ও চিৎকার করে। এতে আসামি ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে, একপর্যায়ে ভিকটিমকে গলায় কাপড়ের ব্যাগের ফিতা দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে লাশ বস্তায় ভরে ঘরের মাচাংয়ের ওপর তুলে রাখে। ভিকটিম বিকালে বাসায় না যাওয়ায় তার বাবা–মা ও প্রতিবেশীরা খুঁজতে থাকে। পরে আসামির কাছে জানতে চাইলে তার আচরণ সন্দেহ হওয়ায় তার ওপর নজর রাখে।

পরে আসামি রাতের বেলায় বস্তায় করে লাশ নিয়ে বের হলে হাতেনাতে আটক করে এলাকাবাসী। এতে বস্তা খুলে ভিকটিম মিতালী মারমার লাশ দেখতে পায়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ঘাতককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ আসামি বামংকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হত্যাচেষ্টা, হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টায় মামলা দায়ের পর আদালতে তোলা হয়।

দীর্ঘ ছয় বছর মামলা চলার পর বৃহস্পতিবার মামলার চূড়ান্ত রায়ে রাঙামাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক এ ই এম ইসমাইল হোসেনের আদালতে তোলা হয়। এতে আদালতের বিচারক উপস্থিত মামলার বাদী-বিবাদীদের উভয় পক্ষের সামনে মামলার রায় পড়ে শুনান।

মামলার এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম অভি বলেন, আদালতের এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। এ রায়ের ফলে সমাজে এ ধরনের জঘণ্য অপরাধ কমে যাবে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী মামুনুর রশীদ বলেন, হাইকোর্ট বিভাগে আপিলের বিষয়ে আসামির পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।