ঢাকা ০২:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানির দামে’ প্লট-ফ্ল্যাট কেনেন বেনজীর

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর আরও সম্পত্তি ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।

আদালতে অনুসন্ধান কর্মকর্তার জমা দেওয়া আবেদনে দেখা গেছে, ‘পানির দামে’ প্লট-ফ্ল্যাট কিনেছেন বেনজীর আহমেদ। ক্রোকি তালিকায় উল্লেখযোগ্য সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে, আনন্দ হাউজিংয়ে ২৪ কাঠা জমি, উত্তরায় ৩ কাঠা জমি ও স্থাপনা, বাড্ডার একটি ১৪ তলা ভবনে দুটি কার পার্কিংসহ ৩ হাজার ৭৫ স্কয়ার ফুটের অফিস স্পেস, আদাবরে ফ্ল্যাট, বান্দরবানে জমি, একটি বেসরকারি টেলিভিশন ও গার্মেন্ট কারখানার শেয়ার।

জানা গেছে, দুদকের তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল দেশে-বিদেশে বেনজীর পরিবারের নামে-বেনামে থাকা নতুন নতুন আরও অনেক সম্পদের তথ্য পাচ্ছে। যেসব সম্পদের তথ্য কাগজে-কলমে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে সেগুলোই আদালতের মাধ্যমে ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হচ্ছে।

বুধবার ক্রোক করা স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে, আনন্দ হাউজিংয়ে ৬ কাঠা আয়তনের চারটি প্লট। মোট ২৪ কাঠার এই প্লট (প্লট নম্বর ৬৭৬৯, ৬৭৭০, ৬৭৭১ ও ৬৭৭২) ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সাবকবলা দলিলে রেজিস্ট্রি করা হয়। সাভানা ইকো রিসোর্টের নামে রেজিস্ট্রি করা এই প্লট কেনা হয়েছে মাত্র ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।

বাড্ডার রূপায়ণ মিলিনিয়াম স্কয়ার নামের ১৪ তলা ভবনে অস্টমতলায় ৩ হাজার ৭৫ বর্গফুটের একটি অফিস স্পেস ও দুটি কার পার্কিং কেনা হয়েছে মাত্র ৬৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকায়। জব্দ ও ক্রোক করা সম্পদের মধ্যে আরও আছে বান্দরবান জেলায় ২৫ একর জমি (লিজ), স্ত্রী জিসান মির্জার নামে রাজধানীর আদাবরে পিসি কালচার এলাকায় ৬টি ফ্ল্যাট, গুলশানে বাবার কাছ থেকে পাওয়া ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ মূলে সম্পত্তিতে ৬ তলা ভবন, টাইগারফিট অ্যাপারেলসের (গার্মেন্ট কারখানা) শেয়ার।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান, এর আগে দুই দফায় বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিপুল সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত।

গত ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ১১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এগুলোর মধ্যে রাজধানীর গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, সাভারের একটি জমি ছাড়াও মাদারীপুরের ১১৪টি দলিলের সম্পত্তি রয়েছে।

এর আগে গত ২৩ মে ৮৩টি দলিলে ক্রয়কৃত সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। সেই সঙ্গে ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও তার সিকিউরিটিজের (শেয়ার) টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাভানা ইকো রিসোর্ট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে রিসিভার নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন। অনুসন্ধান দল বেনজীর পরিবারকে দুদকে তলবও করে।

এ অবস্থায় অতিগোপনে তাদের দেশত্যাগের খবর সামনে আসে। বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তান নির্ধারিত দিনে দুদকে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চাইলে দুদক তাদের হাজিরার জন্য নতুন দিন ঠিক করে দিয়েছে।

 

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

পানির দামে’ প্লট-ফ্ল্যাট কেনেন বেনজীর

আপডেট সময় ১১:৪৪:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জুন ২০২৪

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর আরও সম্পত্তি ক্রোক ও অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।

আদালতে অনুসন্ধান কর্মকর্তার জমা দেওয়া আবেদনে দেখা গেছে, ‘পানির দামে’ প্লট-ফ্ল্যাট কিনেছেন বেনজীর আহমেদ। ক্রোকি তালিকায় উল্লেখযোগ্য সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে, আনন্দ হাউজিংয়ে ২৪ কাঠা জমি, উত্তরায় ৩ কাঠা জমি ও স্থাপনা, বাড্ডার একটি ১৪ তলা ভবনে দুটি কার পার্কিংসহ ৩ হাজার ৭৫ স্কয়ার ফুটের অফিস স্পেস, আদাবরে ফ্ল্যাট, বান্দরবানে জমি, একটি বেসরকারি টেলিভিশন ও গার্মেন্ট কারখানার শেয়ার।

জানা গেছে, দুদকের তিন সদস্যের অনুসন্ধান দল দেশে-বিদেশে বেনজীর পরিবারের নামে-বেনামে থাকা নতুন নতুন আরও অনেক সম্পদের তথ্য পাচ্ছে। যেসব সম্পদের তথ্য কাগজে-কলমে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে সেগুলোই আদালতের মাধ্যমে ক্রোক ও অবরুদ্ধ করা হচ্ছে।

বুধবার ক্রোক করা স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে, আনন্দ হাউজিংয়ে ৬ কাঠা আয়তনের চারটি প্লট। মোট ২৪ কাঠার এই প্লট (প্লট নম্বর ৬৭৬৯, ৬৭৭০, ৬৭৭১ ও ৬৭৭২) ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সাবকবলা দলিলে রেজিস্ট্রি করা হয়। সাভানা ইকো রিসোর্টের নামে রেজিস্ট্রি করা এই প্লট কেনা হয়েছে মাত্র ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায়।

বাড্ডার রূপায়ণ মিলিনিয়াম স্কয়ার নামের ১৪ তলা ভবনে অস্টমতলায় ৩ হাজার ৭৫ বর্গফুটের একটি অফিস স্পেস ও দুটি কার পার্কিং কেনা হয়েছে মাত্র ৬৫ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকায়। জব্দ ও ক্রোক করা সম্পদের মধ্যে আরও আছে বান্দরবান জেলায় ২৫ একর জমি (লিজ), স্ত্রী জিসান মির্জার নামে রাজধানীর আদাবরে পিসি কালচার এলাকায় ৬টি ফ্ল্যাট, গুলশানে বাবার কাছ থেকে পাওয়া ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ মূলে সম্পত্তিতে ৬ তলা ভবন, টাইগারফিট অ্যাপারেলসের (গার্মেন্ট কারখানা) শেয়ার।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর জানান, এর আগে দুই দফায় বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিপুল সম্পদ ক্রোক ও অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত।

গত ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ১১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এগুলোর মধ্যে রাজধানীর গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, সাভারের একটি জমি ছাড়াও মাদারীপুরের ১১৪টি দলিলের সম্পত্তি রয়েছে।

এর আগে গত ২৩ মে ৮৩টি দলিলে ক্রয়কৃত সম্পত্তি ক্রোক করা হয়। সেই সঙ্গে ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও তার সিকিউরিটিজের (শেয়ার) টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাভানা ইকো রিসোর্ট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে রিসিভার নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল বেনজীর আহমেদ, স্ত্রী জিসান মির্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিশেষ অনুসন্ধান টিম অভিযোগটি অনুসন্ধান করছে। টিমের অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক নিয়ামুল আহসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন। অনুসন্ধান দল বেনজীর পরিবারকে দুদকে তলবও করে।

এ অবস্থায় অতিগোপনে তাদের দেশত্যাগের খবর সামনে আসে। বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তান নির্ধারিত দিনে দুদকে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় চাইলে দুদক তাদের হাজিরার জন্য নতুন দিন ঠিক করে দিয়েছে।