রক্ষকই যদি ভক্ষক হয়, অথবা; নিজের ঘরের ইঁদুর যদি নিজের ঘরের ক্ষতি করে তাহলে সেখানে রক্ষা কবজের দায়িত্ব পালন করবে ক? বলছিলাম চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার আস্টা মৌজার খাস সম্পত্তি ভূমি অফিস কর্তৃক সহযোগিতা করে জাল দলিল দিয়ে মশিউর রহমান পাটোয়ারী নামের একজনকে খতিয়ান সৃজন করে দেওয়ার বিষয়ে:- অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার আস্টা মৌজার সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তারা নিজেদের সম্পত্তি রক্ষা না করে তাদের যোগসাজশে সরকারি সম্পত্তি জাল দলিলের মাধ্যমে খারিজ করে দেওয়া হয়। খারিজ নং- ৬৬৭১/২০২১, খারিজ খতিয়ান নং- ৬৫৩ ।
অভিযোগকারী রেজওয়ানুল হক তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন উক্ত জাল খতিয়ানে মোট ৩৩ শতাংশ সরকারি সম্পত্তি খতিয়ান সৃজন করা হয়। তিনি বলেন ৬৬৭১ খারিজ নং ও খতিয়ান নং ৬৫৩ তে যে জাল দলিল দেওয়া আছে তা হলো ফরিদগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়, জাল দলিল নং- ২০৪৫ তারিখ ০৮-০৪-১৯৬৫ইং।
দলিলের দাতা ক্ষিতিশ চন্দ্র বসু ও জ্যোতিষ চন্দ্র বসু, উভয়ের পিতা-মৃত ললিত চন্দ্র বসু, সাং- আস্টা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর। গ্রহীতা, মশিউর রহমান পাটোয়ারী, পিতা-মৃত শফিউল্লাহ আটোয়ারী, সাং আস্টা, ফরিদগঞ্জ চাঁদপুর। জমির পরিমান ৩৩ শতাংশ। কিন্তু জাল দলিলের নাম্বারে নকল উঠালে দেখা যায় সঠিক দলিল টি হল ফরিদগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয় দলিল নং-২০৪৫, তারিখ- ২৭-০৪-১৯৬৫ইং। দাতা প্রাণ গোপাল দত্ত, পিতা-মৃত মনমোহন দত্ত, সাং গোবিন্দপুর, ফরিদগঞ্জ চাঁদপুর।
আর দলিলের গ্রহীতা হলেন আবদুল লতিফ পাটোয়ারী, আব্দুল বারেক পাটোয়ারী, আব্দুল হাকিম পাটোয়ারী, পিতা মৃত হাসমত উল্লাহ পাটোয়ারী, গোবিন্দপুর , ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।জমির পরিমান ৩৩ শতাংশ। অভিযোগকারী এই প্রতিনিধিকে আরো বলেন খারিজ খতিয়ানটি করে দিতে মশিউর রহমানের সাথে এক লক্ষ ৮০ হাজার টাকা চুক্তি করা হয়। সেই চুক্তির মূল হোতা ফরিদগঞ্জের গল্লাক বাজার ভূমি অফিসের সহকারী আনোয়ারুল আজিম। এবং জাল দলিল সংগ্রহের হোতা আনোয়ারুল আজিম নিজেই।
অভিযোগকারী সহকারী কমিশনার ভূমি বরাবরে অভিযোগে উল্লেখ করেন, বর্তমানে আস্টা গ্রামটি জাল দলিলের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন আস্টা মৌজাটির প্রায় অর্ধেক সম্পত্তি সরকারি খাস সম্পত্তি, তাই যে যেভাবে পারছে দখলে নিচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে জাল দলিল মূলে খারিজের গ্রহীতা মশিউর রহমান পাটওয়ারীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি তার সাথে দেখা করার জন্য বারবার অনুরোধ করেন। অন্যদিকে গল্লাক বাজার ভূমি অফিসের তৌশিলদার আবদুস চাত্তারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, খারিজটির বিষয়ে প্রথমে তিনি অবগত ছিলেন না।
এবং এ খারিজটির বিষয়ে তার সহকারি আনোয়ারুল আজিম সব জানেন বলে তিনী জানান। অন্যদিকে আনোয়ারুল আজিমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি শুধু একা নয়, চাত্তার সাহেবও এ খারিজের চুক্তিভিত্তিক টাকার ভাগ নিয়েছেন।
এ সময় সংবাদকর্মীদের সামনেই দুজনের মধ্যে অশালীন কথাবার্তার সৃষ্টি হয়। পরে তারা সংবাদকর্মীদের খারিজটি ক্যানসেল করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজিজুন্নাহারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি আশ্বাস দেন।
অন্যদিকে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তারে সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। জাল জলিল দিয়ে খারিজি খতিয়ান করলে এবং তা প্রমাণিত হলে অনেক বড় ধরনের শাস্তি ভোগ করতে হয়। এ বিষয়ে জড়িত সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে ।