চাঁদপুরের রাজনীতি ও ঠিকাদারি পেশা যেন নতুন এক রূপ পেয়েছে। এখানে উঠে এসেছে জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক কাদির বেপারীর নাম, যার বিরুদ্ধে সম্প্রতি উঠেছে টেন্ডার দখল, চাঁদাবাজি, আর লুটপাটের মতো গুরুতর অভিযোগ। চাঁদপুরের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের টেন্ডারে কাজ পাওয়া লোকজন বারবার অভিযোগ করেছেন যে, তাদের ওপর রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে কাদির বেপারী কার্যত তাদের কাজ কেড়ে নিচ্ছেন এবং সকল ফাইল অফিসে আটকে দিয়েছেন। এতে সাধারণ ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীরা নিজেদের কাজও করতে পারছেনা এবং তারা নিজেদেরকে নিরাপত্তাহীন মনে করছেন। অথচ কাদির বেপারীর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
সম্প্রতি চাঁদপুর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার সুভাস চন্দ্র সরকার অভিযোগ করেছেন, তিনি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায় একটি এলজিইডি প্রকল্পের কাজ পান এবং সেই কাজ শুরুর পরপরই কাদির বেপারী তার ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। সুভাস চন্দ্র অভিযোগ করেন, কাদির তাকে হুমকি দেন যে, তিনি কাজ না ছাড়লে তার ফাইল আটকে রাখবেন এবং বাড়িতে হামলা করবেন। এই ঘটনায় সুভাস চন্দ্র সরকার বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগও করেন।
এদিকে স্থানীয়দের বক্তব্য অনুযায়ী, কাদির বেপারী ৫ আগস্টের পর থেকেই চাঁদপুরে রাজনৈতিক প্রভাব খাঁটিয়ে একের পর এক টেন্ডার ছিনিয়ে নিচ্ছেন এবং বিএনপির নাম ভাঙিয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের কাজ কেড়ে নিচ্ছেন এবং কাজ দিতে না চাইলে অফিসে অফিসে ফাইল আটকে দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে টেন্ডার বাজারে প্রভাব বিস্তার করছেন এবং তার প্রভাবশালী চক্রের মাধ্যমে অনেককেই বিপদে ফেলছেন।
এই বিষয়ে যমুনা টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ঘটনাটি আরও প্রকাশ্যে আসে।
স্থানীয়রা বলছেন, কাদির বেপারী এখন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ছত্রছায়ায় বড় অঙ্কের অর্থের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন দপ্তরে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা নিজেদের অসহায় মনে করছেন এবং রাজনীতি থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও তাদের ওপর রাজনৈতিক চাপে কাজ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কোন কথা বলতে চাইলেই মামলায় নাম ঢুকিয়ে দেওয়ার ভয়ভিতি দেখান। যা ইতিমধ্যে তিনি করেও দেখিয়েছেন বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত কাদির বেপারী জানান, ‘আমি এরকইম করবো, আপনারা পারলে কিছু করেন।’ এ ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, এমন কতো অভিযোগ আসবে যাবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সেলিম উল্যাহ সেলিম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে এই ব্যাপারে কোন কমেন্ট করতে পারবো না বলে জানান।
তাদের প্রশ্ন, ‘এভাবে বিএনপির নাম ব্যবহার করে এবং নিজের ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তার করে সাধারণ ঠিকাদারদের কাজ কেড়ে নেওয়ার সুযোগ কেন দিচ্ছে জেলা বিএনপি? কেনই বা সে একাধিক সরকারি কর্মকর্তাকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেও জেলা বিএনপির পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন ?
অনুসন্ধানে জানা যায়, কাদির বেপারী এক সময় পুরান বাজারের আলী বিড়ি কারখানার শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু একসময় বিএনপির পদ পেয়ে রাতারাতি বনে যান কোটিপতি। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে সমঝোতা করে ঠিকাদারীর কাজ বাগিয়ে নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। কিন্তু ৫ আগস্টের পর সেই আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোধগার করে লুটপাট ও চাঁদবাজিতে লিপ্তি হয়েছেন এবং এখন তিনি বিএনপির নামে তার সকল টেন্ডারবাজি ও লুটপাটের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে জানান।