ঢাকা ১১:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে বাশার আল আসাদকে আমন্ত্রণ জানাবে সৌদি

আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব। আগামী মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

সৌদি আরবের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জানেন এমন তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে রোববার (২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে আমন্ত্রণ জানানোর এই পদক্ষেপ আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ার আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটাবে।

মূলত এক দশকেরও বেশি সময় আগে দামেস্কের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরবসহ বেশিরভাগ আরব রাষ্ট্র। এরপর থেকে সিরিয়া অনেকটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকলেও সম্প্রতি সৌদি আবারও সেই সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার আগ্রহ দেখিয়েছে।

রয়টার্স বলছে, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে যাবেন। মূলত প্রেসিডেন্ট আসাদকে আগামী ১৯ মে অনুষ্ঠিতব্য শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানোর জন্যই সেখানে যাবেন তিনি।

অবশ্য সৌদি সরকারের যোগাযোগ অফিস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

তবে আরব লীগের মহাসচিবের মুখপাত্র গামাল রোশদি বলেছেন, আরব দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক স্তরে প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে সংস্থাটির অবগত থাকার কথা নয়। তিনি আরও বলেন, ‘অনুমানিত সফর সম্পর্কে আমাদের আগে থেকে জানানোর কথা নয়।’

মূলত টানা ১১ বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয়; সেটিই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনও চলছে।

এক দশকের এই সংঘাতে কমপক্ষে তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে সিরিয়ার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ।

অবশ্য সংকটের শুরুতে সুন্নি নেতৃত্বাধীন সৌদি আরব ও কাতারসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক মিত্র সিরিয়ার কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন করে। তবে ইরান ও রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশজুড়ে বিদ্রোহকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে অনেক পশ্চিমা ও আরব রাষ্ট্র সিরিয়াকে এড়িয়ে যেতে শুরু করে। আর তাই আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট আসাদের উপস্থিতি ২০১১ সালের পর থেকে আরব বিশ্বে তার পুনর্বাসনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত হবে।

এর আগে সিরিয়ার সঙ্গে সৌদি আরব সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চলেছে বলে গত মাসে বেশ কযেকটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিল। মূলত এক দশকেরও বেশি আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর এখন সিরিয়া ও সৌদি আরব আবারও তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে।

এছাড়া দামেস্কের সাথে সংযুক্ত একটি আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছিল, সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রধান মিত্র ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সাম্প্রতিক যুগান্তকারী এক চুক্তির পর রিয়াদ ও দামেস্কের মধ্যে যোগাযোগে ব্যাপক গতি পায়।

দামেস্কের সাথে সংযুক্ত দ্বিতীয় একটি আঞ্চলিক সূত্র রয়টার্সকে সেসময় জানায়, চলতি বছরের এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে ‘ঈদ উল ফিতরের পরে নিজেদের দূতাবাস পুনরায় খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশের সরকার’।

এছাড়া আঞ্চলিক একটি সূত্র এবং উপসাগরীয় কূটনীতিকের মতে, সিরিয়ার একজন সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে সৌদি আরবে আলোচনার ফলাফল হিসেবে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে

আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে বাশার আল আসাদকে আমন্ত্রণ জানাবে সৌদি

আপডেট সময় ১২:২৫:০৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০২৩

আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা করছে সৌদি আরব। আগামী মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

সৌদি আরবের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জানেন এমন তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে রোববার (২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে আমন্ত্রণ জানানোর এই পদক্ষেপ আনুষ্ঠানিকভাবে সিরিয়ার আঞ্চলিক বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটাবে।

মূলত এক দশকেরও বেশি সময় আগে দামেস্কের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরবসহ বেশিরভাগ আরব রাষ্ট্র। এরপর থেকে সিরিয়া অনেকটা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকলেও সম্প্রতি সৌদি আবারও সেই সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার আগ্রহ দেখিয়েছে।

রয়টার্স বলছে, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে যাবেন। মূলত প্রেসিডেন্ট আসাদকে আগামী ১৯ মে অনুষ্ঠিতব্য শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানোর জন্যই সেখানে যাবেন তিনি।

অবশ্য সৌদি সরকারের যোগাযোগ অফিস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

তবে আরব লীগের মহাসচিবের মুখপাত্র গামাল রোশদি বলেছেন, আরব দেশগুলোর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক স্তরে প্রতিটি পদক্ষেপের বিষয়ে সংস্থাটির অবগত থাকার কথা নয়। তিনি আরও বলেন, ‘অনুমানিত সফর সম্পর্কে আমাদের আগে থেকে জানানোর কথা নয়।’

মূলত টানা ১১ বছর ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। ২০১১ সালে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয়; সেটিই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনও চলছে।

এক দশকের এই সংঘাতে কমপক্ষে তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে সিরিয়ার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ।

অবশ্য সংকটের শুরুতে সুন্নি নেতৃত্বাধীন সৌদি আরব ও কাতারসহ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক মিত্র সিরিয়ার কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থন করে। তবে ইরান ও রাশিয়ার সহায়তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট আসাদ সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশজুড়ে বিদ্রোহকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে অনেক পশ্চিমা ও আরব রাষ্ট্র সিরিয়াকে এড়িয়ে যেতে শুরু করে। আর তাই আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট আসাদের উপস্থিতি ২০১১ সালের পর থেকে আরব বিশ্বে তার পুনর্বাসনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত হবে।

এর আগে সিরিয়ার সঙ্গে সৌদি আরব সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চলেছে বলে গত মাসে বেশ কযেকটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিল। মূলত এক দশকেরও বেশি আগে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর এখন সিরিয়া ও সৌদি আরব আবারও তাদের দূতাবাস পুনরায় চালু করতে সম্মত হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে।

এছাড়া দামেস্কের সাথে সংযুক্ত একটি আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছিল, সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের প্রধান মিত্র ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সাম্প্রতিক যুগান্তকারী এক চুক্তির পর রিয়াদ ও দামেস্কের মধ্যে যোগাযোগে ব্যাপক গতি পায়।

দামেস্কের সাথে সংযুক্ত দ্বিতীয় একটি আঞ্চলিক সূত্র রয়টার্সকে সেসময় জানায়, চলতি বছরের এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে ‘ঈদ উল ফিতরের পরে নিজেদের দূতাবাস পুনরায় খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশের সরকার’।

এছাড়া আঞ্চলিক একটি সূত্র এবং উপসাগরীয় কূটনীতিকের মতে, সিরিয়ার একজন সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে সৌদি আরবে আলোচনার ফলাফল হিসেবে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।