ঢাকা ০৯:২৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

পাকিস্তানে প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা কমাচ্ছে শেহবাজ সরকার

বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান। এর সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। দেশটির ক্ষমতাসীন শেহবাজ শরিফের সরকার এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অবস্থান কার্যত মুখোমুখি।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। এতে করে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট আরও প্রকট আকার নিতে পারে। বুধবার (২৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টে সুপ্রিম কোর্ট (অনুশীলন এবং পদ্ধতি) বিল, ২০২৩ উত্থাপন করেছেন বলে সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ রিপোর্ট করেছে। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির সুয়ো মোটু নোটিশ নেওয়ার বিবেচনামূলক ক্ষমতা সীমিত করার লক্ষ্যে এই বিল উত্থাপন করা হয়েছে।

এএনআই বলছে, হাউস প্রস্তাবিত এই বিলটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় পরিষদের (এনএ) আইন ও বিচার সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। বুধবার সকালে চৌধুরী মাহমুদ বশির ভির্কের সভাপতিত্বে জাতীয় পরিষদের আইন ও বিচার সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি এই বিষয়ে বৈঠকে বসবে।

পরে কমিটি তা নিম্নকক্ষে ফেরত পাঠাবে। এছাড়া জাতীয় পরিষদে বিলটি পাস হওয়ার পর সেটি অনুমোদনের জন্য সিনেটে পাঠানো হবে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা নিয়ে একদিন আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি – বিচারপতি সৈয়দ মনসুর আলি শাহ এবং বিচারপতি জামাল খান মান্দোখাইল। এই দুই বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ‘কেবল প্রধান বিচারপতির একক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না।’

আর এর একদিন পরই প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা কমানোর বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের এই সিদ্ধান্ত সামনে এলো।

পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে নির্বাচনের বিষয়ে গত ১ মার্চ শীর্ষ আদালতের সুয়ো মোটু রায়ের জন্য ২৭ পৃষ্ঠার একটি ভিন্নমত নোট লিখেছেন বিচারপতি শাহ এবং বিচারপতি মান্দোখাইল। সেখানে তারা বলেছেন, সংবিধানের ১৯১ অনুচ্ছেদের অধীনে আদালতের সকল বিচারকের মাধ্যমে অনুমোদিত নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে আদালতকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন চলাকালীন দেওয়া বক্তৃতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এ বিষয়ে সংসদীয় পদক্ষেপ চেয়েছিলেন।

জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, তিনি ওই দুই বিচারপতির ভিন্নমতের নোটটিকে ‘আশার আলো’ বলে অভিহিত করেন। শেহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘বিচার বিভাগ থেকে যে পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে তা অবশ্যই দেশের জন্য আশার আলো।’

অবশ্য শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ দেশটির বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে ‘বেঞ্চ ফিক্সিং’-এর অভিযোগ করেছে।

পার্লামেন্ট বক্তৃতা করার সময় পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার বলেন, সুয়ো মোটু নোটিশের নামে গৃহীত পদক্ষেপের কারণে সুপ্রিম কোর্টের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমরা সেই যুগও দেখেছি যখন তুচ্ছ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশ নেওয়া হতো (…) এছাড়াও, অতীতে বেশ কয়েকটি পর্যালোচনা মামলা বিলম্বিত হয়েছিল এবং শুনানির জন্য নির্ধারিত হয়নি।’

তারার বলেন, দুই বিচারপতির ভিন্নমতের নোট আরও উদ্বেগের কারণ হয়েছে। তিনি দাবি করেন, স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশের অধীনে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর আগে আপিল করা যাবে না।

বিলে প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে স্বতঃপ্রণোদিত ক্ষমতা তিন জ্যেষ্ঠ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের কমিটিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এছাড়া বিলে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার অধিকার সম্পর্কিত একটি ধারাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা ৩০ দিনের মধ্যে দায়ের করা যেতে পারে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে শুনানির জন্য নির্ধারিত হবে।

বিল অনুসারে, সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি ধারা, আপিল বা বিষয় পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এবং দুই সিনিয়র বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চের মাধ্যমে শুনানি ও নিষ্পত্তি করা হবে। বিলে আরও বলা হয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে কমিটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Tag :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

জমির দলিলের প্রলোভানা দিয়ে গ্রাম পুলিশের নির্দেশে সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে নির্যাতন করে

পাকিস্তানে প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা কমাচ্ছে শেহবাজ সরকার

আপডেট সময় ০১:২৯:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান। এর সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। দেশটির ক্ষমতাসীন শেহবাজ শরিফের সরকার এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অবস্থান কার্যত মুখোমুখি।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। এতে করে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট আরও প্রকট আকার নিতে পারে। বুধবার (২৯ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় বার্তাসংস্থা এএনআই।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টে সুপ্রিম কোর্ট (অনুশীলন এবং পদ্ধতি) বিল, ২০২৩ উত্থাপন করেছেন বলে সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ রিপোর্ট করেছে। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির সুয়ো মোটু নোটিশ নেওয়ার বিবেচনামূলক ক্ষমতা সীমিত করার লক্ষ্যে এই বিল উত্থাপন করা হয়েছে।

এএনআই বলছে, হাউস প্রস্তাবিত এই বিলটি অনুমোদনের জন্য জাতীয় পরিষদের (এনএ) আইন ও বিচার সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির কাছে পাঠিয়েছে। বুধবার সকালে চৌধুরী মাহমুদ বশির ভির্কের সভাপতিত্বে জাতীয় পরিষদের আইন ও বিচার সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি এই বিষয়ে বৈঠকে বসবে।

পরে কমিটি তা নিম্নকক্ষে ফেরত পাঠাবে। এছাড়া জাতীয় পরিষদে বিলটি পাস হওয়ার পর সেটি অনুমোদনের জন্য সিনেটে পাঠানো হবে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা নিয়ে একদিন আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি – বিচারপতি সৈয়দ মনসুর আলি শাহ এবং বিচারপতি জামাল খান মান্দোখাইল। এই দুই বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট ‘কেবল প্রধান বিচারপতির একক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না।’

আর এর একদিন পরই প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা কমানোর বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের এই সিদ্ধান্ত সামনে এলো।

পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে নির্বাচনের বিষয়ে গত ১ মার্চ শীর্ষ আদালতের সুয়ো মোটু রায়ের জন্য ২৭ পৃষ্ঠার একটি ভিন্নমত নোট লিখেছেন বিচারপতি শাহ এবং বিচারপতি মান্দোখাইল। সেখানে তারা বলেছেন, সংবিধানের ১৯১ অনুচ্ছেদের অধীনে আদালতের সকল বিচারকের মাধ্যমে অনুমোদিত নিয়ম-ভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে আদালতকে নিয়ন্ত্রিত করতে হবে।

সংবাদমাধ্যম বলছে, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন চলাকালীন দেওয়া বক্তৃতায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এ বিষয়ে সংসদীয় পদক্ষেপ চেয়েছিলেন।

জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, তিনি ওই দুই বিচারপতির ভিন্নমতের নোটটিকে ‘আশার আলো’ বলে অভিহিত করেন। শেহবাজ শরিফ বলেছেন, ‘বিচার বিভাগ থেকে যে পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে তা অবশ্যই দেশের জন্য আশার আলো।’

অবশ্য শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ দেশটির বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে ‘বেঞ্চ ফিক্সিং’-এর অভিযোগ করেছে।

পার্লামেন্ট বক্তৃতা করার সময় পাকিস্তানের আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার বলেন, সুয়ো মোটু নোটিশের নামে গৃহীত পদক্ষেপের কারণে সুপ্রিম কোর্টের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমরা সেই যুগও দেখেছি যখন তুচ্ছ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশ নেওয়া হতো (…) এছাড়াও, অতীতে বেশ কয়েকটি পর্যালোচনা মামলা বিলম্বিত হয়েছিল এবং শুনানির জন্য নির্ধারিত হয়নি।’

তারার বলেন, দুই বিচারপতির ভিন্নমতের নোট আরও উদ্বেগের কারণ হয়েছে। তিনি দাবি করেন, স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশের অধীনে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর আগে আপিল করা যাবে না।

বিলে প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে স্বতঃপ্রণোদিত ক্ষমতা তিন জ্যেষ্ঠ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত তিন সদস্যের কমিটিতে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এছাড়া বিলে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার অধিকার সম্পর্কিত একটি ধারাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা ৩০ দিনের মধ্যে দায়ের করা যেতে পারে এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে শুনানির জন্য নির্ধারিত হবে।

বিল অনুসারে, সুপ্রিম কোর্টের প্রতিটি ধারা, আপিল বা বিষয় পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি এবং দুই সিনিয়র বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চের মাধ্যমে শুনানি ও নিষ্পত্তি করা হবে। বিলে আরও বলা হয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে কমিটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।