ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে বরখাস্ত করেছেন ভূখণ্ডটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। গ্যালান্ট বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন করার বিতর্কিত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন।
এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বরখাস্ত করার পর ইসরায়েলজুড়ে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। এতে করে মধ্যপ্রাচ্যের এই ভূখণ্ডটিতে বড় ধরনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (২৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
মূলত ইসরায়েলে বিচার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য সরকারি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গত ১২ সপ্তাহ ধরে ভূখণ্ডটিতে এই বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভকারীরা সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা কমানোর জন্য কট্টর ডানপন্থি নেতানিয়াহু সরকারের পরিকল্পনার বিরোধিতা করছেন। সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েলি সরকারের এই পরিকল্পনা বিচারিক স্বাধীনতার জন্য হুমকি।
নেতানিয়াহু সরকারের বিচার বিভাগীয় সংস্কার পরিকল্পনার সমালোচকরা বলছেন, এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরায়েলের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তবে নেতানিয়াহুর সরকার বলছে, তাদের পরিকল্পিত এই পরিবর্তনই ভোটারদের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলের বিচার ব্যবস্থাকে সংশোধন এবং সুপ্রিম কোর্টকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পনা সম্প্রতি উন্মোচন করেছে ইসরায়েলের নতুন সরকার। এসব সংস্কার বাস্তবায়ন হলে ইসরায়েলের পার্লামেন্টের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়গুলোকে বাতিল করা সহজ হবে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, নেতানিয়াহু সরকারের এই সংস্কার পরিকল্পনা ইসরায়েলের বিচারিক স্বাধীনতাকে পঙ্গু করবে, দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করবে, সংখ্যালঘুদের অধিকার নষ্ট করবে এবং ইসরায়েলের আদালত ব্যবস্থাকে বিশ্বাসযোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করবে।
মূলত ওই আইন পাস হলে আইনসভা এবং নির্বাহী বিভাগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে। একইসঙ্গে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তমূলক ক্ষমতা পাবেন পার্লামেন্টের আইন প্রণেতারা।
ইসরায়েলিদের টানা বিক্ষোভের মধ্যে একদিন আগেই বিতর্কিত ওই সংস্কার পরিকল্পনা নিয়ে সরব হন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই সংকট সামাজিক বিপর্যয়ের কারণ হচ্ছে এবং সেটি ইসরায়েলের নিরাপত্তার ক্ষতি করতে পারে।
শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া সংক্ষিপ্ত এক বিবৃতিতে গ্যালান্ট তার সরকারের সংস্কার পরিকল্পনাকে ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য স্পষ্ট, তাৎক্ষণিক এবং বাস্তব বিপদ’ হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা এতে এতোটাই ক্ষুব্ধ ও হতাশ যা তিনি আগে কখনও দেখেননি।
এদিকে গ্যালান্টকে বরখাস্তের পর ইসরায়েলজুড়ে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। জেরুজালেমে পুলিশ ও ইসরায়েলি সৈন্যরা নেতানিয়াহুর বাড়ির কাছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে জলকামান ব্যবহার করে।
বিবিসি বলছে, নেতানিয়াহুর বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ করার পরে বিক্ষোভকারীরা ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে পৌঁছানোর জন্য পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একজন সরকারি কর্মচারী বিবিসিকে বলেছেন, নেতানিয়াহু ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে আমাদের সকল সীমা অতিক্রম করেছেন’ বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের গণতন্ত্রের শেষ অংশটিকে রক্ষা করছি এবং আমরা এই অবস্থায় ঘুমিয়ে থাকতে পারি না। যতক্ষণ না আমরা এই পাগলামী বন্ধ না করছি ততক্ষণ আমি অন্য কিছুই করতে পারব না।’
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সদ্য বরাখাস্ত হওয়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট একজন সাবেক সৈনিক। নেতানিয়াহু বিচার ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য কার্যক্রম শুরু করার পর তিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে রিজার্ভ সেনাদের কাছ থেকে প্রস্তাবিত এই আইন পরিবর্তনে তাদের অসন্তুষ্টির কথা শুনেছেন।
চলতি মার্চ মাসের শুরুতে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর একটি অভিজাত স্কোয়াড্রনের ফাইটার পাইলটরা সরকারের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন প্রতিবাদের অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ না করার অঙ্গীকার করেন। পরে অবশ্য তারা তাদের কমান্ডারদের সাথে যোগ দিতে এবং আলোচনা করতে রাজি হয়।
এই পরিস্থিতিতে গ্যালান্ট গত শনিবার প্রস্তাবিত সংস্কার আইনের বিরুদ্ধে সরব হন। সেদিন তিনি বলেন, নেতানিয়াহুর এই সংস্কার উদ্যোগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা রাগান্বিত এবং হতাশ।
এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে গ্যালান্টের অপসারণে মার্কিন সরকার ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’ বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
স্থানীয় সময় রোববার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি আলোচনা করেছেন। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সবসময়ই মার্কিন-ইসরায়েল সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য ছিল এবং এটাই থাকবে।’